|
|
|
|
প্রসঙ্গ সিঙ্গুর |
‘শর্ত’ দিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা চান অনিচ্ছুকরা |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ² সিঙ্গুর |
এত দিন ছিল জোর করে নেওয়া চাষের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা এখন নতুন কিছু দাবি তুলে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়।
পাশাপাশি, টাটাদের মোটরগাড়ি প্রকল্পের জন্য যাঁরা জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন, তাঁরা এখন পরিবার পিছু এক জনের চাকরির দাবি তুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই দাবি না মানলে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।
তিন বছর আগের তুমুল আন্দোলনের পরে প্রায় শ্মশানের চেহারা নেওয়া সিঙ্গুরে এখন জমি ফেরতের ঘোষণায় খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। স্বপ্নপূরণের মতো জমি ফেরত পেলে সেই জমিতে চাষ করা হবে, নাকি তা বিক্রি করে দেওয়া হবে কারখানাকে ঘিরে রাখা মৌজাগুলিতে সেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই সঙ্গে, স্বপ্নপূরণের পথে একগুচ্ছ দাবিও উঠে এসেছে, যা আসলে ‘শর্ত’।
তৃণমূলের রাজনীতির ছায়ায় সিঙ্গুরে আন্দোলন করেছিল কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। সরকারে এসে মুখ্যমন্ত্রী জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করতেই জমিরক্ষা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সাত দফা দাবি তৈরি করে ফেলেছেন। সরকারের তরফে জমি ফেরতের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব
এলে তাঁরা জানিয়ে দেবেন সেই দাবির কথা। |
|
প্রকল্প এলাকার সামনে অনিচ্ছুক কৃষকরা। তাপস ঘোষ |
কী চাইছেন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা? l প্রকৃত ‘অনিচ্ছুক’ চাষির সংখ্যা ঠিক কত, রাজ্য সরকারের ভূমি -রাজস্ব দফতর ফের তা যাচাই করুক। সেই তথ্য অনুযায়ী, অনিচ্ছুক চাষিদের জমির সঠিক পরিমাণ ঘোষণা করুক রাজ্য।
l যে সংস্থাই ওই জমিতে কারখানা করুক, তাদের দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া ৬০০ একর জমি দেওয়া হোক।
l চাষের উপযুক্ত জমি ফেরত দিতে হবে। গত পাঁচ বছর জমি হাতছাড়া হওয়ায় ফের চাষের কাজ শুরু করার জন্য ক্ষতিপূরণবাবদ অগ্রিম কিছু অর্থ সরকারকে দিতে হবে।
l চাষের উপযুক্ত পরিকাঠামো হিসেবে জমিতে নিকাশী ব্যবস্থা, যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করে দিতে সরকারকে।
l খাসের ভেড়ির অধিকাংশ জমি ফেরত দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হবে। কারণ, ফেরত পাওয়া জমি যাতে সংশ্লিষ্ট জমি -মালিকের বাসগৃহ থেকে খুব দূরবর্তী এলাকায় না হয়, তা নিশ্চিত করা।
l কোনও অনিচ্ছুক চাষি কতটা জমি, কোন মৌজায় ফেরত পাবেন, তা ঠিক করার দায়িত্ব কৃষিজমি রক্ষা কমিটিকে দিতে হবে।
l জমি ফেরতের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা থাকলে ‘লিজ’ হিসেবে তা দিতে পারে সরকার। তবে সে ক্ষেত্রে সেই জমি হস্তান্তরের অধিকার দিতে হবে সরকারকে।
সিঙ্গুর প্রকল্পে জমি দিয়ে যাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর জমি ফেরতের ঘোষণায় তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে তাঁদের দাবি ‘চাকরি’। মোটরগাড়ি কারখানার জন্য প্রথম জমি দিয়েছিলেন গোপালনগরের বিফলচন্দ্র বাঙাল। তিনি বলেন, “আমি প্রকল্পের জন্য ২ বিঘা ৬ কাঠা জমি দিই। আমি চাই, ৬০০ একর জমিতে কারখানা তৈরি হোক। সেই সঙ্গে আমার বেকার ছেলে কাজ পাক।” টাটাদের প্রকল্পে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বিফলবাবুর ছেলে মণিমোহন বাঙাল। তাঁর কথায়, “আইন থাকলে জমি ফিরিয়ে দিক সরকার। কিন্তু টাটাদের প্রকল্পে চাকরির জন্য আমি কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমি চাই, আগের সরকারের ‘প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির’ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুক বর্তমান সরকার। এ জন্য ছ’মাস অপেক্ষা করতে রাজি আছি আমি। তার পর কিন্তু আমরা আন্দোলনে নামব।” টাটাদের প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েছিলেন সুকুমার সাহানা। তিনিও চান, তাঁর বেকার মেয়েকে চাকরি দিক বর্তমান সরকার। সিঙ্গুরের ‘ইচ্ছুক -অনিচ্ছুক’ চাষিরা আগে -পরের নানা প্রতিশ্রুতির দোলাচলে একই সরলরেখায় দাঁড়িয়ে। তাঁদের সকলের প্রত্যাশা নতুন সরকার পূরণ করে কি না, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|