|
|
|
|
দখল-পর্ব |
আমাদের আমলে ওরা তো পার্টি অফিস খুলত |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ²আরামবাগ |
পীযূষ নন্দী ²ধনেখালি |
আরামবাগ মহকুমায় ‘সন্ত্রাস’ বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি। দিয়েছেন কারা? বামেরা !
আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়ামহকুমার এই ব্লকগুলো কিছু দিন আগেও সংবাদ শিরোনামে আসত বামেদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা সন্ত্রাসের অভিযোগের জন্য। ১৩ মে -র পরে ‘পরিবর্তন’। শুধু আরামবাগ নয়, হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই ‘সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগ উঠছে নব্য শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। আর ‘পরিবর্তনের’ ছবি চোখে পড়ছে সিপিএমের পার্টি অফিসগুলোয়।
সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির অফিসে বিধানসভার ফল ঘোষণার আগের গমগমে ব্যাপারটাই উধাও। এখন সেখানে চেয়ার বেশি, বসার লোক কম। আগে নেতাদের মোবাইল কিংবা পার্টি অফিসের ল্যান্ডলাইন সদাই ব্যস্ত থাকত। এখন ফোন বাজলেই কার্যত আঁতকে উঠছেন সিপিএমের তাবড় নেতারা। এই বুঝি মারধরের খবর এল !
পুড়শুড়া, খানাকুলে সিপিএম আরও ‘কোণঠাসা’। সিপিএমের খানাকুল জোনাল কমিটির নেতা ভজহরি ভুইঁয়ার অভিযোগ, ফল ঘোষণা হতেই তাঁদের দলের প্রায় হাজার নেতা -কর্মীকে ঘরছাড়া করেছে তৃণমূল। তাঁর ভাই নেপালকে মারধর করা হয়েছে। কয়েকটি শাখা অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। কয়েকটি দখল হয়েছে। এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক বংশীবদন মৈত্র, জোনাল কমিটির সম্পাদক আজিজুল হক বাড়িছাড়া। সিপিএমের অভিযোগ, তাদের পুড়শুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুখেন্দু অধিকারীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। |
|
তালাবন্ধ সিপিএমের আরামবাগের ২ নম্বর লোকাল কমিটির কার্যালয়। কাবলেতে। মোহন দাস |
খানাকুল, পুড়শুড়ায় সিপিএম হেরেছে। কিন্তু আরামবাগ মহকুমার যে আসনে তারা জিতেছে, সেই গোঘাটেও স্বস্তিতে নেই বাম -শিবির। সেখানেও সিপিএমের জোনাল কমিটির অফিস খোলেনি ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে। বামেদের অভিযোগ, সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্র এবং জেলা কমিটির এক সদস্য দেবু চট্টোপাধ্যায়কে মারধর করেছে তৃণমূল। অভয় ঘোষ, অরুণ পাত্রর মতো জনা তিরিশ প্রথম সারির বাম নেতা এলাকা ছেড়েছেন। সমস্বরে বামেদের অভিযোগ, এলাকায় থাকতে দিচ্ছে না তৃণমূল। মিথ্যা মামলা করছে। মারধর করছে। জরিমানা আদায় করছে। ঘরে ফিরলে খুনের হুমকি দিচ্ছে। আরামবাগ মহকুমার প্রায় ৯০ শতাংশ সিপিএম অফিস বন্ধ কিংবা দখল করেছে তৃণমূল এই অভিযোগ সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্তর। তাঁর দাবি, “আমাদের নেতা -কর্মীদের উপরে নিয়মিত ভাবেই হামলা চলছে।”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য আরামবাগের এই পরিস্থিতি মানতে নারাজ। আরামবাগের তৃণমূল নেতা সমীর ভাণ্ডারী বলেন, “আমাদের কেউ কোথাও হামলা করেনি। পার্টি অফিস বন্ধ করেনি। এখন সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে ওরা পার্টি অফিস খুলছে না।” একই বক্তব্য পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমানেরও। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মতে, সিপিএম থেকে তৃণমূলে ভিড়তে চাওয়া কিছু দুষ্কৃতী সিপিএমের পার্টি অফিস বন্ধ করে থাকতে পারে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে ধনেখালিতেও সিপিএমের পার্টি অফিস খোলা পাওয়াই দুষ্কর। ধনেখালি ১, ২ লোকাল কমিটির অফিস বন্ধ। ৩ নম্বর লোকাল কমিটির অফিস অনিয়মিত ভাবে খুলছে। কাংসারিপুর মোড়ে সিটুর অফিসে তালা। বন্ধ রয়েছে পারাম্বুয়া -দশঘরা, মৌবেসিয়া, ধনেখালি সিনেমাতলার শাখা অফিসগুলিও। মদনমোহনতলায় সিপিএমের জোনাল কমিটির অফিস বন্ধ। দিনকয়েক আগে জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায় প্রহৃত হন। অভিযোগ তৃণমূলের দিকেই। দিলীপবাবুর বক্তব্য, “আমার যেখানে এই হাল, অন্য কর্মীদের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।” তাঁর অভিযোগ, “যে সব কর্মী আমাদের পার্টি অফিস খোলার দায়িত্বে আছেন, তাঁরাই বিপন্ন। হুমকির মুখে তাঁরা অফিসমুখো হচ্ছেন না।”
ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র অবশ্য ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও ধনেখালি বিধানসভায় আইন -শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আসলে এক সময় যাঁরা আমাদের উপরে সন্ত্রাস চালিয়েছেন, তাঁরাই হয় তো আশঙ্কায় গ্রাম ছেড়েছেন। কিন্তু আমরা বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।” বিধায়কের দাবি, “দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কবে, কোথায় ওঁরা (বামেরা ) পার্টি অফিস খুলবেন তার তালিকা এবং সময়সূচি দিন। নিজে সেখানে থাকব।” আর হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর আশ্বাস, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিধায়ক বা প্রশাসনের আশ্বাস আছে। কিন্তু সিপিএমের নিচুতলার কর্মী -সমর্থকদের ভয় কাটায় কে? ধনেখালির তালবোনার বাসিন্দা, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএম সমর্থক এক দিনমজুরের কথায়, “যা কাটাকাটির বাজার। আমার জীবন গেলে, সংসারটা ভেসে যাবে। তাই পার্টি অফিসমুখো হচ্ছি না।” তাঁর এবং তাঁর মতো অনেকের সংযোজন, “আমাদের আমলে তো ওরা দিব্যি পার্টি অফিস খুলত। কী দিন যে পড়ল !” |
তথ্য সহায়তা : তাপস ঘোষ
|
|
|
|
|
|