আপনার সাহায্যে...

রোদ-বৃষ্টির এই বেলায়
তরতাজা থাকার মন্ত্র
গরমকে বশে রাখার অব্যর্থ দাওয়াই স্নান। তরতাজা থাকতে যেমনটা করেন সৌন্দর্য জগতের রূপ বিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন। গোলাপের পাপড়ি আর কয়েক ফোঁটা চন্দন তেল স্নানের জলে ফেলে মিনিট কুড়ি শরীর ভিজিয়ে রাখেন তিনি। আর মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা? তিনি নাকি স্নান সারতেন দুধ আর মধু মিশিয়ে। তার আগে বেশ করে মেখে নিতেন ‘স্ক্র্যাবার’, যা তৈরি হত মধু, বেকিং পাউডার আর ডেড সি সল্ট মিশিয়ে। সে যুগের মানুষও জেনে গিয়েছিলেন রূপচর্চায় সামুদ্রিক লবণের কেরামতি।
হলিউড অভিনেত্রী ক্যাথরিন জিটা জোন্সও ত্বক তরতাজা রাখতে মধুর সঙ্গে নুন মিশিয়ে নিতেন। সেই ধারাবাহিকতা অবশ্য এখনও আছে। কী বলছেন রূপ বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ? “স্নানের জলে খানিকটা বাথ-সল্ট ফেলে দিন। না পাওয়া গেলে পছন্দ মতো কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল। সারা দিন ঝরঝরে লাগবে। উপরি পাওনা কোনও ঘাম হবে না।”

ঘাম হটিয়ে
কলকাতার এই গুমোট গরমে ঘাম হবে না, তাই হয় নাকি? সে ভিড় বাস হোক বা অটো। মডেল ইয়ানা গুপ্ত আবার ঘামের পক্ষে। তিনি মনে করেন, ঘাম রোমকূপগুলোকে খুলে দেয়। ফলে ত্বক শ্বাস নিতে পারে। অর্থাৎ একটু-আধটু ঘাম ত্বকসম্মতও বটে। কিন্তু যাঁরা অহরহ ঘামেন? এবং শরীরময় ঘেমো গন্ধ? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত মৈত্র পরামর্শ দিচ্ছেন, “কোনও ভাবেই শরীরে ঘাম জমতে দেবেন না। বিশেষ করে অন্তর্বাসের আনাচে-কানাচে। সংক্রমণ হবে। বরং হাল্কা সুতির পোশাক পরুন। ঘামাচির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সাবান ও পাউডার ব্যবহার করুন।”
শুধু ত্বকে নয়, ঘাম থাবা বসায় চুলেও। চুলে চুলে চুলোচুলি। আর চিটচিটে চুল হলে কারই বা মেজাজ ঠিক থাকে। কিন্তু উপায়? “পারলে প্রতিদিনই শ্যাম্পু করতে হবে। খুশকির সমস্যা থাকলে তো বটেই। খুশকির জন্য গুঁড়ো ড্যানড্রফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। খুব বেশি খুশকি হলে সপ্তাহে একবার মুলতানি মাটি আর মেথি বেঁটে লাগাবেন। রাতে ফিরে চুল উল্টো করে আঁচড়ে নেবেন,” বলছেন রূপ বিশেষজ্ঞ সোমি গুপ্ত।

সূর্যের মুখোমুখি
হলিউড অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান নাকি গরম কালে পারতপক্ষে রোদের মুখোমুখি হন না! সত্যিই তো, সূর্য যেন ওত পেতে বসে আছে। বেরোলেই কালচে ছোপ ধরাবে। প্রাচীন গ্রিসে অ্যাথলিটরা এই ট্যান এড়াবার অদ্ভুত উপায় বার করেছিল। শরীরে বেশ করে তেল মেখে তার উপর দিত বালির প্রলেপ। সূর্যরশ্মি আর ত্বকের নাগাল পেত না। শরীরও ঠান্ডা থাকত।
কথা হচ্ছিল অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শোনালেন উল্টো কথা, ‘‘পদ্মানদীর মাঝি-তে অভিনয় করার সময় তেল মেখে রোদে শুয়ে থাকতেন শরীরে ট্যান ধরাবার জন্য। ছবির স্বার্থে।” তার পর? “হলুদ আর দুধের সর বাটা মাখলে ট্যান উঠে যায়। আমি অত কিছু করার সময় পাইনি। খানিকটা ট্যান রয়েই গেছে,” বললেন রূপা। শুধু মুখেই নয়, অতিবেগুনি রশ্মি চুলকেও ছেড়ে কথা বলে না। রং করা চুলেরও বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। এ ক্ষেত্রে সোমি গুপ্তের পরামর্শ মতো শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই সিরাম লাগাবেন। রোদ থেকেও বাঁচবে, চুলে জটও পড়বে না।
তবে ত্বক বা চুলের জন্যই নয়, শরীরের জন্যেও সরাসরি রোদকে এড়াবার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুব্রত মৈত্র, “সরাসরি রোদ লাগলে সানস্ট্রোক হতে পারে। রোদে বেরোলেও যতটা পারেন শরীর ঢেকে বেরোবেন। সঙ্গে খাবার জল রাখবেন।”


দিনের শেষে ক্লান্তি ঝরাতে
ডায়ানা নাকি ক্লান্তি ঝরাতে অ্যাভোকাডো মাখতেন। অ্যাভোকাডো বেটে মুখে মেখে চোখের উপর রাখতেন দু’টি শশার স্লাইস। চল্লিশ মিনিট, তার পর প্রথমে গরম আর শেষে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ঝরিয়ে ফেলতেন ত্বক তথা শরীরের ক্লান্তি। বলিউডের নায়িকারা আবার ক্লান্তি কাটাতে ভরসা রাখেন প্রাণায়ামে। আর আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষের জন্য কেয়া শেঠের পরামর্শ, “বাড়ি ফিরে ডাবের জলে মুখ ধোবেন। অথবা ডাবের পুরু শাঁস মুখে লাগিয়ে কিছু ক্ষণ শুয়ে থাকবেন। কিছু না পেলে গরমের সময় ফ্রিজে তো খানিকটা তরমুজ থাকেই। ওটাই মুখে ঘষুন। ক্লান্তি কাটবে। সান অ্যালার্জিও কমবে।”

হঠাৎ বৃষ্টি
গরমের তো নানা ঝামেলা লেগেই রয়েছে। মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সাময়িক স্বস্তি। সঙ্গে সমস্যাও। ডা. সুব্রত মৈত্র বলছেন, “এ রকম বৃষ্টিতে অ্যাজমা, সর্দি-কাশি, জলবাহিত রোগ বাড়ে। তাই বলে তো বাড়িতে বসে থাকা যায় না। যতটা সাবধানে থাকা যায় ততই ভাল।”
এক সময়ে বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা হত। সে দিন আর নেই। বৃষ্টি উল্টে এখন শরীরের ক্ষতি করে। কারণ দূষণ।
কেয়া শেঠের পরামর্শ, “বৃষ্টিতে ভিজলে মুখ ধুয়ে টোনার লাগাতে হবে। র্যাশের সমস্যা থাকলে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে মুখ ধোবেন। আর র্যাশ বেরিয়ে গেলে, তেজপাতা ফোটানো জল দিয়ে দিনে কয়েক বার মুখ ধুলে র্যাশ কমবে।”
একই কথা চুলের বেলাতেও। “বৃষ্টি ভেজা চুলে শ্যাম্পু করে নিতে পারলে সব চেয়ে ভাল। না পারলে ড্রাই শ্যাম্পু করে নেবেন। পাতলা কাপড় ওডিকোলনে ভিজিয়ে সেই কাপড় দিয়ে চিরুনি মুড়ে চুল আঁচড়াবেন। ফাংগাস হবে না,” বলছেন সোমি গুপ্ত।

ত্বকের টিপ্স
l ঘাম বেশি হলে সপ্তাহে এক দিন স্টিম বাথ নিতে পারলে ভাল হয়। এতে রোমকূপ খুলে যাবে। পরে বাথটাবে এসেন্সিয়াল অয়েল ঢেলে কিছু ক্ষণ তাতে শুয়ে থাকলে শরীর তরতাজা থাকবে। এসেন্সিয়াল অয়েল রোমকূপ দিয়ে ঢুকবে। ঘামলেও পরে সেই তরতাজা গন্ধটা থাকবে। দিন চারেক ধরে এর সুফল পাবেন।
l ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে বোরিক পাউডার মিশিয়ে লাগালে ঘামাচি গায়েব হবে।
l জুতো আর মোজা থেকে ঘামের গন্ধ বেরোলে জুতোর ভিতর তেজপাতা রাখুন। লবঙ্গ সামান্য থেঁতো করেও রাখতে পারেন। সংক্রমণ আটকাবে।
l তেজপাতা ফুটিয়ে সেই জলে স্নান করলে র্যাশ হবে না।
l এক মগ জলে কয়েকটা তুলসী পাতা আর এক চিমটে কর্পূর ফেলে ভাপ নিলে ব্রণ সারবে।
l ব্যাগে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার রাখবেন। ঠান্ডা ঘরে থাকলে হাত শুকিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে দু’-এক বার লাগিয়ে নেবেন।
তথ্য: কেয়া শেঠ

চুলের টিপ্স
l জলে আয়রন থাকার জন্য অনেকেই চুল ভেজাতে ভয় পান। সে ক্ষেত্রে এক বালতি জলে খানিকটা ভিনিগার মিশিয়ে মিনিট দশেক পরে সেই জলে চুল ধোবেন।
l মাসে একবার মেহেন্দি করলে চুলের অতিরিক্ত তেল বেরিয়ে যাবে।
l আমলকী, শিকাকাই আর বহেরার প্যাক লাগালে চুলের রং চট করে নষ্ট হবে না।

তথ্য: সোমি গুপ্ত

ঘরে ফিরেই ফ্রিজের জল নয়
l বাইরে থেকে ফিরেই ফ্রিজের জল গলায় ঢালবেন না। বা স্নান করবেন না। চট করে ঠান্ডা লেগে যাবে।
l পেট ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করবেন। হাল্কা খাবারই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেতে হবে।
l বাইরের কাটা ফল বা রঙিন জল যতই আকর্ষণীয় হোক তা খাবেন না। গ্যাসট্রোএনটেরাইটিস, জন্ডিস, হেপাটাইটিস হতে পারে।
l এসি-তে থাকার অভ্যাস থাকলে অসুবিধে নেই। কিন্তু ঘনঘন এসি-তে ঢুকবেন আর বেরোবেন না। তা হলেই ঠান্ডা লেগে যাবে।
l গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় ডাবের জল খাওয়া খুব জরুরি।
l বৃষ্টি মানেই মশা আর মশকবাহিত রোগ। ছাদে বা কোনও খোলা পাত্রে জল জমতে দেবেন না।

ডা. সুব্রত মৈত্র

Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.