মনোরঞ্জন...

ভিক্টর কবিরাজ
নামটি শুনলেই মনে পড়ে যায় সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে তাঁর অভিনীত নিখিলেশ চরিত্রটি। সেই সুদর্শন, আত্মস্থ নিখিলেশ যে কিনা পরম বিশ্বাসে স্ত্রী বিমলাকে পরিচয় করিয়ে দেয় বাইরের জগতের সঙ্গে। মনে পড়ে যায় ‘দুই পৃথিবী’তে উত্তমের সঙ্গে তাঁর দুরন্ত অভিনয়। কিংবা মৃণাল সেনের ‘মহাপৃথিবী’তে সেই তরুণ চরিত্রের কথা, যে কিনা বার্লিন দু’ভাগ হওয়ার পর জার্মানি থেকে ফিরে কলকাতার মাটিতে খোঁজে জীবনের আসল মানে।
এই সব ছবির ইতিহাস গরিমার পথ ধরেই ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ফিরে আসছেন তাঁর আগামী ছবিতে। এ বার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে, ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবিতে বিখ্যাত রাম কবিরাজের চরিত্রে। যাঁরা শীর্ষেন্দু ভক্ত তাঁরা জানেন রাম কবিরাজ চরিত্রটি এ গল্পে কতটা জোরালো।
অঙ্কে তেরো পাওয়া কিশোর বুরুনকে বাড়ির আর পাঁচ জন সহ্য করতে না পারলেও তার দাদু রাম কবিরাজ বুরুনের মধ্যে দেখতে পান অসীম প্রতিভা, আগলে রাখেন নাতিকে। ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ উপন্যাসে কাহিনির মেরুদণ্ড তো ওই রাম কবিরাজই।
গল্পের শেষে তাঁরই হাত ধরে বদলে যায় বুরুন। ফিরে পায় ছাত্র হিসেবে আত্মবিশ্বাস। রাম কবিরাজের কাণ্ডকারখানা সব সময় জমজমাট। গল্পের শেষে দেখা যায় তাঁর পসার বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারছে তাঁর চিকিৎসা। কেউ কেউ বলেন, রাম কবিরাজ নাকি মানুষের পাশাপাশি ভূতেদের চিকিৎসাও করেন।
কেমন লাগছে এমন একটি জোরালো ও জনপ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করতে? ভিক্টর বললেন, “দারুণ, এক কথায় দারুণ।”
আগে পড়েছিলেন গল্পটা?
না। চিত্রনাট্য পড়ে খুব ভাল লেগেছে। বিখ্যাত শিল্পনির্দেশক নীতীশ রায় ছবির পরিচালক। তাঁর লেখা চিত্রনাট্যে এমন সব সৃজনশীল ব্যাপার-স্যাপার আছে যে পড়েই রাজি হয়ে গেলাম ছবিটা করতে।
ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়

‘বং কানেকশন’ ছবির পর বাংলা ছবিতে তেমন ভাবে কোনও স্মরণীয় চরিত্রে তাঁকে দেখা যায়নি। তা হলে এই ‘গোঁসাইবাগান’ ছবি দিয়েই ভিক্টর ফিরবেন তাঁর নিজস্ব ঘরানার অভিনয়ের উচ্চতায়? “এই মন্তব্যে একটু ভুল থাকছে। সমান্তরাল ছবির পাশাপাশি খান চল্লিশ তথাকথিত বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতেও কাজ করেছি একই নিষ্ঠা নিয়ে। দু’ধরনের ছবিতে দু’ধরনের অভিনয় করেছি এমন বলাটা ঠিক নয়।”
ভিক্টর স্বীকার করুন বা না করুন এটা আশাই করা যায় তাঁর কামব্যাক হবে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এ রাম কবিরাজের বেশে মনন ও সংবেদী অভিনয় দিয়েই। এ বিষয়ে একেবারে এক মত পরিচালক নীতীশ রায়। “ভিক্টরের সঙ্গে আমার এখনও সামনাসামনি দেখা হয়নি। প্রযোজক সংস্থাই তাঁর সঙ্গে কথা বলে সম্মতি নিয়েছে। কিন্তু এটা আমার কাছে পরিষ্কার মনে হচ্ছে যে, রাম কবিরাজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হলে এই মুহূর্তে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ভিক্টরের সমকক্ষ আর কেউ নেই।”
বাংলা সাহিত্যে এবং সিনেমার ভূতেরা সব সময়ই খুব মজাদার। ‘তেনারা’ মানুষের বন্ধু হয়েই আসেন। মজার মজার ঘটনা ঘটান। পরশুরামের ‘ভূষণ্ডীর মাঠ’ থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’ কিংবা মনোজ মিত্রের ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, যখনই যেখানে বাঙালি ভূতের দেখা পেয়েছে তখনই আজগুবি আনন্দে হেসে উঠেছে বারবার। “এই ছবিতে তাই অনেক রকম স্পেশ্যাল এফেক্টসের কাজ,” বললেন নীতীশ।
ভিক্টরেরও দৃঢ় বিশ্বাস এ ছবির স্পেশ্যাল এফেক্টস আর পাঁচটা বাংলা ছবির থেকে আলাদা হবে। আকাশ বেয়ে নাকি উড়ে উড়ে বেড়াবে ভূতেরা, হাওয়ার মধ্যে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটে যাবে তারা, জলের ওপর দিয়েও হনহনিয়ে হাঁটবে।
ভূতের গল্প জুড়ে থাকা এই ছবিটি করতে গিয়ে কি ভিক্টরের মনে আসে ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন”-এর কথা? ভিক্টরের উত্তর, “এ সব চিরকালের প্রিয় ছবি। মনে তো পড়েই। কিন্তু ‘গোঁসাইবাগান’ করতে গিয়ে অভিনয়টা নিজের মতো করেই করব চিত্রনাট্য ধরে। এর বেশি ভাবতে নেই। আমার কাছে রাম কবিরাজের চরিত্রটা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। কখনও এমন চরিত্রে কাজ করিনি। নিজের কল্পনাশক্তি পুরোদমে কাজে লাগাব। খুব আনন্দে কাজ করব,” বললেন ভিক্টর।
এই মুহূর্তে অনেক নতুন পরিচালক কাজ করছেন। অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম এসে সিনেমা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। আপনি তাঁদের ছবিতে অভিনয় করতে চান না?
ভিক্টর বললেন, “চাইব না কেন? কিন্তু তারা যদি আমাকে ডাকে তবেই তো যাব, তাই না?”
এ ছবিতে অন্য সব শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখ্য হলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, আশিস বিদ্যার্থী, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, লকেট চট্টোপাধ্যায়, টিনু আনন্দ প্রমুখ। “এর আগে এই প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছি ‘হিটলিস্ট’ আর ‘গোরস্থানে সাবধান’-এও। কলকাতা আমার প্রিয় শহর। প্রিয় আমার বাংলা ছবিও,” বললেন মুম্বই নিবাসী টিনু আনন্দ। অন্য দিকে লকেটের কথা হল, “নীতীশ রায়ের প্রোডাকশন ‘মা মনসা’ সিরিয়ালে কাজ করেছিলাম। সে কথা মনে রেখে যে এই ছবিতে ডেকেছেন সেটা খুব ভাল লাগল। একমাত্র গুরত্বপূর্ণ নারী চরিত্র হিসেবে আমি কাজ করছি।”
প্রযোজক সংস্থার পক্ষ থেকে মৌ রায়চৌধুরী জানালেন, “বাচ্চাদের গল্প নিয়েই সাহিত্যভিত্তিক ছবি করতে চাই প্রত্যেক বছর।” তাঁদের আগের ছবি ‘গোরস্থানে সাবধান’ খুবই ভাল চলেছিল। শু্যটিং শুরু এ মাসেই। লোকেশন হিসেবে রয়েছে বোলপুর আর কলকাতা।

Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.