পশ্চিমবঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন নীতীশ কুমার। বিধানসভা ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও তাই রাজ্যের জন্য কোনও পদক্ষেপ করতে গেলে তিনি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তা করার চেষ্টা করছেন।
আজ এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সে কথা স্বীকার করে নিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আজকের দিনে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পাল্টে গিয়েছে। আপনি যতই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান না কেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ না করলে আপনার পতন অনিবার্য। হালফিলের পশ্চিমবঙ্গই এর সব থেকে বড় উদাহরণ। সেখানে একটি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ না করার ফলেই সেখানে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা ঘটেছিল। তার পরে কী হয়েছে আমরা সবাই জানি।” নীতীশ বলেন, “আমাদের সরকার সব মহলের কথাই শোনার চেষ্টা করে। পুরনো ধ্যান-ধারণা আর স্লোগান আঁকড়ে পড়ে থাকলে আজকের দিনে চলবে না। তাই আগে মানুষের কথা শুনতে হবে। না শুনলে আপনি এগোতে পারবেন না।” উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও নীতীশ কুমার দলের বিধায়কদের সামনে তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, “আমরা ২০৬ আর বিরোধীরা সাফ হয়ে গিয়েছে, এ কথা মুখেও আনবেন না। মানুষ অহংকারের ভাষা পছন্দ করেন না। আপনার সম্পর্কে মানুষের ধারণা ধাক্কা খাবে। বিরোধীদের তাই ভুলেও উপহাস করবেন না।”
আজ কথাটা উঠেছিল এক কংগ্রেস নেতার এক অভিযোগ থেকে। ওই নেতা বলেন, “বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন নীতীশ কুমার।” তার উত্তরে নীতীশ বলেন, “আমি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সব কাজ করতে অভ্যস্ত। এ ক্ষেত্রেও আপনাকে মনে করিয়ে দেব, বিহারকে ‘বিশেষ মর্যাদা’-র প্রস্তাব বিহার বিধানসভায় এবং বিধান পরিষদে সর্বসম্মত ভাবে অনুমোদন করানো হয়েছে।” এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ টানেন তিনি।
এর আগে ঘনিষ্ঠমহলে নীতীশ বারবারই বলেছেন, “সিপিএম বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়েছিল। কিন্তু সব অংশের মানুষের সঙ্গে আলোচনা না করেই কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। আমি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েছি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রত্যাশার চাপও থাকে মারাত্মক। তাই যে কোনও কাজেই আপনাকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ কিন্তু ঘনিষ্ঠমহলে এ কথা স্বীকার করলেও প্রকাশ্যে কখনওই তা স্বীকার করেননি নীতীশ কুমার। জেডিইউ শিবিরের অনেক নেতার অভিমত: এখন পশ্চিমবঙ্গে ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন’ হয়ে গিয়েছে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাখঢাক না করেই নীতীশ জানিয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে ঐকমত্যে না গিয়ে তড়িঘড়ি সিঙ্গুরে জমি দখল করতে গিয়ে ভুলই করে ফেলেছিল তৎকালীন বাম সরকার। সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাদের ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়েছেন। |