লোকপাল বিল নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সরকারের আহ্বানে সাড়া দিল না বিজেপি।
এ ব্যাপারে প্রণব মুখোপাধ্যায় সব রাজনৈতিক দল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি দিয়েছিলেন, বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী তার জবাব দিয়েছেন বটে। কিন্তু সরকারকে প্যাঁচে ফেলতে একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেননি। উল্টে আন্না হাজারের সঙ্গে গঠিত যৌথ খসড়া কমিটিকেই ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এনডিএ সদস্য এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রণববাবুর চিঠির কোনও জবাব না দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কারণ, আন্না হাজারে এবং যোগগুরু রামদেবকে সামলাতে মনমোহন সরকার যে ভাবে হিমসিম খাচ্ছে, তার ফয়দা তুলতে দ্বিমুখী কৌশল নিয়েছে বিজেপি।এক দিকে তারা আন্না হাজারে-রামদেবের আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। আবার সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিলে তা নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছে না। পাশাপাশি সনিয়া-মনমোহনকে আক্রমণ তো আছেই।
লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রীকেও সামিল করার কথা জানিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে সামিল করা যথাযথ হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপির মধ্যেই মতান্তর রয়েছে। যদিও বিচারপতিদের লোকপালের আওতার বাইরে রেখে আলাদা জাতীয় কমিশন গড়ে তার আওতায় তাঁদের আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন গডকড়ী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে দলের মতান্তরকে চাপা দিয়ে গডকড়ী যে চিঠি লিখেছেন প্রণববাবুকে, তাতে স্পষ্ট আন্না হাজারেকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের ‘ফাঁদে’ পা দিতে রাজি নয় বিজেপি।
গডকড়ীর ইঙ্গিত, কংগ্রেস সরকার সংসদীয় ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা না বলে আন্না হাজারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। তাঁর মতে, “উচ্চ পদে দুর্নীতি রুখতে লোকপাল বিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এত দিন বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনই অনুভব করেনি সরকার। এখন নাগরিক সমাজের সঙ্গে যখন মতভেদ হচ্ছে, তখন এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে বিরোধীদের মতামত চাওয়া হচ্ছে।” বিজেপি নেতৃত্বের সাফ কথা, যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিলের খসড়া চূড়ান্ত করছে, ততক্ষণ বিজেপি কোনও মতামত জানাবে না। সংসদীয় ব্যবস্থায় যে কোনও বিল পাশ করার অধিকার সাংসদদের। বিজেপি এখন যে মতামত দেবে, তা গ্রহণ বা খারিজ করার কোনও অধিকারই নেই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের। অথচ এই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আন্দোলনকেই প্রকাশ্যে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি।
কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অবশ্য বলেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই সরকার সব রাজনৈতিক দলের মত চেয়েছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলি মতামত না জানায়, তা হলে কী করে খসড়া চূড়ান্ত হবে। এ তো মুরগি আর ডিমের গল্প। কোনটি আগে তা নিয়েই বিতর্ক। নাগরিক সমাজের মুষ্টিমেয় কয়েক জন যে শেষ কথা নয়, তা বুঝেই তো সরকার সকলের মতামত চাইছে।”
কিন্তু বিজেপির কৌশল, দুর্নীতির প্রশ্নে সনিয়া ও মনমোহন সিংহকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ করা। এবং আন্না হাজারে ও রামদেবের আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়ে কংগ্রেসকে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল করা। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে আজ যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে
দুর্নীতি নিয়ে সনিয়া-মনমোহনের নীরবতা’কে প্রশ্ন করেছে বিজেপি।
দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “জাতীয় সম্পদ লুঠের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই মনমোহন সরকার দেশ চালানোর যাবতীয় নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। গোটা ঘটনায় সনিয়া গাঁধীও নীরব। তিনিও এর দায় এড়াতে পারেন না।” |