রুদ্রসাগর ঘিরেই ত্রিপুরা পর্যটনের স্বপ্ন রচনা
রুদ্রসাগরের সঙ্কট নিয়ে ভাবিত সকলেই। সঙ্কটের কারণ নিয়ে বিভিন্ন মহলের মধ্যে মতভেদ হলেও কিন্তু একটা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই একমত যে রুদ্রসাগরের হাল ফিরলে সেটা ত্রিপুরা-পর্যটনের সব থেকে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে উঠবে।
বিশাল হ্রদের মাঝখানে নীরমহলের অবস্থান সত্যই মনোমুগ্ধকর। জলের ভিতরে প্রাসাদ দেখার এমন সুযোগ পূর্ব ভারতে আর কোথাও মিলবে না। আর এই দৃশ্য দেখার টানেই ত্রিপুরায় ছুটে আসেন দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক। নীরমহলে শনি ও রবিবার আলো ও ধ্বনির সাহায্যে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয় এ রাজ্যের সংস্কৃতি ও ইতিহাস। ব্যাপারটা চিত্তাকর্ষক। পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রাজ্য পযর্টন দফতরের আবাস সাগর মহল ট্যুরিস্ট লজে। সেটি অবশ্য ডাঙায়। রুদ্রসাগরে আয়ের উৎস মূলত চত্বরে ঢোকা গাড়ির পার্কিং ফি, নীর মহলের প্রবেশমূল্য ও সাগরমহলে থাকার ভাড়া।
জলের ভিতরে প্রাসাদ। পূর্ব ভারতে এমন দৃশ্য বিরল। উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

রুদ্রসাগর উদ্বাস্তু মৎস্যজীবী সমিতির হিসাবে, ২০১০-১১ আর্থিক বছরে শুধু গাড়ি পার্কিং বাবদ ২০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতর সূত্রের হিসাবে, ২০১০-১১ সালে ১০ লক্ষ টাকারও বেশি আয় হয়েছে সাগরমহলে পর্যটকদের কাছ থেকে। ওই একই সময়ে পর্যটকদের টিকিট ও আলো ও ধ্বনি শো বাবদ নীরমহলের মোট আয় ৬ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সাগরমহলের ম্যানেজার বাবুল দেবনাথ আর নীরমহলের ম্যানেজার সুভাষ দেবনাথের মতে, রুদ্রসাগরের হাল ফিরলে এই পর্যটনকেন্দ্র থেকে রাজ্যের আয় বছরে আড়াই কোটি ছাড়িয় যাবে।
রাজ্য পর্যটন ফতর সূত্রের হিসাবে, ২০০৯-১০ সালে এ রাজ্যে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে সিকি ভাগই ছিল কলকাতার। ২০১০-১১ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। নীরমহল দেখতে আসা পর্যটকের হারও একই। ২০০৯-১০ সালে নীরমহলে বেড়াতে গিয়েছিলেন সাড়ে ৭৮ হাজার পর্যটক। ২০১০-১১ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজারেরও বেশি। উদ্বাস্তু সমিতি জানাচ্ছে, বছরে লক্ষাধিক গাড়িই আসে এখানে। রুদ্র সাগরের আর এক আকর্ষণ হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। শীতকালে পাখি দেখার টানেও হাজির হন বহু পর্যটক। সমিতির ধারণা, রুদ্রসাগরের হাল ফিরলে আড়াই লক্ষ পর্যটক বছরে আসতে পারবেন বেড়াতে।
শত সমস্যার মধ্যেও রুদ্রসাগরের টানে আরও পর্যটক আসবে বলে আশা রাজ্য পর্যটন দফতরের কর্তাদের। পর্যটন কমিশনার কুমার অলোক জানান, ২০১২-১৩ বছরের মধ্যে আরও একটি পর্যক আবাস গড়ে তোলা হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছ থেকে মিলেছে ৫ কোটি টাকা। তা দিয়ে মূলত নীরমহলের সংস্কার করা হবে।
কিন্তু যাকে ঘিরে পর্যটন দফতর হাল ফেরানোর আশায় বসে সেই রুদ্রসাগর যে মজতে বসেছে। প্রথমে দরকার সেই সোনার হাঁসকে বাঁচানোর। কারণ পলিজমা আর ধান চাষের ঠেলায় রুদ্রসাগরের যে ডাঙা হয়ে ওঠার দশা। রাজ্যের মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাঙোয়ান জানান, ১৯৯৯ সাল থেকে এই জলাশয় বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রুদ্রসাগরকে বাঁচাতে ৭৬ কোটি টাকার ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যানও রচনা করা হয়। কিন্তু সেটি কেন্দ্রের অনুমোদন পায়নি। আর অন্য খাতে পাওয়া টাকা কার্যত সিন্ধুতে বিন্দুর সমান। বনদফতরের আর এক কর্তা সাফ জানিয়ে দেন, রুদ্রসাগর অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজন। এর মজে যাওয়া বন্ধ করতে পলি তুলে ফেলতে হবে। সে কাজের জন্য মোটা টাকা দরকার। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া সে কাজ সম্পন্ন করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয়কুমার পণ্ডা জানান, জাতীয় হ্রদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অর্থ পাওয়ার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশিস মজুমদারকে দিয়ে ফের আর একটি সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
সমস্যা আছে। তবু রুদ্রসাগরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা ছাড়তে নারাজ ত্রিপুরা।

Previous Story Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.