|
|
|
|
নিয়ম ভেঙে যত্রতত্র দাঁড়ায় বাস, দুর্ঘটনা বাড়ছে জাতীয় সড়কে |
সুশান্ত বণিক ²দুর্গাপুর |
ট্রাফিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জাতীয় সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে পড়ছে বাস। সে সরকারি হোক বা বেসরকারি, এই জায়গায় ফারাক নেই কোনও। জাতীয় সড়কে প্রচলিত বাস দাঁড়ানোর জায়গাগুলি থেকে সামান্য দূরত্বেই তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ‘বাস বে’। সেখানে ছোট শেডও গড়ে দিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাসগুলি সেখানে দাঁড়ায় না। কারণ অনেক যাত্রীই ‘বাস বে’ নিয়ে তত সড়গড় নন। তাই অতিরিক্ত যাত্রীর লোভে বাসগুলি দাঁড়াচ্ছে সেই পুরনো জায়গাতেই। ফলে ঝুঁকি নিয়েই বাসে ওঠানামা করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
মুচিপাড়ায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ‘বাস বে’ সুনসান। তেমাথার মোড়ে যথারীতি বাস দাঁড়াচ্ছে। রাস্তার রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে কোনও রকমে যাত্রীরা বাসে ওঠানামা করছেন। লোকাল হোক বা দুরপাল্লার, সরকারি হোক বা বেসরকারি সব বাসই দাঁড়ায় ওখানেই। বাস দাঁড়ানোয় আগে-পিছনের রাস্তা ঠিকমতো দেখতে না পেয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। প্রশাসন ও পুলিশি নজরদারিতে দিন কয়েক বাস দাঁড়ায়নি। কিন্তু এখন আবার সেই একই অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা বিশাল সাউ, সুমন পতিরা বলেন, “লাগাতার দীর্ঘ দিন ধরে নজরদারি চালাতে হবে। তবেই বাসকর্মী ও এক শ্রেণির যাত্রীদের মানসিকতা বদলাবে। তবেই বাস দাঁড়াবে নির্দিষ্ট জায়গায়।” তাঁরা জানান, বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় মাঝে মাঝে নেমে আসে জাতীয় সড়কেও। যে কোনও সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডের বাইরে জাতীয় সড়কে বাস দাঁড়ানো যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে। কিছু লোকাল, কিছু মিনি বাস ও কিছু দুরপাল্লার বাস সময় বাঁচাতে জাতীয় সড়কেই যাত্রী নামিয়ে দেয়। ব্যস্ত জাতীয় সড়ক পেরিয়ে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে এসে তবে টাউন সার্ভিস বাস বা রিক্সা মেলে। অথচ সিটি সেন্টারেরই রয়েছে পাকা বাসস্ট্যান্ড। বাস দাঁড়ানোর জায়গাও যথেষ্ট। কিন্তু বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের আচরণের খেসারত দিতে হয় যাত্রীদের। বোলপুর থেকে ফিরছিলেন বি জোনের বাসিন্দা অপরূপা গড়াই। তাঁর কথায়, “বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জাতীয় সড়ক পারাপার করা কত ঝুঁকির। অথচ বার বার বলেও বাসটি সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে ঢুকল না। জাতীয় সড়কেই নামিয়ে দিল।” একই ছবি দেখা গিয়েছে, গাঁধী মোড়, ভিড়িঙ্গি মোড়, মেনগেট এলাকায়। গলসির নিত্যযাত্রী শেখ মোজাম্মেল হক বলেন, “বেশ কিছু সরকারি বাসও সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে ঢোকে না। অথচ মূলত সরকারি বাসের জন্যই একসময় এই বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছিল।”
যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোর ফলে যাত্রীদের অসুবিধার কথা স্বীকার করেছেন আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায়। তিনি জানান, রুটের বাস নির্দিষ্ট জায়গাতেই থামার কথা। তাতে যাত্রীদের সুবিধার পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমে। তবে নিজেদের স্বার্থে প্রায়শই বাসগুলি যে এই নিয়ম মানে না, সে কথা জানিয়ে অনিমেষবাবু জানান, বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারে পড়ে না। দেখে ট্রাফিক পুলিশ। দুর্গাপুরের ট্রাফিক পুলিশের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশ কর্মীর অভাব থাকায় সব সময় সর্বত্র কড়া নজরদারি চালানো যায় না। ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “জাতীয় সড়ক জুড়ে যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোর বদভ্যাসের বিষয়ে বাসকর্মীদের বলা হয়েছে বার বার। কিছুদিন পরিস্থিতি বদলালেও দিনকয়েকের মধ্যেই আবার যা কার তাই হয়ে দাঁড়ায়।” তাঁর আশ্বাস, “শীঘ্র ফের অভিযান চালানো হবে।”
সেই দিন কবে আসবে তার অপেক্ষাতেই আপাতত দিন গুণছেন নিরুপায় যাত্রীরা। |
|
|
|
|
|