|
|
|
|
অপরাধের ‘মুক্তাঞ্চলে’ কাঠগড়ায় পুলিশই |
সুশান্ত বণিক ²আসানসোল |
রাজ্যের আইনমন্ত্রীর নিজের শহরেই আইনশৃঙ্খলা শিকেয় উঠেছে।
শুধু আসানসোল বা রানিগঞ্জ শহর নয়, গোটা খনি এলাকাই যে অপরাধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, একের পর এক ঘটনায় তা কার্যত পরিষ্কার। গত ১১ দিনে আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত আটটি খুন-জখম, ছিনতাই ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। মারা গিয়েছেন তিন জন, জখম কমপক্ষে পাঁচ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসানসোল শহরের কোর্ট মোড়ে মাফিয়া খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই রাতে ধাদকা এলাকায় দরজা ভেঙে একটি বাড়িতে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। শুক্রবারও এসম্প্রতি প্রতিটি ঘটনাতেই বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর দাবি করে এসেছেন, অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়বে। কিন্তু গত দু’সপ্তাহে কার্যত একটি ঘটনারও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গত ১১ দিনে প্রথম বড় ঘটনাটি ঘটে ২৪ মে। আসানসোল উত্তর থানার ধাদকা এলাকায় এক রেলকর্মীর বাড়িতে দরজার তালা ভেঙে ঢুকে লক্ষাধিক টাকা লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। পরের দিন দক্ষিণ থানার ডুরান্ড কলোনিতে রেল আবাসনের তালা ভেঙে লুঠ করা হয় লক্ষাধিক টাকা। ২৯ মে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কুলটির চিনাকুড়িতে দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর গুলির লড়াই বাধে। দুই সাধারণ নাগরিক জখম হন। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, মূল পান্ডাকেই পুলিশ ধরতে পারেনি বা ধরেনি। |
পরের দিন |
|
স্তব্ধ। বন্ধ নয়, এলাকার প্রোমোটার খুনে থমথমে হিরাপুরের ৮ নম্বর বস্তি এলাকা। বন্ধ দোকানপাট। ছবি: শৈলেন সরকার। |
পরের ঘটনা ৩১ মে সালানপুরের জেমারি এলাকায়। ভরসন্ধ্যায় রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এক ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার কর্মীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। বেধড়ক মারধরও করা হয় ওই কর্মীকে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ১ জুন দিনদুপুরে হিরাপুরের রাধানগর রোডে দুষ্কৃতীরা একটি সোনার দোকানে চড়াও হয়। কয়েক লক্ষ টাকা সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায় তারা। পরের দিনই, বৃহস্পতিবার কোর্ট মোড় এলাকার বহুতলে ইদানীংকার সবচেয়ে বড় হামলায় খুন হন মাফিয়া তথা প্রোমোটার রামলক্ষ্মণ যাদব-সহ তিন জন। তাঁর এক গুলিবিদ্ধ সঙ্গী এখনও দুর্গাপুরের নার্সিংহোমে ভর্তি।
বৃহস্পতিবারই আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক কলকাতা থেকে এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ যা করার করবে। তা সত্ত্বেও রাতে ধাদকায় লুঠপাট হয়। এ দিন শেষ সংযোজন, আসানসোল দক্ষিণ থানার বুধায় একটি বাড়ির পিছনের দরজা ভেঙে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তার পরে বাড়ির লোকজনকে ভয় দেখিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না ও নগদ লুঠ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
শহরবাসীর ভাল-মন্দের অন্যতম দায় যাঁর, সেই আসানসোলের মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই অবস্থায় প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে যে শহরে প্রশাসন আছে। আমরা পুলিশের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। অবিলম্বে সমাজবিরোধীদের ধরতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, এক সময়ে এই সমাজবিরোধীদেরই ‘ব্যবহার’ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নীতি, পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ না-করা। তাপসবাবুর মতে, যে সব এলাকায় অবৈধ কয়লা ও লোহার কারবার চলে, সেখানে দুষ্কৃতীদের কাছে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র আছে। রাজ্যে সর্বত্র বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হলেও আসানসোলে তা হচ্ছে না। পুলিশকে সে দায়িত্ব নিতে হবে।
আগের সরকার যাদের হাতে ছিল, সেই সিপিএমও এখন বিশৃঙ্খলার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকেই দায়ী করছে। এ দিন দলের তরফে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সিপিএমের আসানসোল জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এ সব হচ্ছে। ফল ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” পুলিশ সুপার অবশ্য এর পরেও ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে। |
অপরাধের দিনলিপি |
|
২৪ মে ধাদকায় বাড়ির তালা ভেঙে লুঠ
২৫ মে ডুরান্ড কলোনিতে রেল আবাসনে লুঠ
২৯ মে চিনাকুড়িতে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠী সংঘর্ষে জখম দুই
৩১ মে জেমারিতে কয়েক লক্ষ টাকা ছিনতাই, আহত এক
১ জুন বার্নপুর রাধানগর রোডে সোনার দোকানে ছিনতাই
২ জুন আসানসোলের কোর্ট মোড়ে গুলিতে খুন তিন
২ জুন ধাদকায় বাড়ির তালা ভেঙে লুঠ
৩ জুন বুধায় বাড়ির দরজা ভেঙে লুঠ
* চিনাকুড়ির ঘটনায় ধৃত ২, কোর্ট মোড়ের খুনে আটক কয়েক জন। আর কোনও ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। |
|
|
|
|
|
|