জঙ্গলমহলে চাষের কাজ ও পানের জন্য জল সরবরাহের ব্যাপারে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। নয়া পরিকল্পনার বিশেষত্ব হল, ওই অঞ্চলে ছোট ছোট পুকুর কেটে চাষের জন্য জল ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে পানীয় জলের জন্য সিমেন্টের ‘ট্যাঙ্ক’ তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পে চেষ্টা হবে কর্মসংস্থানেরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন পেলেই এই পরিকল্পনা বলবৎ করার কাজ দ্রুত শুরু হয়ে যাবে বলে মঙ্গলবার মহাকরণে জানান জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ মহাপাত্র।
মন্ত্রীর অভিযোগ, মাটির নীচে জলের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়া সত্ত্বেও পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ভূগর্ভের জলকেই নানা ভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছিল। মন্ত্রী বলেন, “আমরা ঠিক এর উল্টো পথে হেঁটে মাটির উপরে জলের বিভিন্ন উৎসকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। সেই জন্য পুকুর কেটে নদীর জোয়ারের জল এবং বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যা ‘জল ধরো, জল ভরো’ নীতি।”
সারা রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই নীতি মেনে চলতে চায় নতুন সরকার। সেই জন্য সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। তবে তার আগেই জঙ্গলমহলের তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জন্য নতুন ‘জল-নীতি’ তৈরি করা হয়েছে। ওই তিন জেলার মাটি মূলত পাথুরে। সেখানে চাষ বিশেষ হয় না। সেটা মাথায় রেখেই নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে মন্ত্রীর দাবি।
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের ওই তিন জেলায় চাষের জন্য ছোট ছোট পুকুর কেটে জল ধরে রাখা হবে বলে জানান মন্ত্রী। পাথুরে মাটি বলে ওখানে অনেক দিন ধরে জল ধরে রাখা যাবে। সেই জল চাষের কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়াও নদীর জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। সৌমেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলে গম এবং সামান্য পরিমাণে ধান চাষ হয়। আমরা চাষিদের রবিশস্যও চাষ করতে বলব। অল্প জলে চাষ করা যায়, এমন শস্যের বীজ দেওয়া হবে তাঁদের।”
চাষের পাশাপাশি পানীয় জলের জন্যও পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথায়, “বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য প্রতিটি এলাকায় হাল্কা সিমেন্টের ‘ট্যাঙ্ক’ তৈরি করা হবে। সেই ট্যাঙ্ক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে গ্রামে গ্রামে।” গোটা প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে ২২ কোটি টাকা লাগবে জানান মন্ত্রী।
আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের নদীবাঁধ তৈরির কাজ কী ভাবে শুরু করা যায়, সেই বিষয়ে এ দিন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “বিগত সরকার জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুই করেনি। কেন কাজ হয়নি, সমস্যা কোথায় এ-সব নিয়ে আমি দফতরের সচিব ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও তৈরি করা হয়েছে।” সেচমন্ত্রী জানান, শুক্রবার এই নিয়ে আলিপুরে বৈঠক হবে। সেখানে জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন। বারাসতে বৈঠক হবে ৭ জুন। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্প নিয়েও এ দিন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে জানান মানসবাবু। |