বেতন দিতে মাসে খরচ নয় নয় করে ২০০০ কোটি টাকা। কিন্তু কত জন সেই বেতন পাচ্ছেন, তার কোনও সঠিক হিসাব নেই রাজ্য সরকারের কাছে।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কাজ শুরু করেছে অর্থ দফতর। শুরু হয়েছে কর্মী-শুমারি। এ ব্যাপারে তথ্য-ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য কর্মীদের কাছে একটি ফর্ম বিলি করছে রাজ্য সরকার। তাতে সব কর্মীকে তাঁর চাকরি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানাতে হবে। এই ফর্মে থাকছে, কর্মীর নাম, জন্ম তারিখ, দফতরের নাম, বাবা-মায়ের নাম, প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট নম্বর, চাকরিতে যোগদান ও অবসরের তারিখ, কী পদে চাকরি করছেন, থানা-সহ বাড়ির ঠিকানা, অফিসের ফোন নম্বর এবং মোবাইল ফোন থাকলে তার নম্বর।
দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্ট-বিরোধী সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি অভিযোগ করে আসছিল, রাজ্যে ‘ভুয়ো-কর্মী’ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে। রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসও এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসেছে। ২০০২ সালে এজি বেঙ্গল জানিয়েছিল, প্রতি মাসের বেতনের বিল করার সময় সব দফতরকে কর্মীর নাম-ধাম, নিয়োগের তারিখ, অবসরের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। না হলে বেতনের বিল পাশ করা হবে না। কিন্তু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অসীম দাশগুপ্ত অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বার বার এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বরাবর বলে গিয়েছেন, রাজ্যের ট্রেজারিগুলির কাছে কর্মীর সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই কর্মী সংগঠনগুলি এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। রাজ্যে মোট কর্মীর সংখ্যা কত, তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে
তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে কর্মী সংখ্যা নিয়ে কোনও তথ্যই নেই। তাই অর্থমন্ত্রীকে এই ব্যাপারে একটি তথ্য-ব্যাঙ্ক তৈরি করতে বলেছি। এর পরে আর নগদে বেতন দেওয়া হবে না। প্রত্যেক কর্মীর বেতন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে।”
রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলকুমার মিত্র বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে কোনও হিসাবই ছিল না, তো তারা দেবে কোথা থেকে। সবিস্তার তদন্ত হলে জানা যাবে যে ভুয়ো-কমীর্র্র নামে সরকারি কোষাগার থেকে কত কোটি টাকা বছরের পর বছর তুলে নেওয়া হয়েছে।” নগদে বেতন দেওয়ার ফলেই এই ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ রেখে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবু জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মীর সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮২ হাজার। কিন্তু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পুরসভা-পঞ্চায়েতে কর্মীর সংখ্যা কত, তিনি জানাতে পারেননি। সব মিলিয়ে বেতনের জন্য প্রায় ২০০০ কোটি টাকা মাসে খরচ হয় বলে অসীমবাবু জানান। অথচ ওই সময়ই অর্থ দফতরের অধীনস্থ ব্যুরো অব ইকনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স জানায়, ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কর্মীর হিসাবটা ২০০৬ সালের। তার পর থেকে আর কোনও হিসাব তারা অর্থ দফতর থেকে পায়নি। সরকারি কর্মী ছাড়া আধা সরকারিও কর্মীর কোনও হিসাবই নেই।
এ দিকে, রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ আজ, বুধবার মহাকরণে রাজ্য পুলিশের কর্মী নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে প্রাথমিক তথ্য-ব্যাঙ্ক তৈরি করে বৈঠকে পেশ করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশে এখন ১৪ হাজার ৫০৮টি পদ শূন্য। এর মধ্যে কনস্টেবলের পদই ৭০০০। রাজ্য পুলিশে এখন সব মিলিয়ে ৬১ হাজার ৩৯১ জন কর্মী ও অফিসার রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক অফিসার বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য সরকার দ্রুত শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গলমহল এলাকায় ৭০০ ও দার্জিলিং পাহাড় এলাকায় ৩০০ কনস্টেবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে এই দুই এলাকায় স্থানীয় যুবকেরা পুলিশে চাকরির সুযোগ পাবেন। |