দলীয় কর্মীদের ক্রমাগত সংযত থাকার নির্দেশ দিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকে তাঁর ক্রমান্বয়ে বার্তা ‘নিজের মতো কাজ করুন।’ কিন্তু সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশ যে নিচুতলার কর্মীদের কাছে পৌঁছয়নি নদিয়ার গয়েশপুরে সিপিএমের পুর চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ফের তা প্রমাণ করে ছাড়ল তৃণমূল।
সোমবার রাত থেকে তৃণমূলের কিছু কর্মী দফায় দফায় ওই পুর প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় এলাকার বেশ কয়েক জন সিপিএম কর্মীকেও। ওই ঘটনায় গয়েশপুরের পুর চেয়ারম্যান গোপাল চক্রবর্তী নিজে আহত হননি ঠিকই। তবে আঘাত পেয়েছেন তাঁর সত্তরোর্ধ্ব মা। তাঁর হাতে চোট লেগেছে। গোপালবাবু জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতেও পারছেন না তাঁরা। তাঁর কথায়, “থানার সামনে সব সময়ে তৃণমূল কর্মীদের ভিড়, সেখানে যাব কী করে!”
সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক আশু ঘোষ বলেন, “এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। সর্বত্রই দলীয় কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। সোমবার রাতেও গয়েশপুরের পুরপ্রধানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। ওরা রাজ্যের ক্ষমতায় আছে। এমনটা তো হবেই।!” পুলিশ কী করছে? জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “গয়েশপুরে সোমবার রাতে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।” কিন্তু প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পরেও ওই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। মঙ্গলবার রাতে দু’পক্ষকে নিয়ে কল্যাণীর মহকুমা পুলিশ প্রশাসকের দফতরে বৈঠকে বসেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।
মঙ্গলবার, মেদিনীপুরেও সিপিএমের কাউন্সিলর সুমিতা বেরাকে পুরসভার ভিতরেই তৃণমুলের সমর্থকেরা হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। সুমিতাদেবীর ওয়ার্ডে জলসঙ্কট নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। অপমানিত সুমিতাদেবী সকলের সামনেই কেঁদে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের পুরপ্রধান পারিষদ (জল) বিশ্বনাথ পাণ্ডবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সুমিতাদেবীর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন বিশ্বনাথবাবু।
কল্যাণীর গয়েশপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে গণ্ডগোল চলছে সোমবার রাত থেকেই। অভিযোগ, রাতে পুরপ্রধান গোপাল চক্রবর্তীর বাড়িতে চড়াও হয় এলাকার কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। ভাঙচুর চালানো হয় বাড়িতে। বাধা দিতে গেলে ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে গোপালবাবুর বৃদ্ধা মা রাজবালাদেবীকেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে এলাকার একটি ক্লাবে সিপিএম ও তৃণমূলের সদস্যদের মধ্যে বচসা বাধে। তার জেরে দু’পক্ষে হাতাহাতিও হয়। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দা গোপালবাবুর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের সমর্থকেরা। সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না গোপালবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের বেশ কয়েক জন আমার বাড়িতে চড়াও হয়। ভাঙচুর চলে। বাধা দিতে গেলে বৃদ্ধা মাকে ধাক্কাধাক্কি করেছে। পরে এলাকার আরও ১৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া তিনটি শাখা অফিস ও একটি লোকাল অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমাদের বেশ কয়েক জন কর্মীকে মারধর করেছে।”
এ দিকে, ওই ঘটনায় পাল্টা মারধরের অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কল্যাণীর বিধায়ক তৃণমূলের রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “সিপিএম ক্যাডারদের আক্রমণে দলের দুই কর্মী জখম হয়েছেন। তবে আমাদের কর্মীরা কোনও দলের কার্যালয় ভাঙচুর করে থাকলে খুব অন্যায় করেছেন।” গয়েশপুর-১ শাখার তৃণমূলের সভাপতি মরণকুমার দের কথায়, “এই ঘটনার সঙ্গে দলীয় কর্মীদের যোগাযোগ নেই। সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এমনটা হয়েছে।”
এ দিকে, ঘটনার খবর পেয়ে বুধবারই এলাকায় যাবেন জেলার সিপিএম বিধায়কেরা। দলের জেলা কমিটির সদস্য শান্তনু ঝা বলেন, “বুধবার জেলার তিন বিধায়ক ছাড়াও এলাকা পরিদর্শনে আসবেন রাজ্য নেতৃত্ব।” |