সেই বাম জমানার মতো ‘আমরা-ওরা’? নাকি দলতন্ত্রের উর্ধ্বে ওঠা?
রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনস্থ বিভিন্ন কমিটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোন পথে হাঁটে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল বিভিন্ন মহলেই। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মনোনীত বিভিন্ন কমিটি-প্রধানরা অধিকাংশই নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে পদত্যাগ করেছিলেন। এ দিন নতুন করে গড়া কমিটিগুলিতে নতুন সরকার যেমন নতুন মুখ এনেছে, তেমনই পুরনো সদস্যরাও অনেকেই নতুন করে ডাক পেয়েছেন।
নতুন কমিটিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়েছিল নন্দনের কমিটিকে ঘিরে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সংস্কৃতি-চর্চার আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত নন্দনের সভাপতি পদে ছিলেন তরুণ মজুমদার। নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনই পদত্যাগ করেন বামপন্থীদের ঘোষিত বন্ধু তরুণবাবু। এ বার কমিটির নতুন সভাপতি হলেন সন্দীপ রায়। কিন্তু বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে তরুণবাবুকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেনের সঙ্গে ওই কমিটিতে আছেন বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মৃণাল সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। সৌমিত্রবাবু এর আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির সভাপতি ছিলেন। এখন সেই দায়িত্ব পাচ্ছেন রঞ্জিত মল্লিক।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলা আকাদেমির নতুন সভাপতি হয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী। রবীন্দ্র সদনের দায়িত্বে সুমিত্রা সেন। কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের সভাপতি হয়েছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উৎসব কমিটির সভাপতি করা হয়েছে শাঁওলী মিত্রকে। নজরুল অ্যাকাডেমির সভাপতি হয়েছেন জয় গোস্বামী, সহ-সভাপতি অনুপ ঘোষাল।
সার্ধশতবর্ষে নতুন করে রবীন্দ্র রচনাবলি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বাম জমানাতেই। সেই উদ্দেশ্যে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটির সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকেই। সহ-সভাপতি হচ্ছেন শঙ্খ ঘোষ। রবীন্দ্র রচনাবলি কমিটিতে এ ছাড়াও থাকছেন স্বপন মজুমদার, অনাথনাথ দাস, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমির চেয়ারপার্সন পদে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম বিবেচনায় রয়েছে।
মহাকরণের খবর, বিভিন্ন তালিকায় শেষ মুহূর্তে কিছু রদবদল হতেও পারে। তবে বিভিন্ন কমিটির শীর্ষে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের বাছাই মোটামুটি চূড়ান্ত। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসার বলেন, “ম্যাডাম এখনও সব তালিকায় স্বাক্ষর করেননি। ফলে তিনি যত ক্ষণ ফাইল না ছাড়ছেন, তত ক্ষণ চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।”
কোনও কোনও মহল থেকে এতৎসত্ত্বেও অভিযোগ উঠছে যে, নতুন কমিটিতে পরিবর্তনপন্থীদেরই রমরমা। কমিটির মাথায় মমতা-ঘনিষ্ঠরাই স্থান পেয়েছেন। কিন্তু সংস্কৃতি জগতের বড় অংশেরই মত হল, যে কোনও সরকারই তার মতো করে কমিটির পুনর্গঠন করে। সেটাই রেওয়াজ। সেখানে নতুন ও পুরনো মুখ মিলিয়ে-মিশিয়ে সবার রংয়ে রং মেশানোর চেষ্টা করেছেন মমতা। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার এই প্রয়াস, তাঁদের মতে লক্ষণীয়। |