আগামী শুক্রবার শপথ নেবেন কংগ্রেসের পাঁচ প্রতিমন্ত্রী। এ দিনই ওই মন্ত্রীদের তালিকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা পড়েছে। রাতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ওই দিন বিকেল তিনটে নাগাদ রাজভবনে শপথ নেবেন মন্ত্রীরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, তাঁদের সঙ্গেই তৃণমূলের এক পূর্ণ মন্ত্রীর শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে কে মন্ত্রী হবেন, তা এখনও চূড়ান্ত করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের পক্ষে এআইসিসি-র সম্পাদক রামচন্দ্র কুন্তিয়া এ দিনই মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে দলের বাকি পাঁচ প্রতিমন্ত্রীর নামের তালিকা দিয়ে যান। তার পরে কুন্তিয়া বলেন, “আমাদের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে দলের পাঁচ মন্ত্রীর তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে জমা দিয়েছি। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদের একটি চিঠিও দিয়েছি।” মন্ত্রীদের কার কার নাম আছে জানতে চাওয়া হলে কুন্তিয়া বলেন, “ওটা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করবেন।”
মন্ত্রীদের কার কার নাম আছে তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেও নানা জল্পনা এ দিন হয়েছে। এমনকী, মন্ত্রীদের নাম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মানস ভুঁইয়াও বলেন, “আমি জানি না।” কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক সুনীল তিরকে, কালিয়াগঞ্জের প্রমথনাথ রায়, সুজাপুরের আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু), মোথাবাড়ির সাবিনা ইয়াসমিন ও বহরমপুরের মনোজ চক্রবর্তীর নাম মন্ত্রীদের তালিকায় আছে।
তবে এ দিন মানসবাবুকে ঘিরে বিভ্রান্তি ও জল্পনা ছড়িয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী কি এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রয়েছেন? এই প্রশ্ন ঘিরে বিভ্রান্তি এখনও বহাল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে মানসবাবু ইস্তফা দিয়েছেন বলে দিল্লিতে কংগ্রেসের হাইকম্যান্ডের এক সূত্রে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতার পদ থেকে আবু হেনাও ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রিসভার এই দুই কংগ্রেস মন্ত্রী সোমবারই সাংগঠনিক পদ থেকে তাঁদের ইস্তফার পত্র কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মানসবাবু অবশ্য কলকাতায় স্পষ্ট দাবি করেছেন, তিনি ইস্তফা দেননি। এই ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে মানসবাবু প্রথমে বলেন, “দলের আমি একজন অনুগত সৈনিক। দলের ভিতরে আমি কী করেছি, না-করেছি তা সংবাদপত্রে বলব কেন?” পরে অবশ্য তিনি জানান, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁর কথায়, “হাইকম্যান্ডের নির্দেশে আমি মন্ত্রী হয়েছি। তবে দলের নীতি হচ্ছে,এক ব্যক্তি, এক পদে থাকবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি হাইকম্যান্ডের কাছে জানতে চেয়েছি আমি কী করব? দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, একজন অনুগত সৈনিক হিসাবে আমি তা মেনে নেব।” তিনি কী চান? মন্ত্রী থাকতে, না দলের সভাপতি থাকতে? মানসবাবুর জবাব, “আমি সাংগঠনিক কাজকেই অগ্রাধিকার দিতে চাই।”
মানসবাবু তবু কিছুটা মুখ খুললেও পরিষদীয় দলের নেতার পদ থেকে ইস্তফার প্রশ্নে আবু হেনা হাসতে হাসতে বলেন, “এই ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করছি না।” বস্তুত, যে কারণে মানসবাবুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে ইস্তফা দেওয়ার কথা উঠেছে, সেই ‘এক ব্যক্তি, এক পদে’র নীতি আবু হেনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা এ দিন বলেন, “হাইকম্যান্ডের তরফে ক’দিন আগেই মানসবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কংগ্রেসের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি অনুযায়ী তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। তা ছাড়া তিনি এখন রাজ্যের সেচ এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মতো কৃষি নির্ভর রাজ্যে তাঁর দফতরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।” তবে হাইকম্যান্ড সূত্রে বলা হয়েছে, মানসবাবুর ইস্তফা এখনও গৃহীত হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বিকল্প নেতা বেছে নেওয়া মাত্রই ইস্তফা গৃহীত হবে। ততদিন মানসবাবু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসে ‘এক ব্যক্তি এক পদে’র যে নীতি আছে তাতে মানস বা আবু হেনা কেউই একই সঙ্গে দলের কোনও পদে বা মন্ত্রিত্বে থাকতে পারেন না। যে কোনও একটা তাঁদের ছাড়তে হবেই।” প্রদীপবাবু জানান, নতুন সভাপতি ঠিক করার ব্যাপারে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে কথা বলতে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় (মিঠু)-সহ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল দিল্লি যাবে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক সূত্রের খবর, সভাপতি পদের জন্য প্রদীপবাবু তো বটেই, মিঠুবাবু, বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী এমনকী, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের নামও আলোচনায় রয়েছে। সব মিলিয়ে সভাপতির পদ নিয়ে কংগ্রেসের চিরকালীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকট। |