আপনার কলমে...
১৭ বৈশাখ ১৪১৯ মঙ্গলবার ১ মে ২০১২


হারিয়ে যাওয়া অচেনায়
চেনা মুখের ভিড় নেই, পরিচিত জগত্ নেই যেখানে— একেবারে অচেনা, অদেখা সেই পরিবেশে একাত্ম হয়ে যাওয়াকেই বোধহয় হারিয়ে যাওয়া বলে। তখন ছোট ছোট না পাওয়ার জন্য আর দুঃখ বোধ থাকে না। কিন্তু অতি সামান্য সব প্রাপ্তি, ভাল লাগা মনের মধ্যে যেন আঁকা থাকে— চিরতরের সঞ্চয় সে সব। প্রতি বছরের একটা সময় আমরা দশ পনেরো দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ি সেই ‘হারিয়ে’ যাওয়ার পথে। তখন আর পরিযায়ী মনকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা যায় না! হিমালয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ডানা মেলে সে উড়ান দিতে চায়। সেখানেই তো আছে অপার্থিব শান্তি, নীরবতা, আদিমতা, অকৃত্তিমতা, মানুষের সরলতা এবং আরও অনেক কিছু, যা কোনও শব্দে প্রকাশ করা যায় না, অনুভব করা যায় শুধু।

আসলে, গরমের ছুটিতে ঠান্ডায় ক’টা দিন কাটাতে অনেকেই বেরিয়ে পড়েন হিমালয়ের উদ্দেশে। অন্য দিকে এই সময়টাতেই রোমাঞ্চ-প্রিয় পর্বতারোহীর দল ঘর ছাড়েন নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়! তাদের মতো আমাদের মনের ভেতরেও রয়েছে ভরপুর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। তাই সহজ পথ ছেড়ে দুর্গম স্থানে পা বাড়ানোয় আমাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি।

এ বারের গন্তব্য কুমায়ুনের জঙ্গল।

মৃগথিনু, থরকট, ভানোটি, দুর্গাকোট... হিমালয়ের হাতছানি
গন্তব্য পাকা হওয়ার পরই অনিন্দ্য আর আমি ঠিক করলাম পিণ্ডারি থেকে কাফনি ট্রেক করব আর একটা রাত অন্তত হিমবাহের কোলে কাটাব। পর্যাপ্ত শীত-বস্ত্র, স্লিপিং ব্যাগ সমেত স্যাক নিয়ে ১৫ দিনের একটা লম্বা ‘ব্রেক’ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কলকাতা ছাড়ার অন্তত ১৪ ঘণ্টা পর কাঠগোদাম স্টেশনে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা একেবারেই ভুলিয়ে দিল যে এটা মে মাস। স্টেশনটা ছোট্ট কিন্তু খুবই ছিমছাম ও সাজানো গোছানো। সকাল ছ’টা বাজে। তখনও শহর জাগেনি ভাল করে। স্যাকগুলো জিপের মাথায় চাপিয়ে জায়গা করে নিলাম ড্রাইভারের পাশে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় মানুষে ভরে গেল জিপটা। সঙ্গের শুকনো খাবার খেতে খেতে সেই ভিড় জিপেই চললাম। ধীরে ধীরে রোদের তাপ আর সেই সঙ্গে গরম বাড়তে লাগল। কিন্তু পাহাড়ি পথের অসামান্য সৌন্দর্য এ সব কষ্ট দূরে সরিয়ে দিল। কুমায়ুনী মানুষদের গল্পে যোগ দিলাম আমরাও।

ভীমতাল পার হয়ে কিছুটা যাওয়ার পর বিনসরের রাস্তা আলাদা হয়ে যায়। এ পথ প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজিয়েছে— ভীষণই সুন্দর— বারে বারে এখানে আসার ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখা যায় না একেবারেই। যখন বাঘেশ্বর পৌঁছলাম তখন প্রায় দেড়টা বাজে। এখানেই সাক্ষাত্ হল নন্দু ভাইয়ার সঙ্গে, আমাদের গাইড— নন্দন দানু। ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবার জিপে উঠলাম। রাস্তা খুবই খারাপ। সং-এ এসে গাড়ি বদল করা হল। আগে এখান থেকেই ট্রেক শুরু হত। তবে আমাদের ট্রেকিং শুরু হবে লোহারখেত থেকে। বাঘেশ্বর থেকে কেএমভিএন বাংলো আসতেই সন্ধে হয়ে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ‘ট্রেক প্ল্যান’ নিয়ে আলোচনা শুরু হল। তবে ক্লান্তিতে জড়ানো সেই আলোচনা দীর্ঘস্থায়ী হল না। কিছু ক্ষণ পরেই রাতের খাবার খেয়ে সোজা বিছানায়।

প্রথম দিনের ডায়েরি
সকালে চটপট তৈরি হয়ে মাথায় টুপি, মুখে ও গলায় সানস্ক্রিন আর স্টিক হাতে যাত্রার সূচনা হল। আজ প্রথম দিন। তাই উৎসাহ একটু বেশিই। যাব ধাকুরি। নয় কিলোমিটার পথের প্রথম সাত কিলোমিটার প্রায় পুরোটাই চড়াই। তার পর ধাকুরি টপ থেকে বাংলো আরও দু’ কিলোমিটার, তবে সে পথ উতরাই। সকাল থেকেই ভীষণ রোদ্দুর আর গরম। জঙ্গলের মধ্যে হাঁটা পথ, কখনও রোদ, কখনও ছায়া। পথে যেতে যেতে প্রচুর রডোডেনড্রন গাছ, কিন্তু ফুলহীন। কোনও কোনও গাছে অবশ্য এক-আধটা ফুল আছে, তবে ফুলভরা সে অপরূপ সুন্দরের খোঁজ আমরা পেলাম না, যদিও এখন তা পাওয়ার কথাও নয়। এক মাস আগে নিশ্চয়ই ফুলে ভরা ছিল এ জায়গা।

আরও এক কিলোমিটার হেঁটে লোয়ার ধাকুরিতে পৌঁছে একটা চায়ের দোকানে পেট ভরে ম্যাগি ও ওমলেট আর প্রাণ ভরে চা খেলাম। দোকানের পাশে একটি নল দিয়ে জল পড়ছে— সে পানীয় যেমন মিষ্টি, তেমনই ঠান্ডা। বোতলে ভরে সেই জলে জিওলিন দিয়ে রাখল নন্দু ভাইয়া।


ধাকুরি টপ-এর পথে
খাওয়া পর্ব শেষ করে উঠব উঠব করছি, এমন সময় চার জন বাঙালি যুবক এসে বসলেন। ওঁরা সুন্দরডুঙ্গা গিয়েছিলেন। আগেই শোনা ছিল, ওই রুটটা বেশ কঠিন। গত ৩-৪ মাস ধরে বই ও ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছি, তারই সুবাদে সুন্দরডুঙ্গার সঙ্গে আমাদের পরিচিতি, খুব সামান্যই। মিনিট পনেরো ওঁদের সঙ্গে কথা বলার পর অনিন্দ্য মত পরিবর্তন করল— পিণ্ডারি নয়, আমরা যাচ্ছি সুন্দরডুঙ্গা। নন্দু ভাইয়া খানিক গাঁইগুঁই করলেও রাজি হয়ে গেল। সে পথে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে জানি না, তবে বুঝলাম আমাদের কাছে এটা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন করে প্ল্যানিং শুরু হল, যদিও সেটা পথ চলতে চলতেই।

একটা জায়গায় বনদেবীর মন্দির দেখে বুঝলাম ধাকুরি টপ পৌঁছে গেছি। প্রণাম সেরে এ বার নামার পালা। ধাকুরি পৌঁছলাম, তখন প্রায় দেড়টা। সামনে মনোমুগ্ধকর সুন্দর দৃশ্য— মাথাটাকে আলতো ভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘোরালে পুরোটা জুড়েই হিমালয়ের উপস্থিতি। মেঘের আড়াল থেকে নন্দাখাত মুহূর্তের জন্য দৃশ্যমান হল। ফের কোথায় হারিয়েও গেল। তাঁবু পাতা হল পাইন-দেবদারুর ছায়ায় ঘেরা সবুজ ঘাসের ময়দানে। এখানে কেএমভিএন, পিডব্লিউডি-এর বাংলো ছাড়াও ‘ফরেস্ট রেস্ট হাউস’ও রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব ক’টির দশা ভগ্নপ্রায়। তবে এখানে খাবার বেশ ভাল।

বিকাল থেকে জমিয়ে ঠান্ডা পড়ল। সোয়েটার, টুপি, জ্যাকেট— আরও অনেক কিছু বেরিয়ে পড়ল ঝোলা থেকে। দিল্লিবাসী একটি অবাঙালি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হল। আগুনের পাশে বসে আড্ডা মেরেই কেটে গেল সন্ধেটা। এখানে সূর্যাস্তের পর সৌরবাতি জ্বলে— তাই দিনে ও রাতে দু’বেলাই সূর্যের আলো! তবে দিন যেমন তাড়াতাড়ি শুরু হয় এখানে, রাত শুরু হয় আবার দেরিতে। ঠান্ডা ক্রমশ বাড়ছে। আটটার মধ্যে রাতের খাওয়া-পর্ব মিটিয়ে ঢুকে পড়লাম স্লিপিং ব্যাগে। অচেনা পরিবেশে যদিও ঘুম এল না সহজে।

দ্বিতীয় দিনের ডায়েরি
ভোরের প্রকৃতি দেখতে সূর্য ওঠার আগেই অনিন্দ্য জাগিয়ে দিল। তাঁবুর বাইরে এসে দেখি, দূরের সাদা পাহাড় যেন আবির খেলায় মেতেছে। এ দিকে নন্দু ভাইয়া গরম চা আর বিস্কুট নিয়ে হাজির। পরোটা তরকারি খেয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ শুরু হল আমাদের আজকের পথ চলা। ধাকুরিতে ইচ্ছে করলে দু’ তিন দিন অনায়াসে নিরিবিলিতে কাটিয়ে দেওয়া যায়। হট্টগোলের দেশ থেকে এই নিরবতার রাজ্যে এসে মন কিন্তু আর ফিরতে চায় না।

আজ বেশির ভাগ পথই উতরাইয়ে ভরা। পথে পড়ল পাহাড়ি গ্রাম ভাগদানু,খরকিয়া। ‘নমস্তে’ বলা গ্রামীণ ছেলেপুলের দলটা সামান্য টফি পেয়েই কী খুশি! আরও একটু এগিয়ে উমলা প্রাথমিক স্কুল। ছুটির পর বাচ্চারা ছুটে ছুটে ঘরে ফিরছে,পরনে ছেঁড়া-ফাটা জামা! মুখে সরলতা মাখানো হাসি! গ্রাম ছাড়িয়ে কিছুটা এগোনোর পরই হঠাৎ জলের শব্দ এল কানে— নীচে তাকিয়ে দেখি বহমান পিণ্ডারি। এতটা রাস্তা নদী-বিহীন! এ বার ক্লান্তি উধাও হল। হাঁটার বেগও একটু বাড়ল কি?


পিণ্ডারি-সুন্দরডুঙ্গা সঙ্গম
একটা চায়ের দোকান থেকে দেখা পাওয়া গেল খাতি গ্রামের, প্রায় ৩ কিলোমিটার চড়াই পথে। তবে আমরা যাব রিটাং, দু’ কিলোমিটার উতরাইয়ে। বেশ কষ্ট হচ্ছে এখন। পা যেন আর চলছে না। খিদেও পেয়েছে। ঘড়িতে দুটো বাজে। একটু এগিয়েই দেখি পিণ্ডারি-সুন্দরডুঙ্গার সঙ্গম। পাহাড়ে আসার এই এক মজা— প্রকৃতি সব কষ্ট চোখের নিমেষে ভুলিয়ে দেয়। এখানে জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজ হচ্ছে। গ্রামের মানুষই কাজে সামিল হয়েছেন। নন্দু ভাইয়ার বাড়িও এখানেই। আমরা যেতেই মহিলা-বাচ্চারা ঘিরে ধরল। চোখে মুখে তাদের তীব্র কৌতূহল। অতিথি আপ্যায়নের জন্য ঘরে তৈরি দইয়ের ছাঁচ নিমেষে ক্লান্তি দূর করল। কয়েক ঘর পরিবার নিয়ে ছোট্ট গ্রাম এই রিটাং— সাধারণ বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুত্ পরিষেবার কথা ছেড়েই দিলাম, মোবাইল পরিষেবাও পাওয়া যায় না। খাতি যেতে হয় টেলিফোন করার জন্য। স্কুলও সেই খাতিতে।

বিকেলে সঙ্গম দেখতে গিয়ে রামদানা খেত দেখলাম। একটা সময় মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হল, চলল রাতভর।

তৃতীয় দিনের ডায়েরি
সকালে সব্বাইকে নিয়ে অনেক ছবি তোলা শেষে, ফেরার পথে ফের দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলাম রিটাং থেকে। আজ পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে জাটোলি— সাড়ে ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় এই ‘ট্রেক রুটে’র শেষ গ্রাম। জলবিদ্যুত্ প্রকল্পের একটি এক ফুট চওড়া পাঁচিলের উপর দিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার হাঁটা পথ। ট্র্যাপিজের খেলোয়াড়দের মতো সেই পাঁচিলের উপর দিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। সামনে তুষারশুভ্র হিমালয়। আর নীচে প্রবল বেগে বয়ে যাচ্ছে সুন্দরডুঙ্গা। ভয়ংকর সুন্দর এই এগিয়ে চলা!


সবুজ গ্রাম জাটোলি
আজ সঙ্গে নন্দু ভাইয়া ছাড়া আমাদের সঙ্গে রয়েছেন তিন জন পোর্টার— রেশন আর তাঁবু নিয়ে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাস্তা আর এই সফরে সর্ব ক্ষণের সঙ্গী সুন্দরডুঙ্গা নদী। পথে দু’ একটা খুব ছোট গ্রাম পড়ল। ধীরে সুস্থে হেঁটেও দুপুর ১২টা নাগাদ জাটোলি পৌঁছলাম। জাটোলি কথার অর্থ যদিও আমার জানা নেই তবে ‘সবুজ গ্রাম’ নামকরণ করার ইচ্ছা হচ্ছে। একটা প্রাথমিক স্কুল রয়েছে এখানে— বেশ সাজানো। বেশির ভাগ বাড়িই পাকা আর এরা নিজেরাই চাষবাস করে। তবে সবচেয়ে আনন্দের, বিএসএনএল-এর টাওয়ার আছে এখানে।

এই পথে ‘ট্রেকারস’ খুব কম আসে, তাই থাকার ব্যবস্থা গাইডদের বাড়িতেই। আমরা যেমন থাকব গ্রামের পুরনো ও পরিচিত গাইড পুস্কর সিং-এর বাড়িতে।

অভিযান শুরু কাল থেকে।

চতুর্থ দিনের ডায়েরি
এ পথে খাবার দোকান, মানুষ, ঘোড়া... কিছুই পাওয়া যায় না। তাই আজ সকাল থেকেই নন্দু ভাইয়ার ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে। সকাল ছ’টা নাগাদ চা খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। আজ হাঁটতে হবে দীর্ঘ পথ, তাই পা চালিয়ে যেতে হবে প্রথম থেকেই। তা ছাড়া আবহাওয়াও ঠিক ভাল মনে হচ্ছে না। পথের শুরুতে কিছু ছোট গ্রাম, লোকজন আর ঘোড়াওয়ালা চোখে পড়লেও, আস্তে আস্তে তা মিলিয়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় কিছু অল্পবয়সী ছেলের দেখা পেলাম, তাদের পিঠে ব্যাগ। ঘাসের মতো কোনও গাছের খোঁজে বেরিয়েছে। জানলাম, তার স্থানীয় নাম ‘আশা গম্বু’— বিশ্ব বাজারে দাম প্রচুর। লাখ লাখ টাকায় সেই গাছ বিদেশে রপ্তানি হয়। হিমালয়ে কত কী যে লুকিয়ে আছে!


কাঠের পুল
প্রথম এক দু’ কিলোমিটার একসঙ্গে চলার পর, যে যার গতিতে এগিয়ে চললাম। কোথাও খাড়াই পাহাড়, তার পর একটু সমতল, কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে ঝরনা, তার উপরে নড়বড়ে কাঠের সেতু... একই সঙ্গে চলছে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে ফোকাস ঠিক করে শাটারে চাপ দেওয়ার কাজ। মাঝে মাঝেই তাই বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি।

দূরে একটা বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে ভাবলাম এ বার চা খেয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু না! এক মেষপালক সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। অগত্যা, মুখে লঞ্জেন্স পুরে এগিয়ে চললাম। জায়গাটার নাম দুনিয়া-ঢং। এখান থেকে আরও সাত কিলোমিটার গেলে ‘ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড’। তবে দু’ কিলোমিটার পর থেকে আর কোনও রাস্তা দেখা গেল না। চার পাশে শুধুই বোল্ডার। খানিকটা দূর দিয়ে বয়ে চলেছে সুন্দরডুঙ্গা আর পাহাড় থেকে ছোট-বড় নানা জলধারা নেমে সেই নদীতে মিশেছে।

সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল, এ বার বৃষ্টি শুরু হল। একটা বড় পাথরের আড়ালে প্রায় লুকিয়ে পড়লাম। আর সেই ফাঁকে পরোটা ও আলুর তরকারি খাওয়া হল। আধ ঘণ্টা পর বৃষ্টি কমল। হাঁটা শুরু হল আবার। রাস্তা যেন আরও দুর্গম হয়ে উঠছে! ব্যাগ, মুভি ক্যামেরা, সবই নন্দু ভাইয়াকে দিয়ে দিলাম। এই পথে গাইড ছাড়া আসাই উচিত না। বেশ খানিকটা পথ লাল পাথরের। মনে হচ্ছে কেউ যেন পাথরের উপর লাল রং লেপে দিয়েছে। বোল্ডার বিছানো রাস্তা দিয়েই চড়াই উঠতে হচ্ছে। এমনই পথ, বেসামাল হওয়াটা যেন কোনও বিষয়ই নয়। অনিন্দ্যর পা পিছলে গেল হঠাত্, বেশ চোট লেগেছে। এ পথে এসে কতখানি ঝুঁকি যে আমরা নিয়েছি, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি! তবে, যত এগোচ্ছি প্রকৃতি ততই মুগ্ধ করছে তার রূপে। নাম না জানা পাখির ডাক, বুনো ফুলের গন্ধ সব কিছুই এই ভয়ংকর পথের অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে।


বোল্ডার বিছানো রাস্তা
মাইকতলি হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া মাইকতলি নালা আর সুখরাম গুম্ফা থেকে আসা সুখরাম নালা— এ দুইয়ে মিলেমিশে সুন্দরডুঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছে। ‘ডুঙ্গা’ শব্দের অর্থ পাথর। আর তা থেকেই এই পাথুরে উপত্যকার নাম ‘সুন্দরডুঙ্গা’। জায়গাটা যেমন শান্ত তেমনই ভয়ংকর। উপত্যকার একটা ছোট্ট গ্রাম কাঁঠালিয়া যখন পৌঁছলাম, তথন আমাদের ঘড়ি বলছে বিকেল পাঁচটা বাজে। তত ক্ষণে ঝড়, বৃষ্টি আর ঠান্ডা হাওয়ায় আমাদের অবস্থা বেশ কাহিল! এখানে গরম স্যুপ আর আলুভাজা খেয়ে একটু আরাম পেলাম যেন।

এক মেষপালকের ঘরে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়েছে। ঘর বলতে খড়ের চাল আর পাথরের দেওয়াল। সারা সন্ধে কাটল আগুনের পাশে, গল্প করে। ভারী অদ্ভুত পরিবেশ— এই সব মানুষগুলো, যারা আধুনিকতার জটিলতা থেকে দূরে, কষ্টকর অথচ সাদাসিধে জীবনযাপন করে, তাদের সঙ্গে গল্প করতে কি যে ভাল লাগছিল! বৃষ্টি কখন থেমে গেছে খেয়ালই করিনি। রাতের আকাশ দেখে মনে হল হাজার বাতি জ্বালানো হয়েছে উপত্যকা জুড়ে।

প্রায় খোলা আকাশের নীচেই শোয়ার ব্যবস্থা। পোকামাকড়, জীবজন্তু— সব কিছুরই ভয়ে কাঁটা হয়েই শুয়ে পড়লাম। ভয় কাটাতে, জোর করে ভাবার চেষ্টা করছি কালকের সকালটা খুব সুন্দর হবে।

পঞ্চম দিনের ডায়েরি
আজ সকালে আকাশের মুখ দেখে মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আজ ছ’ কিলোমিটার দুরূহ চড়াই অতিক্রম করতে হবে। ঠিক সাড়ে ছ’টায় হাঁটা শুরু করব। কিন্তু আবহাওয়া যে প্রতিকূল! তা হলে কি যাওয়া হবে না? কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। হঠাত্ নন্দু ভাইয়ার ডাকে বাইরে এসে দেখি কালো মেঘ সরে গিয়ে নীল আকাশে সূয্যি মামা হাসছেন। একেই বলে প্রকৃতির খেয়াল!

যাত্রা শুরুর দু’ তিন কিলোমিটার পরেই যেন রাস্তা কোথায় হারিয়ে গেল। রডোডেনড্রন গাছের ফাঁক দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে অনেকটা পথ যেতে হল। ভাবা যায় না! তবে শেষ তিন কিলোমিটার পথ হেঁটেছি কোনও এক অদৃশ্য শক্তিকে ভর করে। চার পাশের প্রাকৃতিক শোভার প্রায় কিছুই চোখে পড়েনি। ‘বেলনি টপে’ পৌঁছে মনে হল এত কষ্ট শেষমেশ সার্থক হল, তাই শুধু নয়, অসম্ভব বলেও যে কিছু নেই তাও যেন ঠেকে শিখলাম। এখন আমাদের সঙ্গে মেঘমুক্ত নীল আকাশ, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচা আর চার পাশে হিমালয়। এতটাই উঁচুতে রয়েছি আমরা, মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় মৃগথিনু, থরকট, মাইকতলি... পিকগুলো। সব ক’টির উচ্চতা ৬০০০ মিটারের বেশি। ক্যামেরা নিয়ে ভাবছি কী ছবি তুলব— যে দিকে তাকাই সে দিকেই চোখ আটকে যায়। পাহাড়ের গা বেয়ে হাজার হাজার ভেড়া চরছে। মেষপালক আমাদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন।

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচা আর চার পাশে হিমালয়

পাহাড়ের গায়ে ভেড়ার পাল
শারীরিক সব কষ্টের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। নন্দু ভাইয়া ফেরার কথা বলায় মনে পড়ে গেল। কিন্তু আজ ফেরা আর সম্ভব নয়! এসে যখন পড়েইছি তখন দিনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। তাই পোর্টার তিন জন টেন্ট, স্যাক আর রেশন আনতে আবার নীচে চলে গেলেন। আমাদের জিনিসপত্র এসে পৌঁছতে ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। হঠাৎ আকাশ কালো করে মেঘ, তার পরই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি শুরু হল। সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া।

মেষপালকের তাঁবুতে আশ্রয় নিলাম। তাঁর দু’দিন ধরে ধুম জ্বর। আমাদের সঙ্গে যে ওষুধ ছিল, তাই দিলাম ওঁকে। বছরের ৫-৬ মাস এখানে কাটে ‘ভেড় বখরি’দের সঙ্গে। আপনজনদের ছেড়ে এই দুর্গম জায়গায় কেটে যায় বছরের অর্ধেকটা সময়। সেই অক্টোবর মাসে নীচে যাওয়া! এই ক’মাস ভেড়ার দল এখানে খাওয়াদাওয়া করে নিজেদের ‘সৌন্দর্য’ বাড়ায়। শীতে তাদের লোম দিয়ে বস্ত্র-কম্বল বানানো হয়।

খিদে আর ক্লান্তিতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙার পর দেখলাম, পড়ন্ত বিকেলের আলোয় উপত্যকা এক অন্য রূপে সেজেছে। ভেড়ার দল ফিরে আসছে,সঙ্গে দুটো কালো পাহারাদার কুকুর, গলায় ঘণ্টা বাঁধা।

অন্ধকার নামতেই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ল। কোনও রকমে রাতের খাবার খেয়ে স্লিপিং ব্যাগে ডুব দিলাম।

ষষ্ঠ দিনের ডায়েরি
আজ সকালের আকাশ মেঘমুক্ত। দিনের প্রথম আলোয় মৃগথিনু, মাইকতলি, থরকট, ভানোটি, দুর্গাকোট, আনন্দ ও অনন্ত পিকগুলি আলোকিত। স্বর্গীয় সে দৃশ্য এখনও চোখ বুজলে দেখতে পাই!


কালো পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট হিমবাহ
চা খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম— গন্তব্য দেবীকুণ্ড। প্রথমেই একটা খাড়া চড়াই রাস্তা ধরে ওঠার পর দূরের শৃঙ্গগুলিও যেন নাগালে এসে গেল। রডোডেনড্রন গাছে হালকা গোলাপি, বেগুনি... ফুল দেখতে পেলাম। দূরের একটা কালো রকি পাহাড়কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। ১৪ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় রয়েছি, গাছপালা নেই বললেই চলে। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। এ পথে আমরা ছাড়া আর কোনও জনপ্রাণী নেই। নির্জনতা যেন মাঝে মাঝে অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অপার্থিব সৌন্দর্যও হাতছানি দিচ্ছে আমাদের— তাকেই বা উপেক্ষা করি কী করে! আর কত সময় লাগবে? নন্দু ভাইয়া হাসতে হাসতে লজেন্স এগিয়ে দিয়ে নানা রকম গল্প শোনাতে লাগল। এ ক’দিনে সারা ক্ষণের এই সঙ্গী আমাদের ভাল বন্ধুও হয়ে গেছে। হঠাত্ই দূরে দেখা গেল সুখরাম গুফা, এর বেশ খানিকটা অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। আগে মেষপালকরা ভেড়া নিয়ে এখানে রাত কাটাতেন।

কয়েক বছর আগে একদল পর্বতারোহী এখানে আসে। রাতে তারা এই গুফায় নাচ-গান, হৈ চৈ শুরু করলে গাইড নিষেধ করে। কিন্তু তারা তা না শুনেই উদ্দামতা চালিয়ে যায়। শান্ত দেবভূমিকে অপবিত্র ও অশান্ত করায় দেবী রুষ্ট হন। পর দিন সকালে সকলের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও গাইড কিন্তু বেঁচে যায়। নন্দু ভাইয়ার গল্প শুনে একটু শিহরিত হলাম। আরও এক দিন লাগবে সুখরাম গুফা দেখার জন্য। আমরা যে ‘রুটে’ যাচ্ছি সেখান থেকে আরও কঠিন পথ গেছে নাগকুণ্ড। নাগকুণ্ড থেকে কানাকাটা পাস হয়ে জাটোলিতে নামা যায়। তবে এ পথ সাধারণ পর্বতারোহীদের জন্য নয়।


দেবীকুণ্ড সরবর
দূর থেকে কালো পাহাড়ের গায়ে যাকে একটি সাদা চকের দাগ মনে হচ্ছিল, কাছে এসে দেখি সেটি একটি ছোট্ট হিমবাহ। আছাড় খেতে খেতে বেঁচে গেলাম কোনওক্রমে। এক জায়গায় পা রাখা যাচ্ছে না, শুকনো ঝুরো মাটির উপর দিয়ে চড়াই। দু’জনেই নন্দু ভাইয়ার হাত ধরে উপরে উঠলাম। তার পর হলুদ ঘাসের উপর দিয়ে কিছুটা পথ। এ দিকে আবহাওয়া ফের খারাপের দিকে। আকাশে কালো মেঘ জমছে, কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। এ বার শক্ত বরফের রাস্তা হেঁটে শেষ চড়াইটুকুও পেরোলাম। কষ্ট সত্যিই সার্থক! তিন দিকে বরফাবৃত পাহাড়, আর তারই মাঝে স্বচ্ছ জলের সরবর দেবীকুণ্ড। এখান থেকে এক দিকে নেমেছে ২২৩২০ ফুট উঁচু মাইকতলি পিক থেকে মাইকতলি হিমবাহ। অন্য দিকে পানওয়ালিদ্বার ২১৮৬০ ফুট, বালজৌরি কল ১৯৮৫৭ ফুট। আর সামনে রকি পিক। এতটা ভাবা ছিল না, তাই অবাকের পর অবাক হচ্ছি!

আমরা পুজো দিলাম আর ভিডিওগ্রাফি করল নন্দু ভাইয়া। এখানে এসে এটাই মনে হচ্ছে সর্বশক্তিমান আজও আছেন। বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য জলের গভীরতা কমে গেছে তবে স্বচ্ছতা আজও দেখার মতো! শুনলাম সর্ব ক্ষণ একটি পাখি এখানে পাহারায় থাকে।

ঘণ্টা খানেক সময় কাটিয়ে কুণ্ডের জল মাথায় দিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। এ বার আর ভয় নয়, জয়ের আনন্দ মন জুড়ে। দুপুর আড়াইটে বাজল তাঁবুতে ফিরতে। এক পেট খিচুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সপ্তম দিনের ডায়েরি
আজ জাটোলি পৌঁছতে হবে। তাই ভোর ৫ টার আগেই ঘুম ভেঙে গেল। শেষবারের মতো খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির মায়াময় রূপ দু’চোখ ভরে দেখে নিলাম। উপত্যকা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। ফেরার সময় প্রায় পুরোটাই উতরাই। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় সারাটা রাস্তাই ঝড় আর বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে বিকেল ৪ টে নাগাদ জাটোলি পৌঁছলাম। ব্যাগের বেশির ভাগ জামাকাপড় ভিজে গেছে। কোনও রকমে একটা শুকনো জামা জুটল। তাই পরে নিয়ে, খেয়েদেয়ে লম্বা টানা ঘুম দিলাম সব্বাই। অনেক দিন পর ভাল ঘুম হল!

শেষের দিনের পাতা
সকালে উঠে দেখি দূরের সব পাহাড় বরফে ঢেকে গেছে। তবে আকাশের গায়ে জড়ানো মেঘের কালো চাদর সরে যায়নি এখনও। বেশি দেরি না করে জাটোলি থেকে রিটাং, তার পর খাতি গেলাম। পিণ্ডারি যাওয়ার পথে এই গ্রাম।

দিন দশেক পাহাড়ে ঘোরাঘুরির পর রোদে বসে পিণ্ডারির উদ্দেশে যাত্রা করা দলবদ্ধ মানুষদের দেখাটা বেশ উপভোগ্য। বিকেলে গ্রামটা ঘুরে দেখলাম। দূরের পিণ্ডারি হিমবাহ ভীষণ ভাবে টানছে। কিন্তু আর নয়, এ বারে সমতলে ফেরা,ঘরে ফিরতে হবে যে!

হিমালয়ের তরফ থেকে ফের আহ্বানের অপেক্ষা নিয়ে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে পথ যাওয়ার সময় ক্লান্তিকর লাগছিল, এখন সেই পথ, সেই জায়গা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।

আবার আমরা পরের ‘ট্রেক’-এর পরিকল্পনা করা শুরু করেছি। নন্দু ভাইয়ার বাড়ি থেকে জরুরি ডাক আসায় সে আমাদের বিদায় জানায়। আমাদের সঙ্গে অন্য এখন গাইড। সুন্দরডুঙ্গা, দেবীকুণ্ড দর্শনের আনন্দ এখনও মন জুড়ে।

ধাকুরিতে রাত কাটিয়ে পর দিন লোহারখেত, তার পর জিপে বাঘেশ্বর। সন্ধ্যায় গোমতি-সরযূর নদী সঙ্গমে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির দর্শন করে এ বারের মতো কুমায়ুন ভ্রমণ সমাপ্ত। কাল কলকাতার উদ্দেশে রওনা।

বরফে ঢাকা পাহাড় চূড়া

এক কথায়: পাহাড়ে আসার এই এক মজা—
প্রকৃতি সব কষ্ট চোখের নিমেষে ভুলিয়ে দেয়।
 
লেখিকা গৃহবধূ। বেশ কিছু বছর কেটেছে মথুরায়, তবে বর্তমানে হলদিয়ায় থাকেন। অবসর সময় মানেই ইন্টারনেট সার্ফ, বই পড়া আর গান শোনা। তবে এরই ফাঁকে চলে লেখালেখির কাজ। নেশা বলতে, বেড়ানো। বিশেষ করে পাহাড়। দু’তিন দিনের ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়েন স্যাক নিয়ে। ট্রেকিং-এর মতো আনন্দ আর বোধহয় কিছুতেই নেই। নতুন রেসিপি ট্রাই করার পাশাপাশি ভ্রমণ সংক্রান্ত বই, ম্যাগাজিন পড়তেও ভালবাসেন।

ছবি: লেখক

এই লেখকের আরও ভ্রমণকথা:
‘হর কি দুন’ ভ্যলি অফ গড্স
সান্দাকফুর পথে

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল পুরনো সংস্করণ