দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ এপ্রিল ১৯৬২ থেকে ২০ মে ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

কলিকাতা, শনিবার, ৮ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (১লা বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, APRIL 21, 1962
• কলিকাতা ও সংলগ্ল এলাকায় কয়েকটি ধানকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম: দুইটি কারণে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান খাদ্যশস্য চাউলের বাজারে সঙ্কটের ছায়া পড়িয়াছে। একদিকে চাউলের উর্ধ্বমুখী দর বর্ষাকালে আরও বাড়ার আশঙ্কা রহিয়াছে, অন্যদিকে ধানের সরবরাহের অভাবে কলিকাতা ও আশেপাশের কয়েকটি ধান-কল বন্ধ হইয়া যাওয়ার উপক্রম হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ধানকলের মুখপাত্র আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলেন যে, ইতিমধ্যে ধান সরবরাহের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না লইলে তাঁহারা হয়ত শীঘ্রই ধানকলগুলি বন্ধ করিয়া দিতে বাধ্য হইবেন।
কলিকাতায় কালবৈশাখী: শুক্রবার বিকালে ঘন্টায় বিয়াল্লিশ মাইল বেগে ঝড়ের তান্ডবের পর কলিকাতায় যে বর্ষণ শুরু হয় তাহা কিছু পরে দমিয়া যায় বটে, কিন্তু অধিক রাত্রি পর্যন্তও মাঝে মাঝে ঝির ঝির বৃষ্টি পড়িতে থাকে। নগরজীবনের ‘ট্রাডিশন’ বজায় থাকিয়াছেরাস্তায় জল জমিয়াছে, মার্কামারা বটগুলিতে সাময়িকভাবে ট্রাম চলাচল বন্ধ হইয়াছে, আর বাস নির্দিষ্ট রুট ছাড়িয়া অন্যপথে ঘুরিয়া চলিয়াছে। এইদিন কালবৈশাখীর ফলে শহরের তাপমাত্রা ১৮.৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট কমিয়া যায়। ঝড় প্রায় আড়াই ঘন্টা ছিল। রাত্রি ৮টা পর্যন্ত
কলিকাতার বাজারে চাউলের মণ-দর
চালের রকম দর (নঃ পঃ)
এ বছরের গত বছরের
চামরমণি ২৮.৭৫ ২৬.৩১
সীতাশাল ২৮.০০ ২৫.০০
শশী বালাম ২৫.৩৭ ২১.১২
পাটনাই ২৫.০০ ২১.১২
কলমা ২৫.০০ ২০.৫০
মোটা ২২.৫৭ ১৮.৫০
আলীপুরের আবহাওয়া অফিসে ০.৫৭ ইঞ্চি বারিপাত রেকর্ড করা হয়।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১১ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (৪ঠা বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, APRIL 24, 1962
• জাতীয় সপ্তাহ পালনের সমাপ্তি দিবসে শ্রদ্ধা-নিবেদন: গত ১৩ই এপ্রিল, রাত্রিতে ৫, চেতলা রোডে ইন্ডিয়া টু-মরো ক্লাব, জনপরিষদ ও আর্বস্থান সোস্যাল সেন্টারের উদ্যোগে জাতীয় সপ্তাহের পরিসমাপ্তি দিবসে জালিয়ানওয়ালাবাগ শহীদদের প্রতি ও শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক স্বর্গত প্রফুল্ল সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-সদস্য এবং আশুতোষ কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নীরদ ভট্টাচার্য পৌরোহিত্য করেন। প্রফুল্ল সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষত, সাহিত্যে, ধর্মে ও ছোটদের খেলাধূলা ও শরীর চর্চায় বিশেষ সহায়তার কথা উল্লেখ করিয়া ডাঃ এস এন বসু, শ্রী পি পি মুখার্জি বার-এট-ল, শ্রীবীরেন বসু প্রভৃতি বক্তৃতা করেন। অধ্যাপক ভট্টাচার্য তাঁহার ভাষণে সকলকে জালিয়ানওয়ালাবাগের শহীদদের প্রতি এবং সে যুগের শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক প্রফুল্ল সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করিতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন যে, জালিয়ানওয়ালাবাগে যে অত্যাচার হইয়াছিল, তাহার যথাযথ প্রচারের জন্য সমস্ত বাংলাকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রফুল্ল সরকারের লেখনী যে কতখানি কাজ করিয়াছিল তাহা সে যুগের সকলেই জানেন। শুধু তাহাই নহে, ধর্মে, সাহিত্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বর্গত সরকারে অবদান যে কতখানি তাহা আজ তীব্রভাবে অনুভূত হইতেছে। তাঁহার নিরলস সাধনা ও সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন সমস্ত বাঙ্গালীর আদর্শভাবেস্বরূপ এবং তাহা সকলের অনুসরণ করা কর্তব্য বলিয়া তিনি মনে করেন।
বিচিত্র সংগ্রহশালা: জনৈক বাঙ্গালি স্থপতি পশ্চিমবঙ্গের ৭০টি শিল্প-প্রতিষ্ঠানে প্রস্তুত নানাপ্রকার দ্রব্যের ছোট ছোট সব মডেল নির্মাণ করিয়াছেন। জিনিসগুলি যথাযথ এবং এতই ছোট ছোট যে এক বর্গফুট স্থানের মধ্যে সেগুলি রাখা সম্ভব হইয়াছে। চারিদিক কাঁচ দিয়া ঢাকা এই সংগ্রহশালাটিকে প্রকৃত সংগ্রহশালারই একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যায়। সোমবার বিকালে এই ক্ষুদ্র সংগ্রশালাটিকে ইহার নির্মাতা শ্রীবিনয়ভূষণ দে সরকারী শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরখানায় (৪৫, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউতে) মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায়ের হাতে অর্পণ করেন। ঐ ‘ক্ষুদে সংগ্রশালাটি’ শিল্পধর্মের উৎকৃষ্ট এক নিদর্শনস্বরূপ সরকারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে রাখা হইবে।

কলিকাতা, বুধবার, ১২ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (৫ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, APRIL 25, 1962
নৌ-বাহিনীর বিদায়ী অধ্যক্ষ ভাইস-এ্যাডমিরাল কাটারী ও
তাঁহার পত্নী মঙ্গলবার দমদম বিমান বন্দরে উপনীত হইলে কম্যান্ডার
চ্যাটার্জী ও তাঁহার পত্নী তাঁহাদিগকে অভ্যর্থনা করিতেছেন। বিমান
বাহিনী এয়ার কম্যান্ডার এম এম ইজ্ঞিনীয়ারকএ্যাডমিরাল
কাটারীর বামে দেখা যাইতেছে।
২২৩বি, কর্নওয়ালিস স্ট্রীটে (ঠনঠনে কালীতলা) ‘দৃষ্টিদানের’
চক্ষু চিকিত্সক ডাঃ ঘোষ কলিকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ৪টি ফ্রী বেডের জন্য হাসপাতালের
সেক্রেটারী ডাঃ এম এন সরকারের হস্তে ২০,০০০ (বিশ হাজার)
টাকার চেক দিতেছেন।


কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (৬ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 26, 1962
• শিয়ালদহ-র সম্মুখে ওভারব্রীজ: শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে রাস্তা পারাপার হইতে পথিক এবং রেলযাত্রীরা যে অসুবিধা ভোগ করেন, তাহা দূর করার উদ্দেশ্যে ঐ স্টেশনের সম্মুখে রাস্তার উপর এক ‘ওভার-ব্রীজ’ অথবা ‘ফুট-ব্রীজ’ নিমার্ণের প্রস্তাবটি আবার উঠিয়াছে। কলিকাতা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং সংস্থা ঐ সেতু নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করিতেছেন বলিয়া জানা গিয়াছে।
হাওড়ার দক্ষিণে গঙ্গাপুল: কলিকাতা নগরীর যানবাহন চলাচল সমস্যার আংশিক সমাধান এবং গঙ্গার পশ্চিমকূলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গঙ্গার উপর আরেকটি সেতু হাওড়া পুলের দক্ষিণে নিমার্ণের প্রস্তাব হইয়াছে। প্রকাশ, কলিকাতা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং সংস্থা ঐ সম্পর্কে আপাতত যে অনুসন্ধান চালাইয়াছেন, সেই অনুসারে হাওড়া পুলের দক্ষিণে এবং গঙ্গার সহিত আদি গঙ্গার সংযোগস্থাপনের এক মাইল উত্তরে উহা নির্মাণের স্থান নির্দিষ্ট করার এক প্রস্তাব হইয়াছে। উহার ফলে সরাসরি বোম্বাই ট্রাঙ্ক রোডের সহিত কলিকাতার যোগাযোগ করা এবং স্থলপথে হলদিয়া বন্দরে যাওয়ার সুবিধা হইবে বলিয়া আশা করা যায়। ঐ সমীক্ষার জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক প্রায় ১৫ হাজার ডলার দিয়াছেন।

কলিকাতা, শুক্রবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (৭ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, APRIL 27, 1962
• রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কবিগুরু জন্মবার্ষিকী দিনে প্রতিষ্ঠা: আগামী ২৫শে বৈশাখ (৮ই মে) রবীন্দ্রনাথের ১০১তম জন্মবার্ষিকী দিবসে ‘রবীন্দ্র ভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হইতেছে। ঐ সংক্রান্ত আইনটি অবশ্য আগেইসম্ভবত ১লা মে চালু হবে। তবে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, এখন ‘রবীন্দ্র ভারতী’র প্রতিষ্ঠা হইলেও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৃতপক্ষে চালু হইতে এবং পঠনপাঠন শুরু হইতে দেরী আছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন কমিশনার শ্রীহিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ‘রবীন্দ্র ভারতী’র উপাচার্যরূপে প্রস্তাবিত হইয়াছে। গত বছর ২৫শে বৈশাখ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহেরু জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী প্রাঙ্গণে যখন ‘রবীন্দ্র ভারতীর শিলান্যাস করেন তখন অবশ্য আশা করা হইয়াছিল যে শতবার্ষিকী বছরের মধ্যেই (১৩৬৯ সালের ২৫শে বৈশাখ) ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিরক্ষার স্থায়ী ব্যবস্থার পত্তন হইবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরও একটি শতবার্ষিকী পরিকল্পনা অর্থাৎ জাতীয় নাট্যশালা ‘রবীন্দ্র-স্মরণী’র দ্বারও শতবার্ষিকী বছরের মধ্যেই উদ্ঘাটিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু ঐ নাট্যশালা নির্মাণের কাজও পিছাইয়া আছে এবং শেষ হইতে আরও কয়েকমাস লাগিবে বলিয়া জানা গিয়াছে। সরকারী পরিকল্পনা অনুসারে এই বছরের মধ্যে রবীন্দ্র রচনাবলীর সবকয়টি খন্ড প্রকাশও সম্ভব হয় নাই। এ পর্যন্ত মাত্র ৫ খন্ড প্রকাশিত হইয়াছে। সম্ভবত আর একটি ২৫শে বৈশাখ নাগাদ বাহির হইবে। রবীন্দ্র ভারতীর ঐ মুখপাত্র আরও বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ ইত্যাদির প্রয়োজনে জোড়াসাঁকোতে আরও নূতন ভবন নির্মাণ করিতে হইবে। রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক ভবনে থাকিবে রবীন্দ্র সংগ্রশালা। তিনি বলেন, পৈতৃক ভবনের সকল অংশ সরকার শীঘ্রই দখল করিতে পারিবেন বলিয়া আশা করা যায়।
• কলিকাতার বৃহৎ কলেজগুলির শোচনীয় আর্থিক দুর্দশা: ‘‘পরিস্থিতির যদি কোন উন্নতি না হয়, তাহলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সাত-সাতটা কলেজই বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা ভেবেছি, কলেজগুলির গেটে তালা লাগিয়ে সরকারী কর্তৃপক্ষের হাতে চাবি তুলে দিয়ে বলব, ‘এবার আপনারা যা-হয় একটা করুন।”....কর্তাদের কথামত চলতে গিয়ে আমরা ৩ লক্ষ টাকা দেনা করেছি, জানি না কবে কিভাবে এই দেনা শোধ করতে পারব!”......আমরা তো বাকিতে যন্ত্রপাতি কিনে এতদিন কাজ চালিয়ে এসেছি, এখন সেসব পথও বন্ধ হয়ে গেছে।” কলিকাতার বড় বড় প্রায় সব কলেজেরই শোচনীয় আর্থিক দুর্দশা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থ-সাহায্যের ভরসায় নূতন নূতন সব সুপারিশ কার্যকরী করিতে গিয়া কলেজগুলি এখন মহা ফ্যাসাদে পড়িয়াছে। গত প্রায় তিন বছর ধরিয়া কাজ আগাইয়াছে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচা হইয়া গিয়াছেকিন্তু এখনও সরকারী সাহায্যের নামগন্ধ নাই। আসে আসে করিয়াও দিনের পর মাস এবং মাসের পর বৎসর চলিয়া গেলকিন্তু রাজকোষের টাকার মুখ আর দেখা যায় না। বৃহস্পতিবার কলিকাতার কয়েকটি বড় বড় কলেজের কর্তৃপক্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করিয়া জানিলাম, ইউ জি সির টাকার জন্য সকলেই এখন অধীর আগ্রহে দিন গুনিতেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অবশ্য ইতিমধ্যেই টাকা মঞ্জুর করিয়া দিয়াছেন। কমিশনের ১৯৬০-৬১ সনের বিবরণীতে বলা হইয়াছে, ৬৬৮টি অনুমোদিত কলেজে তিন বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু হইয়াছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাতে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। অধ্যাপকদের বেতন বৃদ্ধি বাবদ মঞ্জুরী কমিশনের সাহায্যের টাকাও আলাদা করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

কলিকাতা, রবিবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (৯ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, APRIL 29, 1962
• মোহনবাগান সপ্তমবার চ্যাম্পিয়ন: ইষ্টবেঙ্গলের সহিত গোলশূন্যভাবে খেলা শেষ। গত দুবছরের চ্যাম্পিয়ন ইষ্টবেঙ্গলের কাছ থেকে মোহনবাগান ক্লাব প্রয়োজনীয় এক পয়েন্ট সংগ্রহ করে সপ্তমবার প্রথম ডিভিসন হকি লীগ চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। শনিবার অপরাহ্নে ক্যালকাটা মাঠে জনপ্রিয় এই দুই ক্লাবের খেলা দেখার জন্য দর্শক আসন পরিপূর্ণ ছিল। মনে হয়, বহুদিন যাবত্ হকি মাঠে এরকম দর্শক সমাগম দেখা যায়নি। তবে খেলার মান সাধারণ স্তরের ও কোন দলই গোল করিতে পারেনি। খেলা থেকে দশ হাজার টাকা সংগৃহীত হয়েছে।
• জাল আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট অফিস: কলিকাতা পুলিশের জালিয়াতি নিরোধ বিভাগ শনিবার জাল আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের পুরাদস্তুর একটি অফিসের সন্ধান পাইয়াছে বলিয়া জানা যায়। পুলিসীসূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, পাসপোর্টের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু বেমালুম জাল করার ব্যবস্থা সেখানে ছিল। দেশ ও বিদেশের সরকারী সীলমোহর ও পাঞ্চিং মেশিন হইতে সুরু করিয়া ছাপানো ফর্ম,

প্রথম ডিভিশন হকি লীগ
চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান দল।
ফটো: আনন্দবাজার

কর্তৃপক্ষ সই, পুলিস রিপোর্ট এমন কি জেলা শাসকের সুপারিশ পর্যন্ত। একজনের বদলে ইচ্ছামত অন্য লোককে বিদেশে পাঠাইবার নিখুঁত ব্যবস্থা।

কলিকাতা, সোমবার, ১৭ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (১০ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, APRIL 30, 1962
• কলিকাতার ফুটপাথে আবার নিরন্ন মানুষের ভিড় আরম্ভ: কলিকাতার ফুটপাথে নিরন্ন মানুষের ভিড় শুরু হইয়াছে। অবশ্য প্রতি বছরই হয়। তবে এ সময়টা নয়, আরও পরে। ধান-চালের দর এখনই পল্লী অঞ্চলের দিনমজুর খাটা এবং নিম্ন আয়ের চাষীর ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। তাই এবার সাধারণ অবস্থার ব্যতিক্রম। চব্বিশ পরগণা জেলার দক্ষিণাঞ্চল জয়নগর, ডায়মন্ডহারবার, ক্যানিং, মথুরাপুর প্রভৃতি এলাকা হইতে কিছু কিছু লোক সপরিবারে গ্রাম ছাড়িয়া ‘পাষাণ-কায়া’ শহরের রাস্তায় আস্তানা বাঁধিয়াছে। ইহারা সাধারণ ভিখারীর শ্রেণীতে পড়ে না। তাই ফুটপাথের স্থায়ী বাসিন্দাদের ভিতরে ইহাদের চিনিয়া লইতে বিশেষ কষ্ট হয় না। রবিবার শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনই কয়েকটি গ্রাম-ছাড়িয়া আসা পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তায় এইরূপ আভাস পাওয়া গেল, রাজ্য সরকার টেন্ট রিলিফ, খয়রাতী সাহায্য প্রভৃতির মাধ্যমে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন না করিলে এবার রুজি-রোজগারের আশায় গাঁ-ছাড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়িতে থাকিবে। প্রকাশ ২৪ পরগণার উল্লিখিত এলাকায় ধানের দর ইতিমধ্যে ১৬ টাকায় উঠিয়াছে, আরও উঠিবে। চালের দর ২৫ টাকা হইতে ২৮ টাকার মধ্যে।
• এলোমেলো ঝড়: আজ সোমবারও কলিকাতার আবহাওয়া মেঘলা থাকিতে পারে, বিশেষ করিয়া বৈকালের দিকে বজ্রপাত সহ বর্ষণের সম্ভাবনা আছে—রবিবার কলিকাতার আবহাওয়া অফিস এই ভবিষ্যত বাণী করিয়াছেন। রবিবার কলিকাতা শহর ও শহরতলী এলাকায় আকাশে সারাদিন ছেঁড়া মেঘের আনাগোনার বিরাম ছিল না। এইদিন মাঝে মাঝে এলোমেলো ঝড় ও সেইসঙ্গে কয়েক পশলা বৃষ্টিও হইয়াছে। সারাদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ০.০২ ইঞ্চি।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১৮ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (১১ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MAY 1, 1962
• কলিকাতায় দিবারাত্র পরিস্রুত জল সরবরাহ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বিশেষজ্ঞ দল সুপারিশ করিয়াছেন যে, কলিকাতা হইতে কলেরা মহামারী এবং পেটের রোগ দূর করিবার জন্য ২৪ ঘন্টা ধরিয়া পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা প্রয়োজন। তাহারা আরও বলিয়াছেন যে, এজন্য গৃহে গৃহে জলাধারে পানীয় জল জমাইয়া রাখিবার রীতি বন্ধ করিতে হইবে এবং হুগলী নদীকে উদ্ধার করিতে হইবে। তাহারা আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন যে, নদীর এই ক্রমাবনতি যদি চলিতে থাকে এবং নলকূপ প্রভৃতি দ্বারা যদি পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা না হয়, তবে ৬০ লক্ষ ব্যক্তি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরিয়া বিনা পানীয় জলে দিনপাত করিবে।
বস্তী অঞ্চলে নলকূপ: রাজ্য সরকার কলিকাতা কর্পোরেশনের নিকট লিখিত এক পত্রে বস্তী অঞ্চলে পাণীয় জল সরবরাহের জন্য নলকূপ খননে জমির বা বস্তীর মালিকের কোনরূপ অনুমতির প্রয়োজন নাই বলিয়া দৃঢ়তার সহিত জানাইয়া দিয়াছেন। বস্তী এলাকায় দেড় ইঞ্চি ব্যাসের এক হাজার নলকূপ খননের জন্য নির্দেশও দিয়াছেন। প্রকাশ, সরকার গ্রীষ্মে জলকষ্ট নিবারণকল্পে অবিলম্বে ঐগুলি খননের প্রয়োজনীয়তা বিবৃত করেন।
রবীন্দ্র-ভারতীয় উদ্যোগে অনুষ্ঠান-সোমবার সূচনা: আসন্ন ২৫শে বৈশাখ উপলক্ষে সোমবার হইতে ‘রবীন্দ্র-ভারতী’-র উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী রবীন্দ্র-জন্মোৎসব আরম্ভ হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী প্রাঙ্গণে ঐ উৎসবের আসর বহিয়াছে। এই সাতদিন ধরিয়া রবীন্দ্রসংগীত ও কবিগুরুর নাটক, নৃত্যনাট্য এবং তাঁহার বিভিন্ন উপন্যাস ও গল্পের নাট্যরূপের মাধ্যমে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজার ব্যবস্থা হইয়াছে। সোমবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘একতারা’-র শিল্পীরা কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত গাহিয়া শুনান। তাহার পর ‘শ্রীমঞ্চ’র প্রযোজনায় “শেষের কবিতা”-র নাট্যরূপ মঞ্চস্থ হয়।

কলিকাতা, বুধবার, ১৯ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (১২ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, MAY 2, 1962
• কলিকাতার বাজারে মৎস্য সঙ্কট: কলিকাতার বাজারে মাছের সর্বোচ্চ দর (খুচরা)বড় কাটা পোনাকিছুদিন যাবতই সাড়ে চার হইতে পাঁচ টাকা সেরে ‘হৃদিস্থিত হৃষীকেশের’ মতোই গঙ্গাসীন হইয়া আছে। এই দর সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে, তবু হায়, ইহাকে বে-আইনী বলিবার উপায় নাই। কলিকাতার বাজারে চরম মৎস্য সঙ্কট কোন উপায় দূর করা যায়, উহার কি ব্যবস্থা সরকার করিতেছেন, জনসাধারণ তাহা জানে না। কিন্তু সরকার একটি ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করিয়া এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন, যাহার ফলে কলিকাতার বাজারে মাছের সম্ভাব্য সরবরাহের পরিমাণ দৈনিক অন্ততঃ ১৮০ মণ করিয়া কমিয়া গিয়াছে, সে সম্পর্কে আমরা সুস্পষ্ট অভিযোগ পাইয়াছি।
• মনুমেন্টের পাদদেশে সভা: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘মে দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে কলিকাতা ময়দানে মনুমেন্টের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে বিভিন্ন বক্তা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার রক্ষার দাবি জানান। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে কর্মচারী ছাঁটাই, বেকার সমস্যা এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দলমত-নির্বিশেষে গণআন্দোলন গড়িয়া তুলিতে বলা হয়। বি পি টি ইউ সি এবং ইউ টি ইউ সির যুক্ত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য ডাঃ রণেন সেন।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ২০শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৩ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, MAY 3, 1962
• বুধবার রাত্রে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বর্ষণ: বুধবার সন্ধ্যার পর প্রবল ঝড়বৃষ্টির ফলে কলিকাতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হইয়া পড়ে। দুপুর হইতে সুরু করিয়া সমস্ত দিন ঝোড়ো হাওয়ার মাতন চলে। বিকাল হইতে ক্রমশ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া উঠে এবং বিদ্যুৎ ঝিলিক মারিতে থাকে। রাত্রি ৮টা নাগাদ বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রচন্ড বর্ষণ সুরু হয়। শহরের অপেক্ষাকৃত লীচু অঞ্চলগুলিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই জল দাঁড়াইয়া যায়। টালিগঞ্জ ব্রীজের নীচে ৩ ফুট গভীর জল দাঁড়াইয়া যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট রুটগুলিতে ট্রাম বাস চলাচল ব্যাহত হয়। দমদম, বেলিয়াঘাটা প্রভৃতি অঞ্চলে বহু জায়গায় রাস্তার উপর গাছের ডাল ভাঙিয়া পড়িয়া পথে প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি হইয়াছে। গাছের ডাল পড়িয়া কোন কোন অঞ্চলে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের তার ছিঁড়িয়া যাওয়ায় সংবাদ আদান-প্রদান ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়। বিমান চলাচল ব্যবস্থাও আংশিক ব্যাহত হয়। ইন্ডিয়া এয়ার লাইন কর্পোরেশনের যে বিমানখানি সন্ধ্যায় কলিকাতা হইতে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল উহা বাতিল করিয়া দেওয়া হয়। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৫৮ মাইল পর্যন্ত উঠে। রাত্রি ৮টা পর্যন্ত বারিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ মিলিমিটার অর্থাৎ ১.৫৭ ইঞ্চি।
• পার্কসার্কাসে তিনশত বেডের ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের ব্যবস্থা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলিকাতার পার্কসার্কাসে ৩০০ বেডের একটি ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা করিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে। এই পরিকল্পনাটির জন্য প্রায় এক কোটি টাকা মঞ্জুর হইয়াছে। সম্ভবত এই বৎসর হইতেই এই হাসপাতালটির প্রাথমিক নির্মাণ কাজ সুরু হইবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর এই ব্যাপারে একটি প্রকল্প রচনা করিয়া মুখ্যমন্ত্রীর নিকট পেশ করিয়াছেন। জানা গিয়াছে, প্রস্তাবিত এই ক্যানসার হাসপাতালটির সঙ্গে একটি গবেষণা কেন্দ্রও থাকিবে এবং ক্যানসার রোগ সম্পর্কে উন্নততর গবেষণার জন্য বিদেশ হইতে বিশেষজ্ঞও আনা হইবে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বলেন যে, দেশে ক্যানসার রোগ ক্রমশ বাড়িয়া চলিতেছে এবং হাসপাতালগুলিতে শয্যার সংখ্যা সীমাবদ্ধ থাকায় বহু রোগীর ক্ষেত্রে স্থানাভাব ঘটিতেছে। হাসপাতালগুলিতে আরও কিছু ফ্রি ক্যানসার বেড বাড়ান যায় কিনা তাহা তাঁহারা চিন্তা করিতেছেন। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে।
• মধ্য কলিকাতায় ডক শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া বিক্ষোভ মিছিল: কয়েক হাজার ডক শ্রমিক তাহাদের নানা দাবি-দাওয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ-এর উদ্দেশ্যে বুধবার দুপুরে দীর্ঘ সময় ধরিয়া মধ্য কলিকাতার পথে বিক্ষোভ মিছিল বাহির করে। উহার ফলে স্ট্যান্ড রোড, নেতাজী সুভাষ রোড, ব্রেবোর্ণ রোড ও চিত্পুর প্রভৃতি অঞ্চলে ১০টা হইতে ১২টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং ঐ এলাকার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘস্থায়ী ট্রাফিক-জ্যামের উদ্ভব হয়।

কলিকাতা, শুক্রবার, ২১শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৪ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, MAY 4, 1962
• কলিকাতায় বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের শীঘ্রই উদ্বোধনের সম্ভাবনা: শীঘ্রই কলিকাতায় ‘বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হইবে বলিয়া আশা করা যায়।যে জমির উপর এই প্ল্যানেটোরিয়ামটি নির্মাণ করা হইয়াছে তাহা কেন্দ্রীয় সরকারের নহে। ইহা ছাড়া প্ল্যানেটোরিয়ামের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর্তৃত্বও থাকিবে না।অনুসন্ধান লইয়া জানা যায় যে, প্রথমে বিড়লা পার্কে উক্ত প্ল্যানেটোরিয়াম নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে ঐ জায়গা পরিবর্তন করা হয়।কারণ বর্তমান জায়গাটি পূর্বেকার জায়গা অপেক্ষা যথেষ্ট ভাল বলিয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার অভিমত প্রকাশ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার থিয়েটার রোড ও চৌরঙ্গী রোডের সংযোগস্থলের নিকট ১.১৫ একর জমি বিড়লা এডুকেশন ট্রাস্টকে দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দিয়াছেন। শ্রী জি ডি বিড়লা উক্ত ট্রাস্টের সভাপতি।পূর্ব জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ঐ প্ল্যানেটোরিয়াম নির্মাণের কাজ গ্রহণ করিয়াছেন। এই প্ল্যানেটোরিয়াম নির্মাণ করিতে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা ব্যয় হইবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় প্রজেক্টর মেসিন বিনাশুল্কে বিদেশ হইতে আমদানী করিবার জন্য ট্রাস্ট কতৃপক্ষকে অনুমতি দিয়াছেন বলিয়া জানা যায়।

কলিকাতা, শনিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৫ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MAY 5, 1962
• ৪৮ ঘন্টায় কলিকাতায় তিনটি খুন: শুক্রবার ভোর হইতে দুপুরের মধ্যে দুইটি (এবং পূর্বদিন একটি) ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কলিকাতায় মোট তিনটি নরহত্যা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিসী সূত্রে প্রকাশ, এইদিন ভোরে উত্তর কলিকাতার মুরারিপুকুরে ত্রিশ বৎসর বয়স্কা জনৈকা বিবাহিত রমণীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। উক্ত মহিলার স্বামী এই ঘটনার পর হইতে ফেরার হইয়াছে। দ্বিতীয় হত্যাকান্ডটি অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর একটার কিছু পরে বড়বাজার এলাকায়। যমুনালাল বাজার স্ট্রীটের এক বাড়িতে। জনৈক দর্জিকে তাহার এক সহকর্মী কাপড়-কাটা কাঁচি দিয়ে উন্মত্তের মত আঘাত করিতে থাকে এবং তাহার ফলে ঘটনাস্থলেই উক্ত দর্জির মৃত্যু হয় বলিয়া প্রকাশ। স্থানীয় লোকেদের সাহায্যে হত্যাকারী বলিয়া অভিহিত ব্যক্তিকে পুলিসের হাতে অর্পণ করা সম্ভব হয়।

কলিকাতা, রবিবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৬ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, MAY 6, 1962
• পাইলটের অভাবে কলিকাতা বন্দর সম্পূর্ণ অচল: শনিবারও কলিকাতা বন্দরের অচল অবস্থার অবসান হয় নাই। ঐ দিনও পাইলটের অভাবে কলিকাতা বন্দর হইতে কোন জাহাজ বাহির সমুদ্রে যাত্রা করিতে পারে নাই। মাত্র একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়িয়াছে। কলিকাতা বন্দরে ইহা লইয়া জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াইল ৭৬। ইতিমধ্যে কলিকাতা বন্দরকর্তৃপক্ষ ২৬ জন পাইলটকে অবাধ্যতা ও কার্যে অনুপস্থিতির জন্য চার্জসীট দিয়াছেন। শনিবার সন্ধ্যায় জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, এসোসিয়েশনের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের পর কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন আর পাইলট এসোসিয়েশনের সহিত আলোচনা চালাইতে আগ্রহী নহেন। কোনপ্রকার সর্তের ভিত্তিতে পাইলটদের কাজে ফিরিয়া আসিবার ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মত হওয়ার প্রশ্ন কোন অবস্থাতেই উঠিতে পারে না।

কলিকাতা, সোমবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৭ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, MAY 7, 1962

• ছাদ ইজারা: কলিকাতার ভুঁই কম, তাই ছাদে ঠাঁই খোঁজা সুরু হইয়া গিয়াছে। সুযোগ বুঝিয়া বুদ্ধিমান বাড়িওয়ালাও ছাদে ইজারা দিতেছেন। সম্প্রতি ক্যানিং স্ট্রীটের মেহেতা বিল্ডিংয়ের ছাদ ইজারা দেওয়া হইয়াছে। ইজারার মেয়াদ ৫৫ বছর। ছাদটির আয়তন কাঠা সাতেক। ইজারা লইয়াছেন এক পশ্চিমী মুসলমান ব্যবসায়ী। প্রকাশ, এজন্য বাড়িওয়ালাকে তিনি এককালীন মোটা টাকা সেলামী দিয়াছেন এবং ফ্রি বছর খাজনা বাবদও কিছু টাকা দিয়া যাইবেন। ইজারার সর্ত অনুসারে ঐ ব্যবসায়ী ঘরতোলার জন্য গোটা ছাদটি ব্যবহার করিতে পারিবেন। তবে ছাদের উপর একটির বেশী তালা তুলিতে পারিবেন না। বাড়ির সিঁড়ি ব্যবহারের অধিকারও তাঁহার থাকিবে। নূতন ঘর তোলার কাজও ইতিমধ্যে সুর হইয়া গিয়াছে। জানা গেল, অনেক ব্যবসায়ী সে সব ঘর ভাড়া লওয়ার জন্য উদগ্রীব হইয়া উঠিয়াছেন।
• কলিকাতায় রঞ্জন রশ্মির চাহিদা বৃদ্ধি: রঞ্জনরশ্মির চাহিদা যখন অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাইয়াছে, সেই সময় উপযুক্ত কর্মী এবং প্রয়োজনীয় স্থানের অভাবে নীলরতন সরকার হাসপাতালের তিনটি রঞ্জনরশ্মি-যন্ত্র অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রকাশ, তন্মধ্যে দুইটি রাশিয়া হইতে দান হিসাবে পাওয়া যায়।নীলরতন সরকারের রঞ্জনরশ্মি বিভাগে স্বভাবতই অস্বাভাবিক ভীড় হয়। ১৯৬০ সালের উক্ত হাসপাতালের রঞ্জনরশ্মি বিভাগের কার্য পরিচালনা সম্পর্কিত সমস্যা সম্পর্কে তদন্তের জন্য চারিজন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটি এই মর্মে সুপারিশ করিয়াছিলেন যে, বৎসরে একজন কর্মীর ৩ হাজারের বেশী রঞ্জনরশ্মির প্লেট গ্রহণ করা সমীচীন নহে। অবস্থা সেখানে এমন দাঁড়াইয়াছে যে, একজন কর্মীকে নাকি বৎসরে ২০,০০০ প্লেট পর্যন্ত গ্রহণ করিতে হয়। উক্ত কমিটি ইহাও বলিয়াছিলেন যে, দৈনিক ১০০টি রোগীর রঞ্জনরশ্মির পরীক্ষার জন্য ৫০০০ বর্গফুট পরিমিত স্থান প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে নাকি এ-যাবত মাত্র ১৩৮০ বর্গফুট স্থান সংকুলান করিতে পারা গিয়াছে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৮ই বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MAY 8, 1962
• জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ উদ্বোধন: স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র অধিষ্ঠিত থাকিবেন। সোমবার এক বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এই সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য শ্রীহিরন্ময় বন্দোপাধ্যায় বলেন,‘রবীন্দ্রনাথ সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের পূজারী ছিলেন। আমরা তাঁহারই সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে সেই আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করিব।’ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর একাংশে আজ (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববদ্যালয়ের উদ্বোধন হইবে। রবীন্দ্রশতবার্ষিকী পূর্তি উৎসবের শেষ দিনে ‘কবিগুরুর আর্শীবাদ লইয়া’ শ্রী বন্দোপাধ্যায় তাঁহার নূতন কার্যভার গ্রহণ করিবেন। শ্রী বন্দোপাধ্যায় বলেন,‘আপাতত আমরা কলা বিষয়েই পঠনপাঠন সীমাবদ্ধ রাখিব। রীন্দ্রনাথের নাটক, সংগীত, নৃত্য ও চিরকলার মাধ্যমেই তাঁহার জীবনদর্শণ উপলব্ধির চেষ্টা করিব।’ অবশ্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞানের কোর্স চালু করিবারও সুযোগ আছে। তবে এখন কেবলমাত্র নাটক, সংগীত, নৃত্য ও চিত্রকলার ডিগ্রী কোর্স প্রবর্তিত হইতেছে। গবেষণার কাজে সুবিধার জন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিজস্ব মিউজিয়াম গড়িয়া তোলা হইবে। এই মিউজিয়ামে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও বাণীর বিভিন্ন স্বাক্ষর সংরক্ষিত হইবে।


জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর এই অংশে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম স্থাপিত হইবে। ফটো-আনন্দবাজার
কলিকাতা, বুধবার, ২৬শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (১৯শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, MAY 9, 1962
• উইল করিয়া রবীন্দ্র রচনাবলীর স্বত্ব দান: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে যে উইল করিয়া গিয়াছেন, তাহাতে তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলীর স্বত্ব রবীন্দ্রভারতী সোসাইটিকে অর্পণ করিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে। তবে রচনাবলী হইতে যে আয় হইবে তাহার কিছু অংশ মাসোহারা হিসাবে তাঁহার পত্নী শ্রীমতী মীরা দেবী পাইবেন। তবে তাঁহাদের অবর্তমানে ঐ আর সম্পূর্ণ রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি পাইবেন। উল্লেখ থাকে যে, ১৯২৩ সালের পর রবীন্দ্রনাথ যে সব গ্রন্থ রচনা করেন, তাহার মালিকানা স্বত্ব তাঁহার পুত্র রথীন্দ্রনাথের ছিল। মৃত্যুর পূর্বে রথীন্দ্রনাথ উপরোক্ত উইলটি করিয়া যান। মঙ্গলবার রবীন্দ্র ভারতীর সাধারণ সম্পাদক ডঃ প্রতাপচন্দ্র সাংবাদিকদের ঐ তথ্য জানাইয়া বলেন যে, রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি রথীন্দ্রনাথের ঐ উইলের সর্ত গ্রহণ করিয়াছেন।

কলিকাতা, শুক্রবার, ২৮শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (২১শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, MAY 11, 1962

• পরলোকে বিপ্লবী অবিনাশ ভট্টাচার্য: অগ্নিযুগের বিপ্লবী শ্রীঅবিনাশ চন্দ্র ভট্টচার্য বৃহস্পতিবার রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ সিঁথির কালীচরণ ঘোষ রোডে তাঁহার বাসভবনে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স প্রায় ৮০ বৎসর হইয়াছিল। গত কয়মাস ধরিয়াই শ্রীভট্টাচার্যের স্বাস্থ্য ভাল যাইতেছিল না। শুক্রবার সকালে নিমতলা শ্মশানঘাটে তাঁহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হইবে।

কলিকাতা, শনিবার, ২৯শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (২২শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MAY 12, 1962
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ১৯৬১ সালের শ্রেষ্ঠ তারকাবৃন্দ ও কলাকুশলীগণ পশ্চিমবঙ্গ চিত্র সাংবাদিক সংস্থার
পক্ষ হইতে সম্মানপত্র গ্রহণ করিতেছেন। বাম হইতে—সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার, প্রণতি ভট্টাচার্য, ইন্দ্রাণী মুখার্জি,
দীপ্তি রায়, সত্যজিৎ রায় ও মঞ্জু থেকে শ্রীদেবকীকুমার বসুর নিকট হইতে সম্মানপত্র লইতে দেখা যাইতেছে। ফটো-আনন্দবাজার


কলিকাতা, রবিবার, ৩০শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৩শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, MAY 13, 1962
• মাছের শোকে: বেহালা পশ্চিম জয়রামপুরে একজনের পোষা বিড়াল গত ৯ই মে, তাঁহার প্রতিবেশীর ‘সোনার মত দামী’ মাছ খাইয়া ফেলে। ইহাতে বিড়ালের মালিকের প্রতিবেশীর গোসা হয় এবং তিনি বিড়ালের একটি ঠ্যাং ভাঙিয়া মালিকের দোকানের সামনে রাখিয়া আসেন। এই ব্যাপারে দুই পক্ষে প্রথমে বচসা এবং তারপরে হাতাহাতি হয়। ব্যাপারটি ক্রমেই ঘোরালো হইয়া ওঠায় বেহালার পুলিশ আসিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করিয়া হাজতে পুরিয়া দেয়। হাঙ্গামা সৃষ্টির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করা হইয়াছে বলিয়া পুলিসী-সূত্রে সংবাদ পাওয়া গিয়াছে।

কলিকাতা, সোমবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৪শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, MAY 14, 1962
এ বি টি এ হলে ডাঃ নীহার মুন্সী ভাষণ দিতেছেন। ফটো-আনন্দবাজার
• রবিবার ৮ম বার্ষিক মেডিকেল প্রতিনিধি সমিতি সম্মেলনে আরম্ভ: রবিবার কলিকাতায় এ বি টি এ হলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মেডিকেল প্রতিনিধি সমিতির দুইদিন ব্যাপী অষ্টম বার্ষিক সম্মেলন সুরু হয়। বিভন্ন বক্তা মেডিকেল প্রতিনিধিদের কষ্টসাধ্য কাজের উল্লেখ করিয়া তাঁহাদের চাকুরীর স্থায়িত্ব, বেতনহার সংশোধন, বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রভৃতি সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক বলিয়া অভিমত প্রকাশ করেন। পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল প্রতিনিধিদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সভাপতি ডাঃ নীহার মুন্সী ঔষধের ফরমুলা সম্পর্কে মেডিকেল প্রতিনিধিদের সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার বলিয়া মনে করেন। এজন্য তাঁহাদের উপযুক্ত ডিগ্রীও থাকা প্রয়োজন। এই বৃত্তিতে যাঁহারা নূতন প্রবেশার্থী তাঁহাদের কাজকর্ম সম্পর্কে ট্রেনিং এবং বিভিন্ন ঔষধ সম্পর্কে রিফ্রেসার কোর্সেরও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মেডিকেল প্রতিনিধিদের দাবিদাওয়ার মীমাংসা করিতে পরামর্শ দেন।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১লা জৈষ্ঠ্য, ১৩৬৯ (২৫শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MAY 15, 1962
• রবীন্দ্রমেলায় মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ১০১তম জন্মতিথি। আবার ২৫শে বৈশাখের ডাক। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-ভক্তির অর্ঘ্য নিবেদিত হল, উৎসর্গিত হল সেই পরমপ্রিয়, পরম পুরুষ, আত্মার-আত্মীয় বাংলা মায়ের কৃতী সন্তান রবীন্দ্রনাথের প্রতি। এতো নয় শুধু ফুল, এতো নয় শুধু উপহার। এ আমাদের প্রাণের উৎসব, অন্তরের উৎসব। তাই শীর্ষ দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্র-কাননে রবীন্দ্রমেলা শিল্পীবৃন্দের সহযোগিতায় রবীন্দ্রানুরাগীদেরও সামনে যে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাতে সত্যি তাঁরা প্রশংসার অধিকারী। মঞ্চসজ্জায়, বিষয় নির্বাচনে ও বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর অবদানের মাধ্যমে তাঁরা এমন এক সহজ, সরল, সুষম মনের পরিচয় দিয়েছেন, যাতে পরিবেশনকে ভাবগম্ভীর করে তুলতে সাহায্য করেছে।

কলিকাতা, শনিবার, ৫ই জৈষ্ঠ্য, ১৩৬৯ (২৫শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MAY 19, 1962
• কলিকাতার মাছের বাজারে মাৎস্যন্যায়: গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ কলিকাতা ও শহরতলী অঞ্চলে মাছের বাজারে আগুন লাগিয়াছে। মৎস্য বিক্রেতাদের অধিকাংশ ডালিই শূন্য। সামান্য যেটুকু মাছ উঠিতেছে, তাহারও আকাশ-ছোঁয়া দর। ফলে সাধারণ বাঙ্গালীর পাত হইতে মাছ প্রায় অদৃশ্য হইয়াছে। এই যখন অবস্থা, তখন আড়তদার এবং পাইকারীরা খুচরা বিক্রেতাদের উপর এবং খুচরা বিক্রেতারা আড়তদার ও পাইকারদের উপর দোষ চাপাইয়া দায় সারিতেছেন। আর সরকার? পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য দপ্তর গোড়াতেই ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা না করিয়া মহাসুখে নিদ্রা দিতেছেন। এদিকে ক্রেতাসাধারণের প্রাণান্ত ঘটিবার উপক্রম। গত দুই দিন তাঁহাদের এই নিদ্রায় একটু বিঘ্ন ঘটিতেছে বলিয়া মনে হয়। এই দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এক্ষণে সঙ্কট সম্পর্কে গবেষণা এবং আলাপ আলোচনায় নিযুক্ত রহিয়াছেন। বাজারে মাছ সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করিয়া তাঁহারা দপ্তরের প্রশাসনিক মারপ্যাঁচ আঁটিবার ব্যাপারে তাঁহাদের শক্তি নিয়োগ করিয়াছেন বলিয়াও অভিযোগ পাওয়া যায়। শুক্রবার সরকারী দপ্তর ভবনে মৎস্য সঙ্কট সম্পর্কে উপরোক্ত দুইদিনব্যাপী গবেষণা ও আলোচনার সূত্রপাত হয়। আশা করা যায়, আজ শনিবার উহার ফলশ্রুতি ঘোষিত হইতে পারে। এদিকে বিভিন্ন মহল হইতে বিশেষ করিয়া ক্রেতাসাধারণের নিকট হইতে এইরূপ অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে যে, কি আড়তদার কি পাইকার, কি সরকার কোন পক্ষ হইতেই কলিকাতা ও শহরতলী অঞ্চলে মাছের সরবরাহ বৃদ্ধির কোন সক্রিয় প্রচেষ্টাই করা হইতেছে না। খুচরা বিক্রেতারাও অভিযোগ করিতেছেন যে, তাঁহারা কোন তরফ হইতেই মাছের সরবরাহ পাইতেছেন না।

কলিকাতা, রবিবার, ৬ই জৈষ্ঠ্য, ১৩৬৯ (৩০শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, MAY 20, 1962
• কলিকাতা বন্দরে সঙ্কটের অবসান: শনিবার পদত্যাগী পাইলটরা কাজে যোগ দেওয়ায় কলিকাতা বন্দরের ১৮ দিনব্যাপী সঙ্কটের অবসান হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়াছে যে, পাইলটদের প্রধান দাবি দুইটির কোনটিই স্বীকৃত হয় নাই। পাইলটদের সার্ভিসকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আনিতে হইবে অথবা ১৯৪৮ সালের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কলিকাতা বন্দরের মেরিন সার্ভিসের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে তৎকালীন বেতন বৈষম্য বজায় রাখিতে হইবে, প্রধানত এই দুইটি দাবির ভিত্তিতে কলিকাতা বন্দরের ৪৬ জন পাইলটের মধ্যে ৪০ জন ২রা মে হইতে পদত্যাগ করিয়াছিলেন। পাইলট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও পরিবহণ মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম ও জাহাজমন্ত্রী শ্রীরাজবাহাদুরের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর পাইলটদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকাশ, শনিবার বেলা ১টার পদত্যাগী পাইলটেরা দিল্লি হইতে তাঁহাদের সভাপতি শ্রীবাসদেবের একটি টেলিফোন সংবাদ পাইয়া কলিকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানান যে, তাঁহারা তখনি কাজে যোগ দিতে রাজী আছেন। আরও জানা গিয়াছে যে, পদত্যাগী পাইলটদের দুইজনকে ইতিমধ্যেই জাহাজের ভার দেওয়া হইয়াছে এবং তাঁহারা শনিবার শেষ রাত্রে জাহাজ লইয়া রওনা হইবেন। শিক্ষানবীশ পাইলটদের পদত্যাগপত্র ইতিপূর্বেই বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হইয়াছিল। কিন্তু প্রকাশ, শনিবার পদত্যাগী পাইলটদের সহিত শিক্ষানবীশ পাইলটও জাহাজে যাইতেছেন। শিক্ষানবীশ পাইলটদের পুনরায় চাকুরীতে লওয়া হইবে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.