এক দিনও ভুলি না, বিদেশে গেলেও
নৃত্যশিল্পী
ছোটবেলা কেটেছে বেহালায়। তখন কলকাতা এত ঘিঞ্জি ছিল না। লরেটো স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখতে পেতাম রাস্তায় সারি দিয়ে এক দিকে কৃষ্ণচূড়ার লাল, শুধুই লাল, অন্য দিকে রাধাচূড়ার হলুদ। চোখ ও মন যেন জুড়িয়ে যেত। হাঁ করে দেখতাম। ভীষণ আনন্দ হত। ভাবতাম পুরো কলকাতা শহরই যদি এমন ভাবে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ায় ছেয়ে থাকত তবে কী মজাই না হত! এখন সেই সব গাছ নেই। তবুও হঠাৎ কোথাও দেখতে পেলে শৈশবের সেই দিনগুলো মনে পড়ে যায়।

খুব ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিল। গুরুজি আসতেন। নাচ শিখতাম। সেই শেখায় কোনও ফাঁকি ছিল না। নাচের প্রতি ভালবাসা আর এই শহরকে ঘিরে নানা প্রত্যাশায় দিনগুলো দারুণ কাটত। নাচের জন্য কলকাতার বাইরে গেলে কয়েক দিন পর থেকেই মনে হত কবে ফিরব। মহারাজের সঙ্গে বিয়ের পর বা আমার নাচের কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশে গেলে সব আনন্দের মাঝেও এই শহরের কথা মনে পড়ত। বিদেশের সেই ঝাঁ চকচকে রাস্তা দিয়ে যেতে কার না ভাল লাগে? অবশ্যই অন্য রকম অনুভূতি। কিন্তু সত্যি কথা বলছি, একটু পরেই আমার বেহালার পাড়ার কথাটাও মনে পড়ে যেত। কখনও ভাবতে বসতাম, কবে যে ওই পাড়ায় ফিরব! আর বড় বড় হোটেলে হাজার রকম আইটেম ছেড়ে কখনও সখনও মনে পড়ে যেত, ইস্ মায়ের হাতের রান্নাটা কত দিন যেন খাইনি!

এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তেই আমাকে যেতে হয়। সানার স্কুল তো আছেই, এ ছাড়াও নাচের জন্য কোথাও না কোথাও যেতেই হয়। পথে ঘাটে অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়। সবচেয়ে বেশি দেখা হয় সেই সব মানুষদের সঙ্গে, যাঁরা সৌরভের ফ্যান। তাঁরা নিজেরাই এসে আমার সঙ্গে পরিচয় করেন। আবার আমার নাচের কোনও অনুষ্ঠান দেখে থাকলে তার প্রশংসাও করেন। সত্যি, এ সব এই শহর ছাড়া আর কোথায় মিলবে!

জানেন তো, ছোটবেলা থেকেই নিউ আলিপুরে যাই ফুচকা খেতে। এখনও সে অভ্যেস ছাড়িনি। আবার কখনও চলে যাই সিনেমা দেখতে। এখন তো অনেক সময়ই আমার সঙ্গী সানা। কখনও কখনও সৌরভও আমাদের সঙ্গে যায়। তবে বেশি এনজয় করি ছুটির দিনে বাড়িতে। এমনিতেই আমাদের যৌথ পরিবার। হাসি-ঠাট্টা-গল্প-খাওয়াদাওয়া সব চলে। তবে এক এক সময় সবাই মিলে টলি-ক্লাব বা বেঙ্গল ক্লাবে গিয়ে খেয়ে দেয়ে রাতে বাড়ি ফিরি।

নৃত্যসঙ্গী— মায়ের সঙ্গে সানা
আমার বাড়িতেই নাচের স্কুল। অনেক ছেলেমেয়ে নিয়মিত এসে নাচ শেখে। ওদের সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানতে পারি। বাড়ির ছেলেমেয়ে ভাল গান শিখুক বা নাচ শিখুক এমন মনোভাব এখনও এই শহরেই আছে। এমনকী বড়রাও এই বয়সে নাচ বা গান শেখার আগ্রহ দেখান যা ভাবতেও ভাল লাগে।

এক এক দিন অবসর সময়ে গান শুনি। অনুষ্ঠানেও যাই। কলকাতায় যে সব গান-বাজনার বড় অনুষ্ঠান হয়, সেগুলোর কোনওটাই বাদ যায় না। আগে নাটক দেখতাম। এখন আর যাওয়া হয় না। তবে নাটকের সব খোঁজ খবরই রাখি। জানেন তো, সেই কবে রবি ঘোষের ‘হীরালাল পান্নালাল’ দেখেছিলাম, এখনও তা মনে আছে। কলকাতা শহর এমন একটি শহর, যেখানে আনন্দের সব রসদ আছে। শুধু একটু খুঁজে নিতে হয়। ছোটবেলায় পার্ক সার্কাসে গিয়ে সার্কাস দেখতাম। হাতি-ঘোড়া দেখে খুব মজা পেতাম। এখন সে রকম মজা পাই না। তবে হাওড়ায় শুনলাম একটি সার্কাস দল এসেছে। আমি আর সানা যাবই যাব। সানা খুব মজা পাবে। আমিও শৈশবকে ফিরে পাব। এটাই বা কম কীসের!
 
 

 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.