মমতার হাতে কাল শুরু তিন কিষান মান্ডি
ক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় শনিবার তিনটি কিষান মান্ডির উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে তিনটি জায়গায় এই কিষান মান্ডি তৈরি হয়েছে, মমতার জমি-আন্দোলনের ক্ষেত্র সিঙ্গুর তার অন্যতম।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেন, “নবান্ন থেকে স্যুইচ টিপে মুখ্যমন্ত্রী কিষান মান্ডির উদ্বোধন করবেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আরও ২১টি কিষান মান্ডির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেগুলিও খুব শীঘ্রই চাষিদের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে।”
চাষিদের সঙ্গে ক্রেতাদের সরাসরি যোগাযোগএক কথায় কিষান মান্ডি বা কৃষক বাজার তৈরির উদ্দেশ্য এটাই। এ রাজ্যে চাষিরা যে ফসল ফলান, তা বিক্রি করতে তাঁদের বেশির ভাগই নির্ভরশীল ফড়েদের উপরে। সম্পন্ন চাষি বা সরাসরি বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন, এমন চাষির সংখ্যা এখানে হাতেগোনা। ফলে, ফড়ে যে দাম দেন, তাতেই ফসল বিক্রি করতে হয় চাষিদের।
কৃষকদের সুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বছর দেড়েক আগে রাজ্যের সমস্ত ব্লকে একটি করে কিষান মান্ডি তৈরির রূপরেখা তৈরি করে কৃষি বিপণন দফতর। স্থানীয় চাষিরা যাতে নিজের খেতের ফসল ওই সব বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সেটাই ছিল প্রশাসনের লক্ষ্য। প্রথম পর্যায়ে রাজ্য জুড়ে যে ৯৫টি কৃষক বাজার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার মধ্যে ছিল হুগলির সিঙ্গুর। এ ছাড়া হুগলিরই ধনেখালি, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এবং বীরভূমের সিউড়িতে কিষান মান্ডির দরজা শনিবার থেকেই কৃষকদের জন্য খুলে যাচ্ছে।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় সিঙ্গুরের কৃষক বাজার। ছবি: প্রকাশ পাল।
ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পটি প্রথম চালু হচ্ছে সেই সিঙ্গুরে, যে এলাকা তাঁর জমি-আন্দোলনের ধাত্রীভূমি। সিঙ্গুরের ভৌগোলিক অবস্থানও এখানে কৃষক বাজার গড়ে তোলার পক্ষে সহায়ক। ওই বাজারের পশ্চিমে কামারকুণ্ডু স্টেশন। অপর দিকে সিঙ্গুর স্টেশন। ঢিল ছোড়া দূরত্বে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই দিল্লি রোড এবং জিটি রোড। কাছেই তারকেশ্বর-বৈদ্যবাটি রোড। সিঙ্গুর আলুর মোড়ের কাছে সরকারি কৃষি জমিতে ওই কিষান মান্ডি। সব্জি রাখার পেল্লায় শেড, চেম্বার, কংক্রিটের রাস্তা-সহ সব কাজই শেষ। রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “তিন একর জমিতে গড়ে ওঠা এই বাজারে সব রকম আধুনিক ব্যবস্থা থাকছে।”
হুগলিরই ধনেখালির সিমলায় সরকারি কৃষি খামারে কিষান মান্ডি তৈরি হয়েছে। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অসীমা পাত্র বলেন, “এই ব্লকের চার দিকেই হাজার হাজার মানুষ চাষ করেন। কিষান মান্ডি চালু হলে ফসল বিক্রি নিয়ে ওঁরা চিন্তামুক্ত হবেন।” প্রশাসনের দাবি, ব্লকের মাঝামাঝি ওই মান্ডি হওয়ায় চার পাশ থেকে চাষিরা পৌঁছতে পারবেন। এক দিকে ধনেখালি হল্ট এবং অন্য দিকে শিবাইচণ্ডী স্টেশন। লাগোয়া ১৭ নম্বর রুট চলে দশঘড়া হয়ে চলে গিয়েছে তারকেশ্বরে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েও দূরে নয়।
কৃষি বিপণন পর্ষদের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “প্রথমে ঠিক হয়েছিল এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সব কিষান মান্ডি তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, সিঙ্গুর, ধনেখালি বা বহরমপুরের মতো সব জায়গায় কাজের অগ্রগতি এক নয়। তাই ঠিক হয়েছে, নির্মাণকাজের অগ্রগতি অনুয়ায়ী চাষিদের ব্যবহারের জন্য কিষান মান্ডি ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে।”
এক ঝলকে
এক কথায় কৃষকদের জন্য বাজার। চাষি-ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগ।

এই মান্ডিতে চাষিরা যে কোনও ধরনের ফসল বিক্রি করতে পারবেন।

মান্ডির দায়িত্বে রাজ্য বিপণন পর্ষদ।

প্রথম পর্যায়ে ৯৫টি কিষান মান্ডি তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগেরই কাজ শুরু হয়েছে। সিঙ্গুর, ধনেখালি, বহরমপুর ও সিউড়িতে কাজ শেষ।
অগ্রগতি যে সব জায়গায় সমান নয়, তা চোখে পড়বে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে গেলে। প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার মানলে এটি চালু হওয়ার কথা সিঙ্গুরের সঙ্গেই। উলুবেড়িয়াতেও কাজ শেষ হতে সময় লাগবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বাগনান ১ ব্লকের কৃষক বাজারের কাজই শুরু হয়নি। শ্যামপুর ১ ব্লকে কাজ শুরু হয়েছে মাস চারেক আগে। এই অবস্থায় প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার মেনে কাজ শেষের নতুন সময়সীমা ধার্য হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শুরুর তারিখ ধরে সেগুলিকে প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার মেনে ১৮ মাসের মধ্যে শেষ করার উপরে জোর দিয়েছে প্রশাসন।
কৃষক বাজারের উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না বলেই মত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা কৃষি বিপণন দফতরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর দাবি, “এক মাত্র সিঙ্গুর ছাড়া অন্য যে জায়গাগুলিকে কিষান মান্ডির জন্য বাছা হয়েছে, সেগুলিতে বর্তমানে চাষি কেন, কেউই যান না। ভবিষ্যতেও যাবেন না। আমাদের সময়েও একই ভুল হয়েছিল।” তাঁর মতে, “এ সব না করে, রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার চালু হাট এবং সব্জি বাজারকে উন্নত করতে পারত বর্তমান সরকার। কারণ, সেখানে প্রতিদিন চাষিরা যেতে অভ্যস্ত। বাজারে চাষিদের বসার স্থায়ী জায়গাও করে দেওয়া যেত।”
চাষিদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। সিঙ্গুরের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক অষ্ট পাকিরা বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য কৃষি শ্রমিক মেলা ভার। এই অবস্থায় ফসল বাজারে নিয়ে যাওয়ার লোকও তো দরকার। দেখি কী হয়। কৃষক বাজারে যদি সুবিধা পাই, তবে নিশ্চয়ই যাব।” সিঙ্গুরেরই অপূর্বপুর গ্রামের কৃষক সমীর সানকি আবার বলছেন, “আমি নিজেই সিঙ্গুর বাজারে গিয়ে ফসল বিক্রি করি। বসার জায়গা মেলে আবার খোলা জায়গায় ঝড়-জলে মাথা ভেজে। মান্ডি চালু হলে সমস্যা থাকবে না।” ধনেখালির বেলমুড়ির চাষি চন্দ্রজ্যোতি ঘোষের বক্তব্য, “শিবাইচণ্ডী বাজারে ফসল বিক্রি করি। কিন্তু পুরোটাই ফড়ে-নিয়ন্ত্রিত। কিষান মান্ডিতে সে সব সমস্যা না থাকলে সেখানেই যাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.