|
|
|
|
পরিকল্পনাই সার, পর্যটনের বরাদ্দ টাকা ফিরতে পারে
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
পর্যটনের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি বছর মার্চ মাসের মধ্যে সেই টাকায় প্রকল্প রূপায়ণের কথা ছিল। অথচ এখনও বেশিরভাগ কাজ শুরু করা দূর, দরপত্রও আহ্বান করা যায়নি! ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। সম্প্রতি এ নিয়ে রাজ্য পর্যটন দফতর একটি বৈঠক করে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে জেলা প্রশাসনের তরফে উপস্থিত প্রতিনিধিদের রাজ্য পর্যটন দফতর জানিয়ে দেয়, এ ভাবে গড়িমসি করলে টাকা ফেরত চলে যাবে।
টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন কাজ হল না? এ নিয়ে বন দফতর ও সাধারণ প্রশাসনের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিস সামন্তের দাবি, “কিছু কাজ হয়েছে। কিছু কাজের দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে সব কাজ শুরু করে দেওয়া যায়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” কিন্তু মার্চের মধ্যে তো কাজ শেষ করার কথা ছিল? ডিএফও-র জবাব, “কিছু ক্ষেত্রে আনুমানিক ব্যয়ের হিসেবে ত্রুটি থাকায় দ্বিতীয়বার করতে হয়েছে। কিছু কাজ বিডিও-র মাধ্যমে করা হবে না বন দফতরের মাধ্যমে করা হবে তা নিয়ে টানাপোড়েন চলে। এ সব কারণেই কিছুটা দেরি হয়েছে।” জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির বক্তব্য, “প্রায় সব কাজই বন দফতর করছে। কী ভাবে কাজগুলি দ্রুত শেষ করা যায় সে ব্যাপারে বন দফতরকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।”
জঙ্গলমহলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধুমাত্র জঙ্গলমহলের জন্যই রয়েছে বিশেষ প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি)। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, পর্যটনের উন্নয়নেও টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যটন প্রসারে কেন্দ্র দু’দফায় প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রায় ১ কোটি টাকা যোগ করে ২০১২ সালের শেষ দিকে ৯টি প্রকল্প রূপায়িত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২০১৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সব কটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। হাতে আর একমাস বাকি থাকলেও প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই প্রকল্পে হাতিবাড়িতে একটি গেস্ট হাউস তৈরি হয়েছে। তবে তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা যায়নি। ফলে পর্যটকেরা যেতে পারছেন না। আর ঝাড়গ্রাম শহরে বাঁদরভুলায় একটি গেস্ট হাউস তৈরি হয়েছে। সেখানে অবশ্য নিয়মিত পর্যটকরা আসেন। বাকি ৭টি প্রকল্পের মধ্যে দু’টির ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করা হলেও পুরো টাকার করা যায়নি। কোথাও কিছুটা রাস্তার জন্য, আবার কোথাও ইকো-ট্যুরিজমের কিছুটা কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যা অবস্থা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা পড়েই রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন অংশে ঘন জঙ্গল রয়েছে। ফলে, ওই সব এলাকার একাধিক জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। এক সময় ছুটির দিনে বহু পর্যটক ঝাড়গ্রামের নানা এলাকায় ঘুরতে আসতেন। কিন্তু মাওবাদী সক্রিয়তার বাড়বাড়ন্তে পর্যটকের আনাগোনা ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। এখন জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। তাই ফের ঝাড়গ্রামকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সাহায্যও মিলেছে। ঠিক হয়েছিল, হাতিবাড়িতে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে একটি গেস্ট হাউস তৈরি করা হবে। বাঁদরভুলায় গেস্ট হাউস তৈরি, চিল্কিগড়-কনকদুর্গা মন্দির সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন, কাঁকড়াঝোর থেকে ভুলাভেদা পর্যন্ত ট্রেকিং রুট তৈরি, কাঁকড়াঝোর বিট অফিসের কাছে ইকো ট্যুরিজম পার্ক, কেটকিঝোরে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র, ঘাঘরা ফলসে যাওয়ার জন্য সুন্দর রাস্তা তৈরি ও এলাকার উন্নয়ন, রত্নেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন, গাড়রাসিনি পাহাড় এলাকার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। যাতে ঝাড়গ্রামকে কেন্দ্র করে পর্যটকেরা সর্বত্রই যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু পরিকল্পনাই সার। |
|
|
|
|
|