|
|
|
|
নীতীশকে আক্রমণ করে দল থেকে বহিষ্কৃত শিবানন্দ |
স্বপন সরকার • পটনা
২৭ ফেব্রুয়ারি |
দলবিরোধী, বিশেষ করে নীতীশের বিরুদ্ধে কথা বলে বহুবার দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। এমনকী আজও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আরজেডি ভাঙার প্রধান কারিগর বলেছিলেন শিবানন্দ তিওয়ারি। এ রকম যদি চলতে থাকে তা হলে ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি যে আরও খারাপ হবে, তা বিলক্ষণ বুঝে বহিষ্কার করা হল জেডিইউয়ের রাজ্যসভা সাংসদ তথা প্রাক্তন সর্বভারতীয় মুখপাত্র শিবানন্দ তিওয়ারিকে।
এই খবর দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী বলেন, “দল বিরোধী কাজের জন্য তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ রকম চলতে পারে না।” উল্লেখ্য, গত কালই প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লাকে একই অভিযোগে দল থেকে বের করে দিয়েছে সিপিএম। সে কথা উল্লেখ করে জেডিইউয়ের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সিপিএম তাঁদের ৪৫ বছরের পুরনো পার্টি সদস্যকে দলের স্বার্থেই বের করে দিয়েছে। আমাদের এই নেতা তো মাত্র পাঁচ বছর দলে এসেছেন।” আর বহিষ্কারের খবর শুনে শিবানন্দ তিওয়ারির প্রতিক্রিয়ায় মনে হয় না এই খবর তাঁর কাছে খুব অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি বলেন, “দল থেকে বের করতে গেলে কিছু যুক্তি তো সামনে খাড়া করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। ঠিকই আছে।” তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে তিনি কী করবেন, ভোটের আগে কোনও দলে যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে এখনই অবশ্য কিছু বলতে চাননি শিবানন্দ।
শিবানন্দ তিওয়ারি |
দলের এই প্রবীণ সাংসদ ২০০৮ সালে আরজেডি থেকে নীতীশের দল জেডিইউয়ে যোগ দেন। জেডিইউয়ের এক নেতার কথায়, তাঁর লক্ষ্য ছিল সাংসদ হওয়া। লালুর দলে থেকে তা তিনি হতে পারছিলেন না। নীতীশ কুমার তাঁকে সংসদে পাঠাতে রাজি হন। এই শর্তেই তিনি জেডিইউয়ে যোগ দেন। নীতীশও প্রতিশ্রুতি মতো তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেন। তিনি যে দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ হতে পারবেন না এটা বুঝেই শিবানন্দ ক্রমশ নীতীশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে থাকেন। কিন্তু এ বার আর চাপের মুখে নীতীশ হার মানেননি। তাঁকে রাজ্যসভায় পুনরায় মনোনয়ন দেননি। বলেছিলেন, লোকসভায় প্রার্থী হয়ে জিতে আসতে। তবে তিনি যে লোকসভায় লড়তে রাজি নন, তা দলকে জানিয়ে দেন শিবানন্দ। এরপরেই নীতীশ-বিরোধী জেহাদ শিবানন্দ আরও তীব্র করেন।
এর আগে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে নভেম্বরে রাজগিরের দলীয় সম্মেলেনে নীতীশের সামনে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তার প্রশংসা করেন। তা নিয়ে শিবানন্দের ব্যাখ্যা ছিল, “আমি যা বলতে চেয়েছি তা নীতীশ কুমার বুঝতে পেরেছেন।” এরপরে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট গড়ার পক্ষেও সওয়াল করেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যায় রাজ্যসভার মনোনয়ন ঘিরে। তিনি প্রকাশ্যে নীতীশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন। তা নিয়ে কিন্তু জেডিইউ নেতৃত্ব কার্যত চুপ করেই ছিলেন। শুধু নীতীশ বলেছিলেন, “শিবানন্দ যা চেয়েছিলেন, আমি তা দিয়েছি। তাঁকে সংসদে পাঠিয়েছি।” এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সেই সময় নীতীশ একটি কথাও বলেননি।
কিন্তু আজ জেডিইউয়ে নিজের কফিনের শেষ পেরেকটি পুঁতে দিলেন শিবানন্দ নিজেই। আরজেডি-র বিতর্কিত ১৩ বিধায়ককে নিয়ে যখন রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়, সেই সময় শিবানন্দ নীতীশকে কটাক্ষ করে বলেন, “আরজেডি ভাঙার নায়ক এখন কিছু না জানার ভান করছেন।” শিবানন্দের এই মন্তব্য সম্পর্কে নীতীশকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “সব কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।” এর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই জেডিইউ নেতৃত্ব বহিষ্কার করলেন শিবানন্দকে। দিল্লি থেকে দলের মুখপাত্র কে সি ত্যাগী বহিষ্কারের খবর সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন। পটনায় রাজনীতিকদের খবর, শিবানন্দ আরজেডিতে ফের ফিরে যেতে পারেন। দেড় বছর আগেই তাঁর ছেলে মন্টু তিওয়ারি আরজেডিতে যোগ দিয়েছেন। সেই অঙ্ক মেনে বর্ষীয়ান এই ব্রাহ্মণ নেতা ফের পুরনো ঘরেই ফিরবেন।
শিবানন্দের সঙ্গে আজ দলের আর এক রাজ্যসভা সাংসদ, সুশীল সিংহকেও দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করেছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|