ধরা দিলেন না সহারা কর্তা সুব্রত রায়।
সুব্রতবাবুকে গ্রেফতারের জন্য লখনউয়ে তাঁর বাড়িতে বৃহস্পতিবার হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু সেখানে তাঁর দেখা মেলেনি। সহারা হাসপাতালে ভর্তি ৯২ বছরের বৃদ্ধা মায়ের পাশেই তাঁকে থাকতে হচ্ছে দাবি করে সুব্রতবাবু বুধবার সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা না-দিলেও, হাসপাতালেও তাঁকে পায়নি পুলিশ। উপরন্তু মা বাড়িতেই আছেন বলে জানিয়েছে তারা।
তবে শীর্ষ আদালতের কাছে বৃহস্পতিবার নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সহারা ইন্ডিয়ার সর্বময় কর্তা। হাজির হতে না-পারার জন্য তিনি এ দিন ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ দিন নিজের ‘ভুল’ স্বীকারও করেন সহারা কর্তা। তিনি জানান, তাঁর ‘বুঝতে ভুল’ হয়েছিল, আদালত মায়ের অসুস্থতার কারণে তাঁকে একদিনের জন্যও হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেবে না। সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মাফিক আগামী ৪ মার্চের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে ব্যক্তিগত ভাবে হাজির হওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল করার আবেদনও সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছে। আবেদনটির শুনানি না-হওয়া পর্যন্ত ওই পরোয়ানা কার্যকর করা স্থগিত রাখার আর্জি জানান সুব্রতবাবু। |
সুব্রত রায়ের বাড়ি সহারা শহরে লখনউ পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
|
নির্দেশ মেনে লগ্নিকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা না-মেটানোয় আদালত অবমাননার মামলায় বুধবার হাজিরা না-দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন এবং জে এস খেহরকে নিয়ে গড়া ডিভিশন বেঞ্চের জারি করা এই গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েই বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ লখনউয়ে সহারা কর্তার প্রাসাদোপম ভবন ‘সহারা শহর’-এ পা রাখে লখনউ পুলিশ। গোমতীনগর থানা থেকে আসা ওই দলকে অবশ্য শূন্য হাতেই ফিরতে হয়।
পুলিশ সুব্রতবাবুর বাড়িতে পৌঁছনোর পরেই এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের দলটি ২৭০ একর জুড়ে বিস্তৃত ভবনটি ঘিরে ফেলে। প্রবেশ ও প্রস্থানের সব ক’টি রাস্তায় মোতায়েন করা হয় পুলিশের গাড়ি। বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢোকা-বেরোনো। গোমতীনগর থানার সার্কেল অফিসার ভি এস মিশ্র জানান, “গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতেই দলটি এখানে এসেছে।” কিন্তু পুলিশের সব প্রচেষ্টাই বিফলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোমতীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত স্টেশন হাউস অফিসার অজিত সিংহ চহ্বাণ জানিয়ে দেন, বাড়ির ভিতরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও সুব্রত রায়কে পাওয়া যায়নি। সহারা হাসপাতালে অসুস্থ মায়ের শয্যার পাশেই তাঁকে থাকতে হচ্ছে বলে বুধবার আদালতে দাখিল করা আর্জিতে দাবি জানান সহারা কর্তা। ওই কারণ দেখিয়েই আইনজীবী রাম জেঠমালানি সুব্রতবাবুকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে বলেছিলেন। জেঠমালানি সহারা হসপিটালের এক বিবৃতিও দাখিল করেন। দু’জন চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, সুব্রতবাবুর মা হৃদরোগে আক্রান্ত। ‘চিকিৎসাগত ও মানবিক’ কারণে তাঁর পাশে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুব্রত রায়ের থাকা একান্ত প্রয়োজন। জেঠমালানি মঙ্গল ও বুধবার পরপর দু’দিন এই একই আর্জি জানালে শীর্ষ আদালত তা খারিজ করে দেয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুলিশ সূত্রের খবর, হাসপাতালে গিয়েও সুব্রতবাবুকে পায়নি পুলিশ। গোমতীনগর সংলগ্ন এলাকার পুলিশের অতিরিক্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট হাবিবুল হাসান জানান, মাকে তাঁরা বাড়িতেই দেখতে পান!
হাসান আরও জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য যা যা প্রয়োজন, পুলিশ সবই করবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সহারা কর্তাকে আগামী ৪ মার্চই আদালতে হাজির করাবে তারা। |