ধসা রোগের আক্রমণে টোম্যাটোর ফলন এ বছর অর্ধেক হওয়াতে বিপাকে হলদিবাড়ির কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত বছর দেরিতে বর্ষা বিদায় নেওয়ায় এবারের টোম্যাটোর মরসুম তিন সপ্তাহ পিছিয়ে গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারির মাঝ থেকেই টোম্যাটোর ফলন হওয়ার কথা। কিন্তু টোম্যাটো তোলার মত অবস্থায় আসার আগে প্রথমে কুয়াশা, তারপর বৃষ্টি-এই দুইয়ের প্রবল ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। চাষিরা জানিয়েছেন, এই রোগ গাছ এবং টমেটো দু’য়ের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। টোম্যাটোর গায়েও কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। সেই দাগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে টোম্যাটোগুলি পচে যাচ্ছে।
হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্রী বলেন, “গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ছত্রাকের প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটেছে। আগে যে ওষুধ প্রয়োগ করে ধসা রোগের হাত থেকে গাছকে বাঁচানো যেত। এখন সেই ওষুধের কার্যকারিতা কমে গিয়েছে। ব্লকে অর্ধেক টোম্যাটো খেত এ বার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করে ধসা রোগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।” ব্লকের কৃষকেরা জানান, জেলা কৃষি দফতরের পরামর্শ মতো ধসা রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করেও আপাতত কোনও রকম লাভ হচ্ছে না। অধিকাংশ চাষি ঋণ নিয়ে চাষ করেন। ঠিকঠাক ফলন না হলে সেই ঋণ কী করে তাঁরা শোধ করবেন, তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না ওই চাষিরা। |
হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ রায় নিজে কৃষক। ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ নিয়ে দু-বিঘা জমিতে টোম্যাটো চাষ করেছিলেন। ধসা রোগের আক্রমণের এখন তাঁর মাথায় হাত। একই অবস্থা বক্সিগঞ্জের কৃষক খয়েবর রহমানের। তিনিও কৃষি ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে টোম্যাটো লাগিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, প্রথমে গাছে পাতায়, কাণ্ডে কালো দাগ হচ্ছে, সেই অংশ পচে ফুটো হয়ে যাচ্ছে। গাছ মরতে থাকছে আর টোম্যাটোর গায়ে কালো দাগ ছড়িয়ে তা পচে যাচ্ছে। কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের কাছে কৃষি ঋণ মুকুবের আবেদন জানাব।”
হলদিবাড়ির ১১০০ হেক্টর জমিতে টোম্যাটো চাষ হয়ে থাকে। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজারে ফেব্রুয়ারির শেষে গত বছর অবধি প্রতিদিন ৪৫০ টন টোম্যাটো গিয়েছে। চলতি বছরে এ সময় তা কমে গিয়েছে, বুধবার সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে, ২২৫ টন। কম আমদানির কারণে দামও বেড়েছে টমেটোর। ওই সময় কৃষকেরা ৫ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি করেছিলেন। বুধবার তা দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজার সূত্রের খবর, গোটা উত্তর ভারতে টোম্যাটোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলন কম হওয়ায় জোগান কমে গিয়েছে। হলদিবাড়ি পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রণব চক্রবর্তী বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী টোম্যাটো এ বার আর বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। উত্তর ভারতের অধিকাংশ ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।” |