স্কুলে পুনর্মিলনে যোগ দিয়ে চক্ষুদানের অঙ্গীকার
শুধু স্মৃতিমেদুর হওয়া নয়। সমাজের জন্য কিছু করতে হবে। এমনই ভেবেছিলেন এমএএমসি বয়েজ হাইস্কুলের ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক দেওয়া কতিপয় পড়ুয়া। সম্প্রতি তাঁদের প্রাক্তনী সম্মেলন তাই কার্যত হয়ে উঠল ‘চক্ষুদানের অঙ্গীকার উৎসব’।
স্কুলের সস্ত্রীক প্রাক্তন শিক্ষক ও পড়ুয়াসব মিলিয়ে ২৫ জন সে দিনই চক্ষুদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করলেন। আরও অনেকে ফর্ম নিয়ে গিয়েছেন, দ্রুত তা পূরণ করে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে। শুধু তাই নয়, বাড়ি ফিরে তাঁরা প্রতিবেশী, পরিজনদেরও উদ্বুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে হাজির ‘দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র কর্তারা জানাচ্ছেন, চক্ষুদান নিয়ে সচেতনতা গড়তে হিমসিম দশা তাঁদের। সেখানে একযোগে ২৫ জন রাজি হওয়া রীতিমতো নজির এই শহরে।
রাষ্ট্রায়ত্ত এমএএমসি কারখানা চালু হয় ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে। খনির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্রপাতি তৈরি হত এখানে। এমএএমসি আবাসন এলাকার মধ্যে একটি বেসরকারি স্কুল চালু ছিল। ১৯৬৮ সালে স্কুলটি অধিগ্রহণ করেন এমএএমসি কর্তৃপক্ষ। নতুন শিক্ষিক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। কারখানার কর্মীরা তো বটেই, বাইরে থেকেও পড়ুয়ারা এখানে পড়তে আসত।
চলছে সইসাবুদের কাজ।
কিন্তু কারখানা রুগ্ণ হতে শুরু করতেই স্কুলেও সমস্যা শুরু হয়। ১৯৯২ সালে এমএএমসি বিআইএফআর-এর অধীনে চলে যায়। পাকাপাকি ভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যায় ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি। কারখানার প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারী স্বেচ্ছাবসর (ভিএসএস) নেন। অধিকাংশ শিক্ষকও স্বেচ্ছাবসর নেন। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল।
সেই স্কুল থেকেই পড়াশোনা করে এখন দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় থাকেন দুর্গাপুরের অনেকে। ১৯৯০ সালে এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া পড়ুয়াদের কয়েক জন গত বছর ১০ নভেম্বর উদ্যোগী হন, প্রাক্তনী সম্মেলন করতে হবে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে তাঁরা যোগাযোগ শুরু করে দেন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সহপাঠীদের সঙ্গে। ঠিক হয়, শুধু সহপাঠীরা নয়, তাঁদের স্ত্রীরাও সামিল হবেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় সস্ত্রীক প্রাক্তন শিক্ষকদেরও।
২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল সেই পুনর্মিলন উৎসবের দিন। প্রায় আড়াই দশক পরে সে দিন সকালে স্কুলে ঢুকে আবেগ বাঁধ মানেনি অনেক পড়ুয়া ও শিক্ষকেরই। স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে একটি বড় হলঘরে আনা হয়। সেখানে মৃত সহপাঠী ও মৃত শিক্ষকদের স্মরণে নীরবতা পালন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক পরিতোষ সেনচৌধুরী। সম্পাদক ছিলেন আর এক প্রাক্তন শিক্ষক শঙ্কর পুইতন্ডি। শিক্ষক-পড়ুয়ারা স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন। ছিল গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। তবে সব কিছুকে পিছনে ফেলে দেয় চক্ষুদানের অঙ্গীকারের সিদ্ধান্ত।
‘ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র কর্তারা হাজির ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। তাঁদের সামনে চক্ষুদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করে কার্ড নেন মোট সাত জন শিক্ষক। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পাঁচ জনের স্ত্রী-ও। পড়ুয়াদের মধ্যে ১৩ জন চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেন। প্রাক্তন শিক্ষক শান্তি কুণ্ডু, শঙ্কর পুইতন্ডি, আশিস গুপ্তেরা বলেন, “আমাদের দেখে যদি আরও অনেকে এগিয়ে আসেন, খুব খুশি হব।” প্রাক্তনীদের পক্ষে সৌমেন রাউথ বলেন, “এই প্রচেষ্টায় যোগ দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।” ‘ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র অন্যতম কর্তা কাজল রায়েরও প্রতিক্রিয়া, “এমন উদ্যোগে আমরা খুশি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.