পার্কিং ফি হিসেবে যেখানে দু’টাকা নেওয়ার কথা, সেখানে কুপন ছাপিয়ে চার টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোটরবাইক ও স্কুটার আরোহীদের অনেকেরই বক্তব্য, বিষয়টি পুরসভার নেতা-কর্তাদের একাংশকে বহুবার জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট টাকা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে, দিনে-দুপুরে রোজই গড়ে নানা এলাকায় গাড়ির মালিক ও বাইক আরোহীদের কাছ থেকে জবরদস্তি কয়েক হাজার টাকা আদায় হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সব জেনেও পুরসভা ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করায় শহরে নানা জল্পনা চলছে। যে হেতু পার্কিংয়ের লাইসেন্স প্রাপ্তদের মধ্যে একাধিক কংগ্রেস নেতা রয়েছেন, সে জন্য কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা অভিযোগ পেয়েও হাত গুটিয়ে রয়েছে কি না তা নিয়েও ভুক্তভোগীদের মধ্যে জল্পনা চলছে। শুধু তা-ই নয়, পুরসভার অফিসার-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে পার্কিং ফি আদায়ে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব। জবরদস্তি যাতে বেশি হারে পার্কিং ফি আদায় না হয়, তা দেখতে পুলিশকেও বলব।” শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের একাধিক অফিসার জানান, পুরসভার পক্ষ থেকে লিখিত অনুরোধ পেলেই পার্কিং ফি আদায়কারীদের সমস্ত নথিপত্র ও টাকা আদায়ের স্লিপ পরীক্ষা করা হবে।
|
বস্তুত, পার্কিং ফি আদায়ের নামে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ শিলিগুড়িতে নতুন কিছু নয়। অতীতেও একাধিকবার সেবক রোড, হিলকার্ট রোড, বিধান রোডে ওই অভিযোগ উঠেছে। দু’য়েকটি ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা আদায়ের জন্য পার্কিং লাইসেন্স বাতিলও করেছে পুরসভা। ইদানীং কোনও ক্ষেত্রেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেমন, পুরসভার পার্কিং-এর ১ নম্বর জোনের কথাই ধরা যাক। শিলিগুড়ির স্টেশন রোড অর্থাৎ হাসমি চকের কাছাকাছি এলাকা থেকে মহানন্দা সেতুর দিকে যেতে বাঁ দিকে পার্কিংয়ের লাইসেন্স প্রাপ্ত ঠিকাদারের নাম হল প্রশান্ত সিংহল। যিনি যুব কংগ্রেসের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। প্রশান্তবাবু সেবক রোডের ‘কসমস’ মল এলাকার সামনের পার্কিং ফি আদায়ের লাইসেন্সও পেয়েছেন।
পুর বিধি অনুযায়ী, ওই এলাকায় কোনও বাইক রাখা হলে প্রথম দু’ঘণ্টার জন্য দু-টাকা দিতে হবে। কিন্তু, হিলকার্ট রোড ও শপিং মলের সামনে যে স্লিপ ছাপানো হয়েছে তাতে মাঝখানে চার টাকা লিখে গোল করে রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ফি আদায়কারীরা ন্যূনতম ৪ টাকা দিতে হবে তা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ আপত্তি করলে তর্কাতর্কি শুরু হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুটার, বাইক আরোহীদের কয়েকজন আদায়কারী মিলে ঘিরে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার এক মহিলার অভিযোগ, তিনি হিলকার্ট রোডে সিপিএম অফিসের দিকের সারিতে ১ ঘণ্টা গাড়ি রাখার পরে তাঁর কাছ থেকে জবরদস্তি ৬০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এমন অভিযোগ রোজই উঠছে বলে শহরের একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা স্বীকার করেছেন। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, যে অভিযোগ উঠছে তা সত্যি হলে অফিসের দিনে গড়ে রোজ ৪-৫ হাজার টাকা জবরদস্তি আদায় হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই ঘটনা সত্যি কি না তা দেখা হোক। সেই সঙ্গে যাঁরা ওই ধরনের স্লিপ ছাপিয়েছেন, তাঁদের লাইসেন্স আপাতত স্থগিত রাখলে পুরসভার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না বলে শহরবাসীরা অনেকে মনে করেন।
এই ব্যাপারে পার্কিংয়ের লাইসেন্স প্রাপ্ত ঠিকাদার তথা যুব কংগ্রেস নেতা প্রশান্তবাবু বলেন, “বাড়তি ফি আদায়ের অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের অগোচরে হয়ে থাকলে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু, স্লিপ ছাপাল কে? তাতে কেন ওই ভাবে লেখা হয়েছে? জবাবে প্রশান্তবাবুর যুক্তি, “মুদ্রণ প্রমাদ হয়ে থাকতে পারে। সেটা ঠিক করতে হবে।”
এখন পুরসভা কী করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। |