যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে জলপথ পরিবহণের উপর। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার নদীগুলিতে জেটিঘাটগুলির অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তার উপর বহু এলাকাতেই আজও নদীতে পাকা জেটিঘাট না থাকায় স্থানীয় মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিত্য যাতায়াত করতে হয়। ওই সব এলাকার মানুষের বক্তব্য, বহু জায়গাতেই যাতায়াতে পাকা রাস্তা বা সেতু তাঁদের কাছে স্বপ্ন। কিন্তু সরকার নদীপথে যাতায়াত সুগম করতে যদি নদীগুলিতে জেটিঘাট তৈরি করেন এবং যে জেটিগুলি রয়েছে সেগুলির সংস্কার করেন তাহলেও তাঁদের উপকার হয়। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে। এমনকী রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পরেও সুন্দরবনের মানুষদের যাতায়াতের সুবিধার দিকে সে ভাবে নজর দেওয়া হয়নি।
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরা বলেন, “সুন্দরবনের মানুষের যাতায়াতে অসুবিধার কথা ভেবে আমরা বেশ কিছু নতুন জেটিঘাট বানিয়েছি। আরও কিছু জেটিঘাট তৈরির কাজও শুরু করা হবে।” |
স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার গোসাবা ব্লকের বালি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আমলামেথি, সাতেরকোনা-সহ ওই দ্বীপগুলির বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে গোসাবা ব্লক, থানা, হাসপাতাল বা বিভিন্ন সরকারি দফতরে আসতে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। সড়কপথে বালি বাজার থেকে মোটরভ্যানে বিরাজমণি ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। সেখান থেকে বিদ্যানদী পেরিয়ে গোসাবায় পৌঁছতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর বিরাজমণি ঘাটে কংক্রিটের জেটিঘাট তৈরি হলেও উল্টোদিকে আশ্রমঘাট আগের অবস্থাতেই থেকে গিয়েছে। গড়ে ওঠেনি কোনও জেটিঘাট। ইটের বোল্ডার ফেলে অস্থায়ী ভাবে তৈরি ঘাট দিয়েই রোজ পারাপার করতে হয় স্কুলপড়ুয়া থেকে অফিসযাত্রীদের। এমনকী রোগী নিয়ে তাঁর বাড়ির লোকজনদেরও। কাজের তাগিদে রোজই গোসাবায় যাতায়াত করতে হয় বালির বাসিন্দা অনিল মণ্ডলকে। তাঁর কথায়, “আগে গোসাবা থেকে কাজ মিটিয়ে ফিরে আসতে সারাদিন লেগে যেত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় বালি বাজার থেকে বিরাজমণি ঘাট পর্যন্ত কংক্রিটের রাস্তা হওয়ায় মোটর সাইকেলে অনেক তাড়াতাড়িই ঘাটে পৌঁছনো যায়। কিন্তু বিরাজমণি ঘাটে জেটি হলেও ওপারে আশ্রমঘাটের অবস্থা একই রয়েছে। ফলে তাড়াতাড়ি ঘাটে পৌঁছলেও জেটিঘাটের অব্যবস্থার কারণে দেরি হচ্ছে। তার উপর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওপারে নামাওঠা করতে হচ্ছে।”
সুন্দরবন নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের সঙ্গে গোসাবার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই করুণ। অধিকাংশ নদীতে আজও জেটিঘাট নেই। এ নিয়ে বহুবার দাবি জানানো হয়েছে। জানানো হয়েছে বিডিওকেও।” বিডিও সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গোসাবা ব্লকের বেশ কিছু জেটিঘাটের সংস্কার এবং কয়েকটি নতুন জেটিঘাট তৈরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” |