ট্রান্সফর্মারে কারসাজি করে এলাকায় অন্ধকার নামানো হয়েছিল। সেই অন্ধকারের সুযোগে হামলা করা হয়েছিল তৃণমূল নেতা রজ্জাক সর্দারের (৫২) উপরে। ভাঙড়-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের ওই পূর্ত কর্মাধক্ষ্য খুনের ঘটনায় দলেরই দুই
|
রজ্জাক সর্দার। |
পঞ্চায়েত সদস্য-সহ চার জনকে গ্রেফতার করার পরে, এমনই দাবি করেছে পুলিশ। খুনের মামলায় তৃণমূলের মোট ১১ জন স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার পরেই ভাঙড়-১ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি জাহাঙ্গির খান চৌধুরী পলাতক।
মঙ্গলবার রাতে রজ্জাক খুনের পরেই সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জেলা তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল। বুধবার দুপজালি গ্রামে নিহত নেতার বাড়িতে সেই শক্তিবাবু এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের শামিমা শেখের সামনে জাহাঙ্গিরকে চরম শাস্তি দেওয়ার দাবি ওঠে। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়া তৃণমূল নেতাকে বলতে শোনা যায়, “দলীয় মতবিরোধ থেকে অনুচিত ঘটনা ঘটে গিয়েছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে ভাঙড়ের তৃণমূল সদস্য কাইজার আহমেদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন রজ্জাক। জাহাঙ্গির খান চৌধুরী ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের অনুগামী বলেই এলাকায় পরিচিত। স্থানীয় রাজনীতিতে আরাবুল এবং কাইজার গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা নতুন নয়। মাসখানেক আগেই ঘটকপুকুরে তৃণমূল যুবার সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই আরাবুল এবং কাইজারের অনুগামীরা বিরোধে জড়ান। তার পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে দলের সবাইকে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে বার্তা দেন পার্থ ও অভিষেক। রজ্জাক খুনের পরে তৃণমূল নেতা-কর্মী বলছেন, “বোঝাই যাচ্ছে, সে বার্তায় কাজ হয়নি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভাঙড়-১ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় রাস্তা মেরামতের জন্য পূর্ত দফতর ২২ লক্ষ টাকার টেন্ডার ডাকে। কাইজার গোষ্ঠীর দাবি, ওই কাজের বরাত তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের দিতে রজ্জাকের উপরে চাপ দেন জাহাঙ্গির। তা নিয়ে গত দু’জনের প্রকাশ্যে বচসাও হয়। এ দিন রজ্জাকের স্ত্রী রাজিয়া বিবির অভিযোগ, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই স্বামী খুন হয়েছেন। জাহাঙ্গির চক্রান্ত করে ওঁকে খুন করেছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে জীবনতলা থানার সিংহেশ্বর বাজারের চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন রজ্জাক। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, আচমকা বিদ্যুৎ চলে যায়। ১২-১৪ জনের একটি দল চায়ের দোকানটি ঘিরে ফেলে। কয়েক জনের মুখে ঢাকা ছিল। রজ্জাক দোকানের বাইরে আসতেই তাঁর মাথায় রিভলবারের বাঁট দিয়ে মারা হয়। চোট পেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর মাথায় ও পিঠে চপার দিয়ে একাধিক কোপ মারা হয়। তারপরে আততায়ীরা। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা রজ্জাককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিনই চার অভিযুক্তকে ধরে পুলিশ। দু’জন হলেন স্থানীয় দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সফেদ আলি গায়েন, সমীর রুইদাস। অন্য দুই ধৃত কর্ণ নস্কর এবং শিবনাথ দাসও এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। বারুইপুর আদালত ধৃতদের ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
রজ্জাকের দেহ নিয়ে এলাকায় মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীরা। কাইজার আহমেদের ক্ষোভ, “জাহাঙ্গির নানা ভাবে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তা শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” জেলা তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তিবাবু বলেন, “জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলীয় ভাবে দেখা হচ্ছে। সিদ্ধান্তের আগেই এমন ঘটে গেল!” আর আরাবুল ইসলামের মন্তব্য, “দলে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু খুনের ঘটনা নিন্দনীয়।” |