|
|
|
|
চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও হারল ম্যান ইউ |
মোয়েসের সংসারে অশান্তির আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদন
২৬ ফেব্রুয়ারি |
মাটিতে পাথর পড়ার থেকেও দ্রুত নামছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের পারফরম্যান্স গ্রাফ। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, ক্যাপিটাল ওয়ান কাপে জঘন্য ব্যর্থতার পর এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম পর্বেও অলিম্পিয়াকোসের কাছে ০-২ হারল ডেভিড মোয়েসের টিম। যে হারে মোয়েসের সংসারে অশান্তির আগুনও ছড়িয়ে পড়ল। টিমের তারকা স্ট্রাইকার রবিন ফান পার্সি সরাসরি তোপ দাগলেন সতীর্থদের বিরুদ্ধে।
ম্যাচের পর ফান পার্সি একটি ডাচ টিভি চ্যানেলকে বলেন, “আমি মাঠের যে অঞ্চলে খেলতে চাইছিলাম, সতীর্থদের কয়েক জন সেখানে চলে আসছিল বারবার। ফলে আমি ওই জায়গাটায় যেতে পারছিলাম না। দৌড়তেও পারছিলাম না খুব বেশি। এটা সত্যিই লজ্জার।” ফান পার্সির বিস্ফোরক অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবারের ম্যাচে ম্যান ইউ মিডফিল্ডারদের থেকেও ফান পার্সিকে বেশি পাস দিয়েছেন গোলকিপার দাভিদ দ্য গিয়া। দু’টি। আর মাইকেল ক্যারিক, অ্যাশলে ইয়ং, ড্যানি ওয়েলবেকরা বাড়িয়েছেন একটি করে পাস। |
|
অশান্তির পাশাপাশি মোয়েসের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ম্যাচের পর পরই একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ম্যান ইউ হয়তো সরিয়ে দেবে মোয়েসকে। ক্লাবের তরফে রাত পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
অ্যাওয়ে ম্যাচে এই হারের ধাক্কা এতটাই প্রবল যে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আশা প্রায় শেষ বলেই ধরে নিচ্ছেন ম্যান ইউ সমর্থকরা। ঘরের মাঠে হলেও এই টিম নিয়ে দ্বিতীয় লেগে ৩-০ ব্যবধানে অলিম্পিয়াকোসকে হারিয়ে দেবেন রুনি-ফান পার্সিরা, এ আশা ক্লাবের অতি বড় সমর্থকও করছেন না। এক দিকে যেমন মোয়েসের মুণ্ডপাত চলছে, অন্য দিকে তেমনই ‘রেড ডেভিলস’-এর প্রাক্তন তারকারা আবার ফুটবলারদের দিকেই আঙুল তুলছেন। ম্যান ইউ-র প্রাক্তন অধিনায়ক রয় কিন যেমন চাঁচাছোলা ভাষায় বলে দেন, “প্লেয়ারদের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। আর এমন কিছু প্লেয়ার আছে যাঁদের এই ম্যাচে নামার যোগ্যতাই নেই। দলটাকে গুছিয়ে তুলতে ছ’-সাত জন নতুন প্লেয়ার দরকার। আমার তো মনে হয় ডেভিড মোয়েস টিমের কয়েক জনের যোগ্যতা দেখে শক্ড।” প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকা গ্যারি লিনেকার টুইট করেছেন, “অতীতে হয়তো ম্যান ইউ কয়েকটা ম্যাচ খারাপ খেলেছে, তবে এ রকম একটা মাঝারি মানের দলের বিরুদ্ধে এত জঘন্য, হতাশাজনক পারফরম্যান্স শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ছে না।”
মোয়েস যদিও ব্যর্থতার সব দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে বলেছেন, “আমিই দায়টা নিচ্ছি। ইউরোপে এত খারাপ আমরা বোধহয় খেলিনি। সত্যিই খুব খারাপ পারফরম্যান্স। শুরু থেকেই ছন্দ ছিল না। আর এ রকম পারফর্ম করলে আমাদের কাছে কিছু আশা করা যায় না।” সঙ্গে ম্যান ইউ কোচ যোগ করেন, “প্লেয়াররাও যথেষ্ট আঘাত পেয়েছে। ওরা জানে কী মাঠে করেছে। তবে আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে হবে। এর আগেও ম্যান ইউ কঠিন পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি এ রকমই একটা দিন আবার আসবে।” তবে কিনের খোঁচার উত্তরে যদিও প্লেয়ারদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। বলেছেন, “ম্যান ইউয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এ দিন আমরা সেটা কাউকে বোঝাতে পারিনি।”
মোয়েসের কথাতেই স্পষ্ট, গ্রিসের কারাইসকাকিস স্টেডিয়ামে তাঁর টিম মঙ্গলবার কেমন খেলেছে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আলেজান্দ্রো ডমিংগেজ আর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জোয়েল ক্যাম্পবেলের গোলে পাঁচ বারের সাক্ষাতে এই প্রথম গ্রিসের চ্যাম্পিয়ন টিমের কাছে হারল গত বারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। অ্যালেক্স ফার্গুসন দায়িত্ব ছাড়ার ন’মাসের মধ্যে ম্যান ইউয়ের হতশ্রী অবস্থা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। যে জয়ে ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন দেখছে অলিম্পিয়াকোস।
প্রিমিয়ার লিগেও মোয়েসের টিম ইতিমধ্যেই খেতাবের দৌড়ের বাইরে চলে গিয়েছে। ম্যান ইউ এখন ষষ্ঠ স্থানে। চতুর্থ স্থানে থাকা লিভারপুলের থেকেও এগারো পয়েন্ট দূরে দাঁড়িয়ে (২৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট)। মোয়েসের দীর্ঘ ব্যর্থতার তালিকায় ঢুকে গিয়েছে সোয়ানসির বিরুদ্ধে এফএ কাপে তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় আর ক্যাপিটাল ওয়ান কাপে সেমিফাইনালে সান্ডারল্যান্ডের কাছে হার। দুটোই আবার ঘরের মাঠে। তবু মাঠে প্লেয়ারদের গা-ছাড়া মনোভাবের কোনও পরিবর্তন নেই।
গ্রিসের বন্দর শহর আথেন্সের লড়াইয়ে ওয়েন রুনি ও নেমানয়া ভিডিচ ছাড়া টিমের আর কোনও ফুটবলারকে দেখে মনে হয়নি পাল্টা দু’গোল শোধ দিয়ে সমতা ফেরাতে পারে ‘রেড ডেভিলস’। ম্যাচের পর ম্যান ইউয়ের মিডফিল্ডার মাইকেল ক্যারিকের কথাতেই যেন টিমের মনোভাব স্পষ্ট। ক্যারিক হারের সাফাইয়ে বলেন, “সত্যিই খুবই হতাশাজনক। তবে আমাদের এখনও মনে হচ্ছে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ আছে। জেতার আশা নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু হারতে হল। আমরা একেবারে ছিটকে যাইনি এখনও। পরিস্থিতি যদিও আদর্শ নয়।”
|
পাস |
অলিম্পিয়াকোস ৩৭৮ |
ম্যাঞ্চেস্টার ৫৮১ |
গোলে শট |
অলিম্পিয়াকোস ৪ |
ম্যাঞ্চেস্টার ১ |
বল পজেশন |
অলিম্পিয়াকোস ৩৯.৫ |
ম্যাঞ্চেস্টার ৬০.৫ |
কর্নার |
অলিম্পিয়াকোস ১ |
ম্যাঞ্চেস্টার ৪ |
হলুদ কার্ড |
অলিম্পিয়াকোস ০ |
ম্যাঞ্চেস্টার ২ |
ফাউল |
অলিম্পিয়াকোস ১০ |
ম্যাঞ্চেস্টার ১০ |
|
মোয়েসের দুঃস্বপ্নের ন’মাস |
এর আগে চার বার জিতলেও এই প্রথম অলিম্পিয়াকোসের কাছে হার
১৯৮৪-র পর প্রথম স্টোক সিটির কাছে হার
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সোয়ানসির কাছে প্রথম হার
১৯৭২-র পর ঘরের মাঠে নিউক্যাসেলের কাছে হার
১৯৯২-র পর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এভার্টনের কাছে হার
১৯৭৮-এর পর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ব্রমের কাছে হার
এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায়
ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের সেমিফাইনালে সান্ডারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হার
প্রিমিয়ার লিগে খেতাবি দৌড়ের বাইরে। এখন ষষ্ঠ স্থানে (২৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট) |
এমন কিছু প্লেয়ার আছে যাদের এই ম্যাচে নামার যোগ্যতাই নেই। মোয়েস নিশ্চয়ই এই প্লেয়ারদের দেখে শক্ড। ছ’-সাত জন নতুন প্লেয়ার দরকার।
রয় কিন |
আমিই ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি। শুরু থেকেই টিমের ছন্দ ছিল না। তবে আশা হারাচ্ছি না। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দ্বিতীয় পর্যায়ের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে হবে।
ডেভিড মোয়েস |
|
ফ্যানদের হুমকি |
একের পর এক হারের পর কোচ ছাড় পেয়ে যেতে পারেন, কিন্তু ভক্তরা নন! অলিম্পিয়াকোসের কাছে ০-২ হারের পরে ক্লাবের তরফে সতর্কবার্তা পৌঁছে গেল ম্যান ইউ ভক্তদের কাছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সিজন টিকিটের মালিকদের ই-মেলে জানিয়ে দেওয়া হল, পরের মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ ষোলোর ফিরতি ম্যাচের টিকিট তাঁদের কিনতেই হবে। না হলে তার পরের সপ্তাহে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ডার্বি ম্যাচে তাঁদের ‘সাসপেন্ড’ করা হবে! বলা হয়েছে, ১৯ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচের টিকিট বুধবার রাত আটটার মধ্যে না কিনলে ২৫ মার্চ সিটি ম্যাচে তাঁদের নির্বাসিত করে দেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|