হনুর জন্য কাতর চারঘাট
লই বা হনুমান। তা বলে কি তার দুঃখে কাঁদতে নেই?
বিদ্যুতের তারে লেগে ছিটকে পড়া হনুর বাচ্চাকে ঘিরে তার পরিজনদের কান্নাকাটি দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল গ্রামবাসীরও। তাঁরাই হনুর পারলৌকিক ক্রিয়া করলেন। লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে বুধবার হাজার পাঁচেক পাতও পড়ল স্বরূপনগরের চারঘাটে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা নাগাদ চারঘাট গার্লস হাইস্কুলের পাশে খেলছিল চারটি হনুমান। গ্রামবাসীর মতে, তারা আসলে বাবা-মা আর দুই সন্তান। মাঝে- মধ্যেই গ্রামের এর-ওর বাড়িতে দেখা যায় ওদের। সে দিন হঠাৎ ছোট হনুটি ছাদের থেকে লাফ দিয়ে পাশের বিদ্যুতের তারে গিয়ে পড়ে। নীচে আছড়ে পড়েই তার মৃত্যু হয়। নীচে নেমে দেহ ঘিরে কান্নাকাটি শুরু করে বাকি তিন হনুমান।
চলছে হনুমান শাবকের পারলৌকিক কাজ। ছবি: নির্মল বসু।
গ্রামের বুলা বারিক, লক্ষ্মী কুণ্ডুরা বলেন, “সন্তান হারানোর কষ্ট যে কী হতে পারে, তা ওদের দেখেই আমরা অনুভব করলাম।” পরে হাল ছেড়ে দিয়ে তিন হনু ছাদে উঠে গেলে গ্রামবাসী মৃত হনুটিকে একটি ভ্যানরিকশায় তোলেন। ফুলমালা, নামাবলি, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে সাজিয়ে ধূপধুনো দিয়ে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয়। খোল-করতাল নিয়ে পিছনে চলে কীর্তন-দল। আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষও যোগ দেন। সন্ধ্যায় দেহটি স্কুলের পাঁচিলের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
সমাধি তো হল। পারলৌকিক কাজকর্ম করবে কে? গ্রামেরই বৃদ্ধা তরুবালা বিশ্বাস এগিয়ে এসে বলেন, “আমার ছেলে অনাথ কাছা নেবে। পালন করবে নিয়মকানুন।” রবিবার পুরোহিত-নাপিত ডেকে, নখ কেটে, মাথা মুণ্ডন করে অনাথই হনুমানের শ্রাদ্ধ করেন। গ্রামের মানুষ বৈঠক করে কমিটি গড়েন। স্থির হয়, শ্রাদ্ধের ভোজও করা উচিত। গড়া হবে হনুমান মন্দিরও। গ্রামবাসীই চাঁদা দেবেন।
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল লাগোয়া রাস্তার পাশে বড় মণ্ডপ করে হনুমান মন্দির তৈরির আয়োজন শুরু হয়েছে। ফুলমালা সাজিয়ে, খোল-করতাল বাজিয়ে চলছে নামকীর্তন। চলছে রামায়ণ ও গীতা পাঠ। গ্রাম ভেঙে লোক আসছে। স্কুলের মাঠে সামিয়ানার নীচে সার দিয়ে পাতে পড়ছে ভাত, সবজি, ডাল, সয়াবিনের তরকারি, ফল-মিষ্টি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রায়চৌধুরী বলেন, “মানুষের ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিতেই পঠন-পাঠন বন্ধ রাখা হয়েছে।”
গ্রামের কমিটির পক্ষে প্রণব চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় মল্লিক, কৈলাশ চৌধুরীরা বলেন, “মানুষের মতো ওরাও প্রিয়জনকে হারিয়ে কষ্ট পায়। তাই হনুটির স্মৃতি রক্ষার্থে তার সমাধির উপরে মন্দির তৈরির ব্যবস্থা। গ্রামের মানুষ টাকা, চাল, তেল নুন লঙ্কা যে যা পেরেছেন, দিয়েছেন।” কুমারেশ মণ্ডল, নেপাল বসাক, দীপক বিশ্বাস, কৃষ্ণপদ কুণ্ডুরা বলেন, ‘রামের সঙ্গী হনুমান। মানুষের পূর্বপুরুষও শুনেছি হনুমানই। তাই চারঘাট ছাড়াও আশপাশের আরও চার-পাঁচটি গ্রামে আজ উনুন জ্বলেনি।”
স্কুল থেকে ফেরার পথে চোখে পড়ে, এক বাড়ির ছাদের তিন হনু বসে। এত যে আয়োজন, ওরা কি টের পেল ওদের জন্য মানুষের আবেগ?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.