পানীয় জলের সুব্যবস্থা তো নেই-ই, নেই শৌচালয়ও। তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কাঁথি উপকূলের চেঁওয়াশুনি, দাদনপাত্রবাড়, জলধা আর নিউ জলধা মৎস্যখটির মৎস্যজীবীরা তটভূমিকেই ব্যবহার করছেন। ফলে, উপকূল জুড়ে ছড়াচ্ছে দূষণ।
ওই চারটি খটি রামনগর-১ ও ২ ব্লকের আওতাধীন। মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানার অভিযোগ, এই সব মৎস্যখটিতে শৌচালয় এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে মৎস্য দফতরে আবেদন করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। মৎস্য দফতর থেকে জলধা, নিউ জলধা এবং দাদনপাত্রবাড় মৎস্যখটিতে সাবমার্সিবল পাম্প বসালেও বিদ্যুতের ও পাইপের কোনও লাইন না থাকার ফলে পাম্পগুলি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। |
সমুদ্র উপকূলে নিউ জলধা মৎস্য খটির ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।
|
জেলা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস বলেন, “খটিগুলিতে পানীয় জল ও শৌচালয় তৈরি করে মৎস্যজীবীদের সমস্যা এবং উপকূলের দূষণ নিরসনের জন্য মৎস্য দফতরের পাশাপাশি জেলা পরিষদও উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে খটিগুলিতে যাতে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়, সে জন্য জেলা পরিষদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছেও প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আশা করছি, খটিগুলিতে আগামী মরসুম শুরুর আগেই শৌচালয় তৈরি হয়ে যাবে।’’
গত ২১ জানুয়ারি মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ চারটি মৎস্যখটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। মৎস্যজীবীরা তাঁর কাছে অভিযোগে জানান, তাঁদের উন্নয়নের জন্য মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ত্রাণ ও সঞ্চয় প্রকল্প ছাড়াও ‘গীতাঞ্জলি’, ‘আমার বাড়ি’ ইত্যাদি প্রকল্প নেওয়া হলেও তাঁরা সেই প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না, যে হেতু তাঁরা বিপিএল তালিকাভূক্ত নন। খটির জমিতে তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করলেও সেই সব জমি তাঁদের নামে পাট্টাভুক্ত হচ্ছে না। জেলা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘খটিগুলির জায়গা মৎস্য দফতরের হাতে নেই। হয় বন দফতর নতুবা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে। জায়গাটি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের এলাকাধীন হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও পরিবেশ মন্ত্রকের বিধিনিষেধের কারণে সমস্যার নিরসন করা যাচ্ছে না।”
উপকূলের চারটি মৎস্যখটির সঙ্গে যুক্ত ১৫ হাজারেরও বেশি মৎস্যজীবী। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ মহিলা। সমুদ্র থেকে মাছ আনা, খটিতে মাছ নামানো, মাছ বাছাই করা, বিক্রি করা এমনকী উপকূলের তটে কাঁচা মাছ শুকোনো কাজ কম নয় তাঁদের। কিন্তু মৎস্যখটিগুলিতে শৌচালয় না থাকায় প্রকৃতির ডাক এলে তাতে সাড়া দিতে উপকূলের তটভূমিকেই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ছেন মহিলা মৎস্যজীবীরা।
সমস্যা নিয়ে নিউ জলধা মহিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সম্পাদিকা ভারতী জানা ও ঊষা চুয়ান, জলধা মৎস্যখটির সোমা শৌণ্ড ও দাদনপাত্রবাড় মৎস্যখটির রত্না মাঝির বক্তব্য একই রকম। তাঁদের কথায়, ‘‘খটিগুলিতে শৌচালয় না থাকায় যে কী অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। তটভূমিতে চড়া রোদে কাজ করার সময় গলা শুকিয়ে গেলেও পানীয় জলটুকু মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকেই বোতলে জল আনতে হয়। দু’একটি নলকূপ থাকলেও সেগুলি অধিকাংশ সময়ই অকেজো থাকে।” |