|
|
|
|
পরপর দুর্ঘটনার দায় নিয়ে ইস্তফা নৌ-প্রধানের
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সময়টা মাত্র সাত মাস। তার মধ্যেই দশ-দশটি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে নৌবাহিনীর জাহাজ-ডুবোজাহাজে। যে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন বুধবার সকালের মুম্বই। বন্দর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে জলের তলায় থাকা ডুবোজাহাজ সিন্ধুরত্নে আগুন লেগে আহত হন সাত জন নৌ-সেনা জওয়ান। নিখোঁজ দুই অফিসার। এর পরেই সন্ধ্যায় লাগাতার দুর্ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন নৌ-সেনা প্রধান, অ্যাডমিরাল দেবেন্দ্রকুমার জোশী।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, অ্যাডমিরাল জোশীর পদত্যাগ পত্র সরকার গ্রহণ করেছে। তাঁর জায়গায় বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছেন উপ নৌ-সেনা প্রধান আর কে ধবন। পরবর্তী স্থায়ী প্রধান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি-ই নৌ-সেনা প্রধানের পদে থাকবেন। এ যাবৎকালে নৌবাহিনীর প্রধানের এমন ভাবে সরে যাওয়ার ঘটনা বিরল। ১৯৯৮ সালে উপ নৌ-প্রধানের নিয়োগ নিয়ে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে বাহিনীর প্রধানের পদ ছাড়তে হয়েছিল অ্যাডমিরাল বিষ্ণু ভাগবতকে।
নৌ-বাহিনীর এই দুর্ঘটনার তালিকা শুরু হয় গত বছরের ১৪ অগস্ট। মুম্বই বন্দরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা
|
দেবেন্দ্রকুমার জোশী |
ডুবোজাহাজ আইএনএস সিন্ধুরক্ষকে আগুন লেগেছিল। মারা যান ১৮ জন কর্মী-অফিসার। তার পর থেকে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিশাখাপত্তনম বন্দরে ঢোকার মুখে মাটির সঙ্গে যুদ্ধজাহাজ আইএনএস ঐরাবতের প্রপেলার ধাক্কা খেয়েছিল। ওই বন্দরেই আগুন ধরেছিল আইএনএস কোঙ্কন নামে আর একটি যুদ্ধজাহাজে। মাস খানেক আগেই মুম্বই বন্দরে ঢোকার মুখে কম গভীরতা থাকায় আটকে গিয়েছিল আর একটি ডুবোজাহাজ, আইএনএস সিন্ধুঘোষ। এমনকী, রাশিয়া থেকে দেশে আসার পথে দুর্ঘটনায় পড়েছিল দেহের বৃহত্তম যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্য-ও।
ভবিষ্যতে নৌ-পথে প্রতিরক্ষা বাড়াতে ডুবোজাহাজের উপরেই জোর দিতে চায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তৈরি করা হচ্ছে প্রথম পরমাণু-জ্বালানি চালিত ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্ত। আগামী বছরেই বাহিনীতে যোগ দিতে পারে সে। এই অবস্থায় তিন-তিনটি ডুবোজাহাজে পরপর দুর্ঘটনা ঘটায় বিব্রত হচ্ছিলেন মন্ত্রকের কর্তারা। কেন লাগাতার এমন ঘটনা ঘটছে, তা জানতে দেশের বৃহত্তম নৌ-সেনা ঘাঁটির (ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড) প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল শেখর সিংহকে দিল্লিতে তলব করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এক জন উচ্চকর্তাকে দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখাও শুরু করেছিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল সিংহ। তার মধ্যেই ফের ডুবোজাহাজে দুর্ঘটনা ঘটায় সরে যেতে হল বাহিনীর প্রধানকেই।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
সেনা সূত্রের খবর, প্রত্যেক যুদ্ধজাহাজ এক বার করে সফর শেষ করে এলে তাকে মেরামত করতে হয়। সম্প্রতি সিন্ধুরত্নকেও মেরামতির জন্য মুম্বই ডকে নিয়ে আসা হয়েছিল। মেরামতির কাজ শেষ হওয়ার পরে অস্ত্রশস্ত্র লাগানোর কথা ছিল। তার আগে এ দিন নৌসেনার ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের সাবমেরিন কম্যান্ডার কমোডর এস আর কপূর ওই ডুবোজাহাজে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সে সময়ই হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে যায় সাবমেরিনের কেবিন। বিপদসঙ্কেত পেয়ে তড়িঘড়ি উদ্ধার কাজ শুরু হয়। আহত সেনা জওয়ানদের হেলিকপ্টার করে পাড়ে নিয়ে আসা হয়।
জলের নীচে থাকা ডুবোজাহাজটিকে উপরে তুলে আনা হয়। সেটির বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। কেন দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে একটি তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছে।
নৌ-সেনা জানিয়েছে, ওই সময় ডুবোজাহাজে ৭০ জন ছিলেন। তার মধ্যে মাত্র সাত জন আহত হয়েছেন। বাকিরা নিরাপদেই রয়েছেন। তবে নিখোঁজ দুই অফিসার সম্পর্কে রাত পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট খবর মেলেনি। আহত সেনাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের খবর, এ দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি নিজে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দুর্ঘটনার কথা বিস্তারিত ভাবে রাষ্ট্রপতিকে জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীকেও ঘটনার রিপোর্ট দেন। সারা দিনের এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই নৌ-সেনা প্রধানের পদত্যাগ পত্র পৌঁছয় রাষ্ট্রপতি ভবনে।
অ্যাডমিরাল জোশীর এ ভাবে পদত্যাগে অবশ্য তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন সেনা অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, দুর্ঘটনার দায় একা বাহিনীর প্রধানের নয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত কিংবা প্রাকৃতিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবুও অ্যাডমিরাল জোশী যে ভাবে সব দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন, তা বাহিনীর কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান ফলি হোমি মেজর বলেন, “নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করে উনি আদর্শ সৈনিকের মতোই উচিত কাজ করেছেন।” |
|
|
|
|
|