বিদেশে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিলিগুড়ি শহরে অফিস খুলেছিল একটি সংস্থা। মাস চারেক পরে তাদেরই বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল।
সোমবার শিলিগুড়ি থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে মিরিকের বাসিন্দা বিশপ দেওয়ান অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তে এখনও অবধি পুলিশ ১১ জন প্রতারিত তরুণ-তরুণীর হদিশ পেয়েছে। যাঁদের কাছ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে ওই সংস্থাটি। তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, ওই ফাঁদে পা দেওয়া বাসিন্দাদের সংখ্যা ৫০ জনের কাছাকাছি। একাধিক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে দুবাই, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের নানা কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে গত কয়েক মাসে সংস্থাটি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও অবধি যে ১১ জনের হদিশ মিলেছে, তাঁরা পাহাড়ের মিরিক, লেবং, বাতাসিয়া, কালিম্পং, তিনধারিয়ার ও শিলিগুড়ির শালুগাড়া, ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বাসিন্দা। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তের জন্য আলাদা একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। মামলাটির দেখভাল করছেন শিলিগুড়ি অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এডিসিপি) সাভারি রাজকুমার। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন এলাকার বলে জানা গিয়েছে। সবাই পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলেছে। দফতরটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।”
মাস চারেক আগে শিলিগুড়ির সেবক রোডের পানিট্যাঙ্কি মোড় এলাকার একটি বাণিজিক্য বহুতলে দফতরটি খোলা হয়েছিল। সংবাদপত্র এবং বিভিন্নভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে যুবক যুবতীদের বিদেশি চাকরির প্রলোভন দেওয়া শুরু হয়। এতেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন মিরিকের বিশপ দেওয়ান বা সিলসিলা ছেত্রীর মত তরুণ তরুণীরা। উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করতে না পারা বিশপ ওই সংস্থাকে গত ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য ১ লক্ষ ২০ টাকা টাকা দিয়েছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিমান খরচ, ভিসা-সহ সব কাগজ দেওয়ার কথা ছিল। সিলসিলার কাছে থেকে নেওয়া হয় ১ লক্ষ টাকা।
এ দিন দু’জনেই জানান, ভিসা-সহ কাগজপত্র দিতে সংস্থাটি ঘোরাচ্ছিল। শনিবার দফতরে গেলে ওরা সব কিছু অস্বীকার করে। উল্টে অভিযোগ জানানোর কথা বললে হুমকি দেওয়া হয়। তার পরে সন্ধ্যা থেকে কারও হদিশ মেলেনি। এর পরেই এক পরিচিত মাধ্যমে শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সন্দীপবাবু কথায়, “পুলিশ অফিসারদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছি। পুলিশ সক্রিয় না হলে আদালতে মামলা’র করার পথে যাব।”
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, সংস্থার মূল কর্ণধার দিল্লির। তিনি একজন প্রাক্তন সেনাকর্মী বলে জানা গিয়েছে। তার সঙ্গে দিল্লির আরেক বাসিন্দা সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। প্রধাননগরের বাসিন্দা এক মহিলা সংস্থার প্লেসমেন্ট সেলের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়াও স্থানীয় আরেক যুবক সংস্থার অফিসার হিসাবে কাজ করতেন। তিনিই মূলত টাকা আদায় করতেন। তবে সব টাকাই নগদে নেওয়া হয়েছে। কয়েকজন তরুণ তরুণী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা বলায়, অভিযুক্তরা জানিয়ে ছিলেন, শহরে নতুন সংস্থা হওয়ায় এখনও তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মূলত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেন হলে পরে ঠিকানা, নথিপত্র যাতে কোনওভাবেই পুলিশের হাতে না পৌঁছয়, সে জন্যই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। উল্লেখ্য, এর আগেই শিলিগুড়ি শহর থেকে দুই দফায় একই ধরণের সংস্থার হদিশ পেয়েছিল পুলিশ। |