মোটর-আইন ভাঙছে সরকারই
রিবহণের আইন ভাঙছে রাজ্য পরিবহণ দফতরই!
সরকারি কাজে লাক্সারি ট্যাক্সির বদলে যথেচ্ছ প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া নিচ্ছে রাজ্য সরকার। মোটর ভেহিকল্স বা মোটরযান আইন অনুযায়ী সরকার এটা করতে পারে না। শুধু আইনের বাধা নয়, এ ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আছে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশও। প্রাইভেট গাড়ির বেআইনি ব্যবহার বন্ধ করার জন্য পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইন, নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার বালাই নেই!
রাজ্যের পরিবহণ দফতরেরই হিসেব, নবান্নের সদর দফতর থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত সরকারি কাজে বছরে যত গাড়ি ব্যবহৃত হয়, তার অধিকাংশই প্রাইভেট গাড়ি। বেআইনি জেনেও তার দেদার ব্যবহার চলছে। রাজ্যের পরিবহণকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া বাড়িয়ে বাড়তি লাক্সারি ট্যাক্সির ব্যবস্থা না-করলে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হবে না।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি কাজে প্রতিদিন যত গাড়ি লাগে, তার সামান্যই সরকারের নিজস্ব। বছর তিনেক আগের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কাজের জন্য রোজ গড়ে ১৩ হাজার গাড়ি লাগে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব গাড়ি ২৫০০-এরও কম। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অন্তত অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামতে পারে না। তাই কাজ চালানোর জন্য বিভিন্ন দফতরকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাইভেট গাড়ির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে।
ভাড়ায় প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার যে বেআইনি, মানেন পরিবহণমন্ত্রীও। ১৯৯২ সালে কলকাতা হাইকোর্ট যে এই ধরনের গাড়ি ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তা-ও মন্ত্রীর অজানা নয়। তবু সরকারের পরিবহণ ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে কার্যত এই ধরনের গাড়ির উপরে নির্ভর করেই। পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেসরকারি গাড়ি ধরছি। আর লাক্সারি ট্যাক্সির ভাড়া আদৌ বাড়ানো দরকার কি না, তা ঠিক করবে অর্থ দফতর।” গাড়ি ব্যবহার নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।”
সরকার কোন ধরনের গাড়ি ভাড়া নিতে পারে, মোটরযান আইনে সেটা পরিষ্কার বলা আছে। পরিবহণ দফতরের এক মুখপাত্র জানান, শুধু বাণিজ্যিক কাজের জন্য যে-সব গাড়ির লাইসেন্স রয়েছে, সেগুলোই ভাড়া নিতে পারে সরকার। এই ধরনের গাড়িকেই লাক্সারি ট্যাক্সি বলা হয়। প্রয়োজন হলে সরকার এই লাক্সারি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারে।
কিন্তু এখানেই যথেচ্ছ আইন ভাঙার অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, কাজের প্রয়োজনে সরকারের নিজস্ব গাড়ি বা লাক্সারি ট্যাক্সি পাওয়া যায় না বলে প্রাইভেট গাড়ির উপরেই নির্ভর করতে হয়। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের লাইসেন্স নেই ওই সব গাড়ির। অনেকে নিজের ব্যবহারের জন্য কেনা গাড়ি ভাড়া খাটান। সেগুলো ভাড়া নিচ্ছে সরকার।
পরিবহণ দফতরের মুুখপাত্র জানান, রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার লাক্সারি ট্যাক্সি রয়েছে। বছরখানেক আগেও তার প্রায় অর্ধেক সরকারের বিভিন্ন দফতরে ভাড়া খাটত। সেই সংখ্যাটা এখন তলানিতে ঠেকেছে। কারণ, ২০০৮-এর ১ ডিসেম্বরের আগে চালক-সহ লাক্সারি ট্যাক্সির জন্য প্রতি ১০ ঘণ্টায় ৪৪৫ টাকা ভাড়া দিত সরকার। ওই দিন থেকে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ৪৬৫ টাকা। তার পরে পাঁচ বছরে জ্বালানির দাম বেড়েছে অনেক। কিন্তু সরকার লাক্সারি ট্যাক্সির ভাড়া বাড়াতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে সরকারি-বেসরকারি বাসের মতো লাক্সাটি ট্যাক্সিও বসে গিয়েছে।
লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈকত পালের বক্তব্য, প্রতি বছর পথকর বাবদ ৯০৪০, বিমা খাতে ২৮ হাজার, পারমিটের জন্য ২১০০, সিএফ এবং আনুষঙ্গিক কাজে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয় তাঁদের। এই অবস্থায় ১০ ঘণ্টার জন্য ৬৫০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়েছিল। সরকার রাজি হয়নি। তাই গাড়ি বসে যাচ্ছে।
লাক্সারি ট্যাক্সির এক মালিক বলেন, “আমার ১৪টি গাড়ি ছিল। গত এক বছরে সাতটি বিক্রি করে দিয়েছি।” সরকার লাক্সারি ট্যাক্সিকে বাড়তি ভাড়া দিতে নারাজ। অথচ বেআইনি জেনেও ভাড়া গাড়ি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন লাক্সারি ট্যাক্সি সমিতির কর্তা সৈকতবাবু। তাঁর কথায়, “প্রাইভেট গাড়ি ৪৬৫ টাকায় ভাড়া খাটতে সহজেই রাজি হচ্ছে। কারণ, বিমা, পথকর, ট্যাক্স-পারমিট-সিএফের জন্য প্রাইভেট গাড়ির খরচ লাক্সারি ট্যাক্সির চেয়ে অনেক কম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.