প্রশ্ন করলেও জবাব নেই, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা
প্রশ্ন ছিল ৪২৮টি। ঝাড়াই-বাছাই করে তার মধ্যে গৃহীত ২৬৫টি। তার মধ্যে আলাদা করে বেছে তারকা-চিহ্নিত ২০৮টি। আর সব শেষে উত্তর ৫৭টির!
বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত বাজেট অধিবেশনের তথ্য বলছে, প্রশ্নোত্তর-পর্বের হাল করুণ। বিধায়কেরা যা জানতে চেয়েছেন, তার ১৩%-র উত্তর তাঁরা বিধানসভায় পেয়েছেন! তার বাইরেও পরিষদীয় রীতি মেনে কিছু প্রশ্নের লিখিত জবাব বিধায়কদের কাছে পাঠানো হয়েছে অবশ্য। তাতেও নথিভুক্ত সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। স্বভাবতই বিরোধীরা অভিযোগ করছে, বিধায়কদের প্রশ্নের উত্তরই যদি না মেলে, তা হলে কি বিধানসভার গুরুত্ব বজায় থাকে? বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে মন্ত্রীদের সতর্ক করেছেন তিনি।
বস্তুত, বিধানসভা বা লোকসভায় প্রশ্ন করা জনপ্রতিনিধিদের অন্যতম অধিকারের মধ্যে পড়ে। নিজেদের নির্বাচনী এলাকা বা সার্বিক ভাবে গোটা রাজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য অধিবেশন শুরুর আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন বিধায়কেরা। সরকারি তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধীদের রাজনৈতিক প্রচারের কাজেও লাগে। বাজেট অধিবেশনের আগেও সরকার-বিরোধী সব শিবির মিলিয়ে ৭৩৪টি প্রশ্ন জমা পড়ে। পদ্ধতিগত ও অন্যান্য দিক বিচার করে বাছা হয়েছিল ৪২৮টি। তার পরে আবার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তুলে আনা হয়েছিল ২৬৫টি প্রশ্ন। এ বার বাজেট অধিবেশনের কাজ চলেছে মোট ৪৭ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট। তার মধ্যে সভায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রীরা উত্তর দিয়েছেন ৫৭টি প্রশ্নের।
বিধানসভার দস্তুর মেনে বিধায়কদের প্রশ্নের জবাব অনেক সময়ই খবরের শিরোনাম হয়। এ বারের গোটা অধিবেশনে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর একটি জবাব ছাড়া আর কোনও বিষয় নিয়ে হইচই করার সুযোগই পায়নি বিরোধীরা! কারণ, তাদের বেশির ভাগ কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ভাষণে বলা হয়েছিল, রাজ্যে ধর্মঘট বন্ধ হওয়ায় শ্রমদিবস নষ্টের পরিমাণ এখন শূন্য। যদিও শ্রমমন্ত্রীর জবাব বলছে, গত দু’বছরে লক-আউট, লে-অফ ও ধর্মঘটের কারণে ৩ কোটি ৭ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫২৫টি শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। এই ভাবেই পুলিশ, অর্থ, সংখ্যালঘু, ভূমি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, কৃষি-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের জন্য প্রশ্ন জমা দিয়ে সরকারকে চেপে ধরার আশায় ছিলেন বিরোধী বিধায়কেরা। সে আশা পূরণ হয়নি। জমা-পড়া প্রশ্নের উত্তর যখন মন্ত্রী দেন, তখন অতিরিক্ত প্রশ্ন করে তাতে অংশ নেন অন্য বিধায়কেরা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে পুলিশ দফতরের প্রশ্ন নিয়ে যে ঘটনা হামেশাই ঘটত। এখন সেই রেওয়াজও কমে এসেছে। লোকসভার মতো বিধানসভায় বিক্ষোভের জেরে কাজ পণ্ড হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবু প্রশ্নের জবাবের হার কমায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা।
যে সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, তার মধ্যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে-থাকা ৮টি দফতরও আছে। এ বারের অধিবেশনেও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর-পর্ব করেননি। রাজ্যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে তাঁর দফতরের জবাবের অপেক্ষায় ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, মানস ভুঁইয়ার মতো বিরোধী শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ বিধায়কেরাও। আইনশৃঙ্খলা-সহ পুলিশ দফতর নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছিল। উৎসব, মেলার পিছনে সরকারি খরচ নিয়ে অবধারিত প্রশ্ন ছিল। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর কথায়, “যে ক’টা প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, তার মধ্যে আমার একটাও নেই! আমার প্রশ্ন ছিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের কাছে। অর্থ দফতরেও ছিল কিছু। সেগুলোর উত্তরই হয়নি।” কংগ্রেস বিধায়ক মানসবাবু বলছেন, “প্রতি বার আমার একাধিক প্রশ্ন থাকে। এ বার কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নিয়ে একটা বাদে আর কোনও প্রশ্ন এলই না!”
প্রশ্নোত্তরের এমন দশা নজর এড়ায়নি স্পিকারেরও। তাঁর বক্তব্য, “কিছু মন্ত্রী তৈরি হয়ে আসছেন না। কেউ কেউ একটা প্রশ্নের জবাব দিতে বেশি সময় নিচ্ছেন বলে অন্যগুলোর সময় থাকছে না। বিধানসভার ভিতরে-বাইরে মন্ত্রীদের বলেছি, প্রশ্নের জবাব ঠিক ভাবে দিতে হবে।” বিধায়কদের নিয়ে সমস্যার কথাও বলছেন স্পিকার। বিমানবাবুর কথায়, “প্রশ্ন করার সময়ে কেউ কেউ এত কথা বলে মূল বিষয়ে আসেন যে, সময় চলে যায়!”
কোন মন্ত্রীর কত প্রশ্ন আসছে, সে সব দেখে সমন্বয়ের দায়িত্ব পরিষদীয় দফতরের। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি প্রশ্নোত্তর কম হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। তাঁর বক্তব্য, “প্রশ্নোত্তরই সব নয়। বিধায়কেরা যাতে বিধানসভায় বেশি করে অংশগ্রহণ করেন, আরও তথ্যসমৃদ্ধ বিতর্কের জন্য পড়াশোনা করেন, সেই দিকে নজর দিচ্ছি।” কিন্তু প্রশ্নের উত্তর না পেলে বিধায়কেরা বিধানসভার কাজে উৎসাহিত হবেন কেন? পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, “বাম জমানায় আরও বেশি প্রশ্ন হত। উত্তর আসত আরও কম! একই রকমের প্রশ্ন সবাই মিলে করলে প্রশ্ন তো বাদ যাবেই। প্রশ্নের বৈচিত্র্য কোথায়? বিরোধীরা বিধানসভার সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগাচ্ছে না কেন?”
বিরোধীরা বেশি সরব মুখ্যমন্ত্রীর জবাব এড়িয়ে যাওয়া নিয়েই। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ বারই বিধানসভায় হাল্কা চালে বলেন, “আমাকে কি দেখতে ভাল যে, সব সময় সামনে বসে থাকতে হবে!” আর বিরোধীদের চায়ের আসরে ডেকে বলেছিলেন, প্রশাসনিক ব্যস্ততার জন্য বিধানসভায় সব সময় থাকতে পারছেন না। কিন্তু বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রীই যদি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান, অন্য বিধায়কেরা উৎসাহ পাবেন কেন?” মানসবাবুরও বক্তব্য, “বাম জমানায় অন্তত প্রশ্নের উত্তরগুলো হতো। এখন সার্বিক ভাবেই প্রতিনিধিত্বমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র তার আকর্ষণ ও শক্তি হারিয়ে ফেলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.