প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই কর্মীদের নিয়ে মানুষের কাছে ঝটিতি পৌঁছে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছেন তিনি। কখনও দলের যুব নেতা খুনের প্রতিবাদে পথে নেমে, কখনও ধর্ষিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে, কখনওবা এসএসসি-র বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের কাছে নিজে ছুটে গিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, মানুষের কাছে দলের কর্মীদের পৌঁছতে হবে। দলকে মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে পথে নামা ছাড়া যে গত্যন্তর নেই, দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই তা আবার জানিয়ে দিলেন অধীর চৌধুরী।
বিধান ভবনে মঙ্গলবার জেলা সভাপতিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে অধীরের দাওয়াই, পথে নেমে মানুষের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভাঙন-বিধ্বস্ত দলকে উজ্জীবিত করতে সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের দুর্বলতম এলাকাগুলিতেও পৌঁছে সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন অধীর। এ দিনের বৈঠকে অধীর বুঝিয়ে দেন, ২০ বা ১০০ জন সমর্থক পেলেও সেখানে ঘনঘন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে হবে কংগ্রেসকে। রাজ্যের গাফিলতিতে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা নিয়ে মানুষের কাছে দলের বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন অধীর। |
দলের শক্ত ঘাঁটির পাশাপাশি দুর্বলতম জায়গাগুলিতে বারবার সভা করলে কংগ্রেসের সমর্থক ক্রমে বাড়বে বলেই আশা প্রদেশ সভাপতির। সেই আশা নিয়েই জেলা সভাপতিদের জন্য তাঁর বার্তা, কারা অন্য দলে চলে গিয়েছেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে নিজের নিজের এলাকায় যে ক’জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের নিয়েই সংগঠনকে বাড়ানোর কাজ শুরু করতে হবে। এবং এর জন্য পথে নেমে মানুষকে বোঝাতে বলেছেন, কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা বিল বা জননী সুরক্ষা যোজনার সুফল থেকে রাজ্যের মানুষ কী ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা-ও। অধীর পরে বলেন, “অন্যান্য রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা বিল প্রয়োগ হয়েছে। এ রাজ্যের সরকার তো সাধারণ মানুষের কথা বলেন। তা সত্ত্বেও খাদ্য সুরক্ষা বিল এখানে বাস্তবায়িত না হওয়ায় মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেটাই ব্লক থেকে মানুষকে বোঝাতে হবে।” আন্দোলন রাজ্যব্যাপী করতে ব্লক ছাড়িয়ে জেলা সদরে আন্দোলনের পরে কলকাতায় নবান্ন অভিযান বা রাজভবন অভিযান করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্দোলনের যে দিশা তিনি দিয়েছেন, তা যে অমান্য হচ্ছে না, তার খতিয়ানও তিনি জেলা সভাপতিদের কাছ থেকে নিয়মিত নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কবে, কোথায় কেমন আন্দোলন হচ্ছে, বাধ্যতামূলকভাবে তার ভিডিও ফুটেজ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন অধীর। কোনওভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তিনি প্রশ্রয় দেবেন না, তা বুঝিয়ে দিয়ে অধীর বলেছেন, সবাই একসঙ্গে মিলে নতুনভাবে কাজ করতে হবে। কংগ্রেসের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মীদের এককভাবেই নিজেদের ময়দানে প্রস্তুত হওয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি বলেছেন, জোটে এতদিন কংগ্রেসের ক্ষতি হয়েছে, এখন এককভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। পরে তিনি বলেন, “আমি চাই না, উপর থেকে জোট চাপিয়ে দেওয়া হোক। আশা করি, জোটের বার্তা আসবে না।”
এ দিনের বৈঠকে একমাত্র মালদহের জেলা সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নুর অনুপস্থিত ছিলেন। মৌসমের বক্তব্য, “অধীরবাবুর অনুমতি নিয়েই এ দিন হরিশ্চন্দ্রপুরে রাধিকাপুরে রেলের নতুন স্টেশনের উদ্বোধনে আমি ছিলাম। তাই, বৈঠকে যেতে পারিনি” |