প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী কম নেই। তা সত্ত্বেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে আবেদন জানিয়েছিল বলে অভিযোগ তুলে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার কয়েকশো প্রশিক্ষিত প্রার্থীর সেই মামলার শুনানির পরে বাংলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা (টেট)-র খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৩-র টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট নিয়ে হাজারো অভিযোগ উঠেছিল। পাশের হার ছিল অতি নগণ্য। তাতেও নানা ভাবে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রাজ্য জুড়ে। ওই পরীক্ষার পদ্ধতিতেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ছিল বলে অভিযোগ জানিয়ে এই ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ৮০০ প্রার্থী। এই প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট এ দিন রাজ্য সরকারকে টেট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্যের কাছে কী কী তথ্য জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত?
জানতে চাওয়া হয়েছে: i টেট দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালে কত জন আবেদন করেছিলেন। i তাঁদের মধ্যে ডিএড (ডিপ্লোমা) পাওয়া ক’জন ছিলেন। i প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীই বা ক’জন। i কত জন টেটে উত্তীর্ণ হয়েছেন। i ক’জনকে এ-পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়েছে। i নিয়োগপত্র পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে কত জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, কত জন প্রশিক্ষণহীন। চার সপ্তাহের মধ্যে এই সব তথ্য-সহ হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী নেই বলে জানিয়ে ২০১১ সালে রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই শর্ত মানার বাধ্যতা থেকে ছাড় চেয়েছিল। বলেছিল, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদেরও নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হোক। পরে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এ দিন সুপ্রিম কোর্টে সেই বিষয়টি ওঠে। রাজ্য সরকার কী কারণে তখন ছাড় চেয়েছিল, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানাতে বলেছে আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না বলে জানান আবেদনকারীদের আইনজীবীরা।
রাজ্যের ডিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের তরফে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি লড়ছেন সুনীল ফার্নান্ডেজ ও দুষ্মন্ত পরাশর। ফার্নান্ডেজ জানান, শিক্ষার অধিকার আইনে বলা আছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, দু’ধরনের স্কুলেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্য ২০১১ সালে কেন্দ্রের কাছে ওই বাধ্যতা থেকে ছাড়ের আর্জি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-পদে নিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী বাংলায় নেই। কিন্তু তখন রাজ্যে ৪০ হাজার ডিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী ছিলেন। তা হলে রাজ্য সরকার নিয়োগের শর্তে কেন ওই ছাড় চেয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ডিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।
ফার্নান্ডেজ এ দিন আদালতে তাঁর সওয়ালে বলেন, রাজ্য সরকার যখন বুঝে যায় যে, এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়াতে চলেছে, তখনই তড়িঘড়ি ১৭ হাজার প্রার্থীকে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে নিয়োগপত্র দিয়ে দেয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ১৭০ জনও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। রাজ্যের আইনজীবী অবশ্য এ দিন আদালতে জানান, চার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীকে প্রাথমিকে নিয়োগ করা হয়েছে।
রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের দাবি, পর্ষদ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অন্য প্রার্থীদের কথা বিবেচনা করেছে, এমন একটাও নজির নেই। প্রশিক্ষিতদের প্যানেল তৈরির পরে যে-সব পদ শূন্য ছিল, সেগুলিতে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। মানিকবাবু বলেন, “প্রার্থীদের যোগ্যতামান, কাদের পরীক্ষা নেওয়া যাবে, কাদের নিয়োগ করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে আদালতের নির্দেশ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের কাছে যা জানতে চেয়েছে, আমরা সব জানাব। আমাদের কাছে সব তথ্যই আছে।” |