শক্তিগড়ের ল্যাংচা ও ভাবে বাক্সবন্দি করে রাখা কেন? ওগুলো শোকেসের মধ্যে এমন ভাবে রাখুন, যাতে সকলে দেখতে পান! শুধু বাংলা বই রাখলেই চলবে না, ইংরেজি বইও বেশি করে রাখতে হবে আগরতলার বিমান ধরার আগে মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে ‘বিশ্ব বাংলা’ শোরুম ঘুরে দেখতে দেখতে এমনই কিছু পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, এক ছাদের তলায় এ বার মিলবে পশ্চিমবঙ্গের তাঁতশিল্প, হস্তশিল্প, রেশম শিল্প, তুলাইপাঞ্জি চাল। থাকবে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, জয়নগরের মোয়ার মতো বাঙালির পছন্দের বিভিন্ন সাবেক মিষ্টি, থাকবে সত্যজিৎ-ঋত্বিক, উত্তম-সুচিত্রার ছবি। বাঙালি সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিকদের লেখা বই, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, কীর্তন, বাউল, ঝুমুর, ভাওইয়ার ক্যাসেট বা সিডি সব কিছু নিয়ে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পুরো একটি প্যাকেজ এতদিন এক ছাদের তলায় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল। এ বার এই সম্ভারকে এক জায়গায় এনে ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ডের নামে একটি শোরুম সাজিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির সঙ্গে দেশ-বিদেশের মানুষকে পরিচিত করাতে রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বস্ত্রশিল্প দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। |
তারই সূত্র ধরে কলকাতা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ লাউঞ্জের যে জায়গা দিয়ে যাত্রীরা সিকিওরিটি চেকের পরে বিমান ধরার জন্য ঢোকেন, সেখানেই দেড় হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রথম ‘বিশ্ব বাংলা’ শোরুম। গত শনিবার রায়দিঘি থেকে ওই শোরুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার আগরতলা যাওয়ার পথে সেই শোরুমই মিনিট কুড়ি ঘুরে দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে বিমানবন্দরের কর্মী থেকে শুরু করে যাত্রীদের অনেকেই ভিড় জমান। নিরাপত্তার কারণে প্রথমে তাঁদের ঢোকা বারণ থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীই সকলকে ঢুকতে দেওয়ার নির্দেশ দেন। শোরুমের বিক্রি থেকে যা লাভ হবে সেই টাকা রাজ্যের হস্তশিল্পী, তন্তুবায়দের কল্যাণে খরচের পরামর্শও দেন তিনি।
বিশ্ব বাংলা শোরুমে থাকছে শোলা, ডোকরা, টেরাকোটার কাজ। মিলবে কৃষ্ণনগরের পুতুল, শান্তিপুরী, ধনেখালি, জামদানি, বালুচরী শাড়ি। থাকবে চিৎপুরের সুরমা-আতর, দার্জিলিঙের চা, কালিম্পঙের চিজ এবং কাসুন্দি-আমসত্ত্ব-নলেন গুড়-পাটালি গুড়-মধু, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, সরভাজা। নিখুঁত মান এবং বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে বিভিন্ন জেলা থেকে ওই সব পণ্যের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে বিশেষজ্ঞ-পরামর্শদাতাদের নিয়োগ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের প্রধান সচিব রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, আজ, বুধবার থেকে বিমানবন্দরের বিশ্ব বাংলা শোরুমে পুরোদস্তুর কেনাবেচা শুরু হবে। অচিরেই এর আরও তিনটি শোরুম চালু হবে এসপ্ল্যানেড, দক্ষিণাপণ ও পার্ক স্ট্রিটে। তার পরে দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো দেশের অন্য সব বড় শহর ও বিমানবন্দরে খোলা হবে একই ধরনের শোরুম। চলতি বছরেই বিশ্ব বাংলা শোরুম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, সিঙ্গাপুর এবং ব্যাঙ্ককে। |