পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) মর্যাদায় পদোন্নতি সংক্রান্ত মামলায় সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (ক্যাট)-এর রায় গিয়েছিল আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলামের পক্ষে। কিন্তু ক্যাটের সেই নির্দেশ হাইকোর্টে টিকল না। রাজ্যের পুলিশ-প্রধান জিএম প্রভু রাজাশেখর রেড্ডি-সহ পাঁচ আইপিএস অফিসারের ডিজি মর্যাদা (র্যাঙ্ক)-য় পদোন্নতি বাতিল করে ক্যাটের দেওয়া রায়টি মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দিয়েছে। ডিজি নিয়োগের লক্ষ্যে সরকারের গড়া স্ক্রিনিং কমিটিতে নিয়মবিরুদ্ধ কিছু হয়নি বলেই মনে করছে হাইকোর্ট।
নজরুল-মামলায় ক্যাট নির্দেশ দিয়েছিল গত ৩ ফেব্রুয়ারি। তা চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে যায়। ক্যাটের কাছে দায়ের আবেদনে নজরুল দাবি করেছিলেন, রাজ্য সরকারের বসানো স্ক্রিনিং কমিটি-ই অবৈধ। তাঁর যুক্তি, নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার নীচের কোনও আইএএস অফিসার কমিটিতে থাকতে পারেন না। অথচ স্ক্রিনিং-বৈঠকে বর্তমান স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন, যিনি তখনও অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হননি। এ ভাবে নিয়ম ভেঙে তাঁকে বঞ্চিত করে রাজ্য সরকার তাঁর জুনিয়র পাঁচ অফিসারকে ডিজি পদমর্যাদায় উন্নীত করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন নজরুল।
এবং ওঁর আবেদনের ভিত্তিতে ক্যাট জানিয়েছিল, স্ক্রিনিং কমিটি অবৈধ। অতএব, ডিজি মর্যাদায় রেড্ডি-সহ পাঁচ আইপিএসের পদোন্নতিরও আইনি বৈধতা নেই। কিন্তু হাইকোর্ট সে যুক্তি মানেনি। ডিভিশন বেঞ্চের মতে, ডিজি নিয়োগের লক্ষ্যে বসানো স্ক্রিনিং কমিটি সম্পূর্ণ বৈধ। মামলার সওয়ালে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, কমিটির বৈঠকে বাসুদেববাবুকে ডাকা হয়েছিল আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে, নজরদারির উদ্দেশ্যে। এ দিনের রায়ে বেঞ্চ-ও তা উল্লেখ করে জানিয়েছে, বৈঠকে বাসুদেববাবুর উপস্থিতির মধ্যে অবৈধ কিছু নেই।
হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে নজরুল এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের ইঙ্গিত, রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন। তাঁর কৌঁসুলি সুরজিৎ সামন্তও জানিয়েছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন। পুলিশের চাকরি থেকে নজরুল অবসর নিচ্ছেন আগামী শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি।
বর্তমানে রাজ্য পুলিশের এডিজি (প্রভিশনিং) পদে কর্মরত, ১৯৮১ ব্যাচের আইপিএস নজরুল ইসলামের বক্তব্য, ক্যাটের নির্দেশে যখন স্ক্রিনিং কমিটিকে অবৈধ বলা হয়েছে, তখন অবধারিত ভাবে কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোও অবৈধ হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য। অর্থাৎ, পাঁচ অফিসারকে পদোন্নতির সিদ্ধান্তও বেআইনি। অন্য দিকে হাইকোর্টের বক্তব্য: নজরুলের গত পাঁচ বছরের কাজের যা মূল্যায়ন, তা ডিজি র্যাঙ্কে প্রার্থীপদের জন্য সরকার-নির্ধারিত মানদণ্ডের অনেক নীচে। মাত্র দু’বার তিনি মানদণ্ডে পৌঁছেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত সেই দু’বছরের কোনও ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এজি জানান, মানদণ্ড অনুযায়ী পূর্ণমান ১০ নম্বর। কেউ ৮ থেকে ১০-এর মধ্যে পেলে তাঁকে ভাল বলা যায়, এবং স্ক্রিনিং কমিটিতে তাঁদের নাম নিয়েই আলোচনা হয়। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের রায়ও বলছে, নজরুল ইসলাম যে হেতু প্রয়োজনীয় মানের কাছাকাছিই পৌঁছননি, সে হেতু ডিজি মর্যাদায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে আলোচনারও কোনও অবকাশ নেই।
ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পুলিশ-প্রধান জিএমপি রেড্ডির সঙ্গে ডিজি মর্যাদায় আরও যে চার আইপিএসের পদোন্নতি বহাল রইল, তাঁরা হলেন: ডিজি (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় কুমার, ডিজি (ওয়েলফেয়ার) অনিল কুমার, ডিজি (উপকূল নিরাপত্তা) রাজ কানোজিয়া এবং ডিজি তথা কমান্ডান্ট জেনারেল (হোমগার্ড) রবীন্দ্রজিৎ সিংহ নালওয়া। |