সুন্দরবন বা ডুয়ার্সের পাশাপাশি এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে পর্যটনের নানা আকর্ষণ। পর্যটনে গুরুত্ব বাড়াতে সেই সব জেলায় ভিন্ রাজ্যের এবং বিদেশি পর্যটক টানতে চায় রাজ্য সরকার। এ কারণে তৈরি হচ্ছে নয়া রূপরেখা।
কেমন সে রূপরেখা?
পর্যটন দফতর সূত্রে খবর, দিঘা-শঙ্করপুর ও বকখালি-ফ্রেজারগঞ্জকে ঘিরে ‘বিচ ট্যুরিজম’, জলদাপাড়া-দলমার মতো নির্দিষ্ট কিছু জায়গা নিয়ে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম’, দুর্গাপুজো, বসন্ত উৎসব, পৌষমেলা, সাগরমেলার মতো বিষয়গুলোকে নিয়ে ‘কালচার ট্যুরিজম’, জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা কিছু সাবেক প্রাসাদ ও রাজবাড়ি নিয়ে ‘হেরিটেজ ট্যুরিজম’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ‘ক্রাফ্ট ট্যুরিজম’-এর বিষয় হিসাবে ভাবা হচ্ছে বাঁকুড়ার টেরাকোটা ও বালুচরী-স্বর্ণচরী শিল্প, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদের জরি ও সিল্কের কাজকে। পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “কেবল এ রাজ্যে ১৩টি সতীপীঠ আছে। এগুলোকে প্রচারের আলোয় আনা গেলে ‘রিলিজিয়ন ট্যুরিজম’-এর ক্ষেত্রও অনেকটা প্রশস্ত হবে।” |
বস্তুত, নতুন ভাবে রাজ্যে পর্যটনের প্রসারের জন্য সম্প্রতি দু’দফায় বৈঠক হয় দিল্লি ও মুম্বইয়ে। রাজ্যের পর্যটন দফতর এবং পর্যটন উন্নয়ন নিগমের (টিডিসি) কর্তারা এই দুই বৈঠক করেন ‘এশিয়ান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল’ (‘স্যাট’) নামে একটি সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে। এ ছাড়াও ছিলেন এ রাজ্যের কিছু পর্যটন-উদ্যোগপতি ও পরামর্শদাতা।
রাজ্যের পর্যটন অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এত দিন আমরা মূলত সুন্দরবন, ডুয়ার্সকেই এ রাজ্যের আদর্শ ভ্রমণস্থল হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ বার গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক নানা প্রকল্পকে।” পর্যটনসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “নানা ভাবে আমরা খতিয়ে দেখছি বাড়তি পর্যটক টানতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। গত ৪ নভেম্বর লন্ডনের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় এ রাজ্যে পর্যটক নিয়ে আসতে আগ্রহী বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বার্লিনের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা, সিঙ্গাপুরের ‘আইটিবি এশিয়া’-তেও বিভিন্ন স্তরে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”
দিল্লির বৈঠকে যোগ দিতে আসেন রাজ্যের ২৮০টি ভ্রমণ সংস্থার সংগঠন ‘ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সিংহরায় বলেন, “ফি-বছর গড়ে ১০ শতাংশ করে পর্যটক বাড়ছে। পরিকল্পনামাফিক নয়া নয়া ক্ষেত্র তৈরি করলে সুফল মিলবে বই কী! বিশেষ করে দার্জিলিং এখন সেজেগুজে প্রস্তুত।” তিনি জানান, দিল্লির বৈঠকে সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, চিন, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের ভ্রমণ সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ রাজ্যের আকর্ষণীয় নানা স্থানের ছবি দেখানো হয়।
টিডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্ম দাশগুপ্ত জানান, আগামী দুর্গাপুজোতেও যথেষ্ঠ সংখ্যক পর্যটক আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত বছর পুজোর আগে দু’টি রাজ্যে এ কারণে প্রচার-অভিযান চালানো হয়। এ বার আরও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। |