বাম আমলে গড়া সেতুর থামে ফাটল ধরা পড়ায় নতুন করে করতে হয়েছে প্রকল্পের শিলান্যাস। মঙ্গলবার হাসনাবাদে কাটাখালিতে সেই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এ জন্য বাম জমানার অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং সেই আমলে এলাকার বিধায়ক তথা আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে এফআইআর করা হবে বলে হুমকি দিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
২০০৬-এ কাটাখালি নদীর উপরে ওই সেতুর শিল্যানাস হয়। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তদানীন্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব, পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু দু’টি থাম এবং সংযোগকারী রাস্তার কিছুটা হওয়ার পরে, কাজ এগোয়নি। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেতুর কাজ দেখতে যান প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। তিনি ঘোষণা করেন, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু তার পরেই সেতুর দু’টি থামে বড় ধরনের ফাটল ধরা পড়ে। কলকাতা, যাদবপুর, মুম্বই ও খড়্গপুর আইআইটি থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসে থাম পরিদর্শনে। তাদের মত ছিল, পুরনো থামের উপরে আর নির্মাণ করা যাবে না। সেগুলি ভেঙে নতুন থাম গড়ে সেতু করতে হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেন। সেই সুপারিশ অনুযায়ীই এ দিন হাসনাবাদে নয়া সেতুর প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়। |
বর্তমান পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “আগের থাম ভেঙে নতুন থাম গড়তেই ২০ কোটি টাকা জলে যাবে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এই দুর্নীতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, সেই নেতা-মন্ত্রী-আমলা এবং ঠিকাদারকাউকেই ছাড়া হবে না।” সুর চড়িয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “বাম আমলে তৈরি সেতুর থামগুলোয় ফাটল ধরার জন্য তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রয়োজনে এফআইআর করতে বলা হয়েছে পূর্তমন্ত্রীকে।” তাঁর বক্তব্য, “সেতুর জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিলেন অসীমবাবু। এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসাবে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছিলেন গৌতমবাবু। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরেও যখন সেতুর কাজ শেষ হল না, তখন কি তাঁরা ঘুমোচ্ছিলেন? সেতু তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে জেনেও ধামাচাপা দিতে তাঁরা চুপ করেছিলেন। সে জন্যই ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হওয়া দরকার।” খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ওই সেতুর কাজ শেষ হতে ৪০-৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। অসীমবাবু এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, “ওঁরা (শাসক দল) মাঝেমধ্যেই এক-একটা বিষয় খুঁচিয়ে তুলে বদনাম করার চেষ্টা করছেন। দেশে বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। যা খুশি ওঁরা করতে পারেন।”
এ দিনই সল্টলেকের জিএ ব্লকে কর্মরত মহিলাদের জন্য একটি হস্টেলের দ্বারোদ্ঘাটন করে নাম না করে প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেবকে বেঁধেন দফতরের বর্তমান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর মন্তব্য, “বাম আমলে আবাসন দফতরে কার্যত ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছিল। হাত-পা নেড়ে যে, যা-ই বলুন, ৩৪ বছরে ওই দফতর কিছুই করেনি।” মন্তব্যের সমর্থনে পরিসংখ্যান টেনেছেন অরূপ। তাঁর দাবি, বাম আমলের ৩৪ বছরে আবাসন দফতর বাড়ি তৈরির বিভিন্ন প্রকল্পে ১৬৩ কোটি টাকা খরচ করেছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল জমানায় ওই দফতর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলেছে।
বহু চেষ্টা করেও গৌতমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সেতু-দুর্নীতি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, পদ্ধতি মেনে যে ভাবে সরকারি প্রকল্প মঞ্জুর করা হয় এবং তার প্রযুক্তিগত নকশা তৈরি হয়, সে সব মেনেই ওই সেতুর কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। তার পরে কী ঘটেছে, না জেনে বলা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নজর দিয়েছে কি না, তা-ও দেখা দরকার। সেই সময়ে এলাকার বিধায়ক হিসেবে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে কেবল হাজির হওয়ার জন্যই প্রাক্তন মন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তোলা যায় না। |