দিল্লি রোড চার লেন করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে দিল্লির একটি সংস্থা ওই কাজ করছে। আপাতত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে দিল্লি রোড লাগোয়া জমির মাটি সমান করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্যায়ক্রমে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিগুলির জল পাম্পের সাহায্যে সরিয়ে সেগুলি ভরাট করার কাজে হাত দেবে ঠিকাদার সংস্থা।
ডানকুনি থেকে মগরা খানাখন্দে ভরা দিল্লি রোড ধরে ‘নরকযাত্রা’র দিন এ বার কার্যত শেষ হতে চলেছে। ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তার খোলনলচে বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আর তা হলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি আরও একটি উচুঁমানের সড়ক পথ পাবে হুগলি জেলা।
পূর্ত দফতর জানায়, ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি পর্যায়ে চার লেনের দিল্লি রোড তৈরির কাজ হবে। দিল্লির একটি সংস্থা প্রথম পর্যায়ে ডানকুনি থেকে চন্দননগর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে হাত দিয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে হবে চন্দননগর থেকে মগরা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ। সেই কাজ অবশ্য করবে অন্য ঠিকাদারি সংস্থা। |
ডব্লুবিএইচডিসির ওই প্রকল্পের অন্যতম ডিরেক্টর শ্রীকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে আগামী দু’বছরের মধ্যে। পরবর্তী পর্যায়ের কাজ শেষ করতে অন্তত আড়াই বছর সময় লাগবে। দীর্ঘ ওই রাস্তার উপর দুটি বড় সেতু ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ছোট সেতু তৈরি করা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন চেহারায় দিল্লি রোড তৈরি করা হলে টোল ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু করা হবে। কারণ, সেই ক্ষেত্রে টোল ব্যবস্থা চালু থাকলে রাস্তা সংস্কারের কাজ সহজতর হয়। আর্থিক দিক দিয়েও সরকারের উপর কোনও চাপ থাকে না। তার ফলে রাস্তার মান ভাল থাকে। আর্থিক সঙ্গতি থাকলে অন্যান্য বহু সমস্যাও এড়ান যায়।
দিল্লি রোড নতুন করে তৈরি হলে চার লেন অন্তত ৬২ ফুট চওড়া হবে। এখনকার ৪০ ফুট চওড়া ওই রাস্তার দুই ধারে ৭.৫ মিটার করে দু’টি নতুন লেন তৈরি করা হবে। নতুন লেন তৈরিতে রাস্তার দু’ধারে থাকা পূর্ত দফতরের নিজস্ব জমিই কাজে লাগানো হবে। ওই কাজের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না বলেই পূর্ত দফতর সূত্রের খবর। দিল্লি রোডের উপর কাঠকুন্তী নদীতে যে পরিত্যক্ত সেতুটি বর্তমানে রয়েছে, সেখানে তৈরি হবে নতুন একটি সেতু। সম্প্রসারিত রাস্তার যে অংশে হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথ পড়ছে, সেখানেও একটি ছোট সেতু তৈরি হবে। এ ছাড়াও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও নতুন একটি সেতু তৈরি করা হবে।
বস্তুত, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হওয়ার পর থেকেই দিল্লি রোড তার পুরনো কৌলীন্য হারিয়ে ফেলে। রক্ষণাবেক্ষণও ইদানীং তেমন না হওয়ায় রাস্তার হাল দিনদিন শোচনীয় হচ্ছিল। সম্প্রতি হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে এই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপরই রাস্তাটির আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় প্রশাসনিক স্তরে। রাস্তার খারাপ হালের জন্য প্রয়োজনে তিনি সেই সময় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার পরামর্শও দেন মমতা। |
দীর্ঘদিন যাবত দিল্লি রোডের বেহাল এই দশার জন্য চাপ বেড়ে চলেছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরেও। টোলট্যাক্স দিতে হলেও বেশির ভাগ গাড়ি প্রথম পছন্দ হিসেবে ওই রাস্তাটিকেই বেছে নিচ্ছে। ফলে দিল্লি রোডের দু’ধারে থাকা পেট্রোল পাম্প, হোটেল, ছোট-বড় দোকানের ব্যবসাও মার খাচ্ছে। পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর চাপ মারাত্মক বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্যই দিল্লি রোডের আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সব মহলের আশা, দিল্লি রোড নতুন চেহারায় ফিরলে তার গুরুত্বও ফিরবে। দিল্লি রোডের ধারে রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনে যে সব গাছ কাটা হবে, তার টেন্ডারও ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ গতি পাবে বলে পূর্ত দফতর সূত্রের খবর। |