|
|
|
|
৩২ লক্ষ তছরুপে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের সই জাল করে স্কুলের কর্মী সমবায় সমিতির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠল ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মারিশদা বিজয়কৃষ্ণ জাগৃহী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পুলিনবিহারী নায়ক পদাধিকারবলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী সমবায় সমিতির সম্পাদক। অভিযোগ, পুলিনবিহারীবাবু স্কুলের ১০ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কমর্চারীর সই জাল করে প্রতারণা করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতারিত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা সংশ্লিষ্ট বলাগেড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের দারস্থ হন। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর কাছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। বলাগেড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী সমবায় সমিতির অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
ওই ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ ও ২০০৮ সালে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ ১০ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কমর্চারীর নামে দু’দফায় ওই ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৩১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮১৫ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ঋণের টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় গত ১৮ নভেম্বর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ স্কুলের কর্মচারী সমবায় সমিতির সভাপতির কাছে অনাদায়ী ঋণ সংক্রান্ত একটি নোটিস পাঠান। ওই নোটিসে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই ঋণের সুদ বাবদ বকেয়া হয়েছে ২১ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৭১ টাকা। ওই সুদের সঙ্গে আসলের ৩১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮১৫ টাকা মিলে মোট বকেয়া টাকার পরিমাণ ৫৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৯৫ টাকা। নোটিসে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের প্রাপ্ত বেতন থেকে বকেয়া ঋণের টাকা কেটে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ওই নোটিসে কাদের নামে ঋণ রয়েছে সেবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ না থাকায় স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক মানিক দলুই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ঋণগ্রহীতা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের নামের তালিকা-সহ বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠান।
সেই মতো ব্যাঙ্কের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন গঙ্গোপাধায় ঋণগ্রহীতা স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ দশ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নামের তালিকা ও তাঁদের নেওয়া ঋণের পরিমাণের তালিকা স্কুলে পাঠায়। ব্যাঙ্কের পাঠানো তথ্য দেখে স্কুলের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ! স্কুল সূত্রে খবর, প্রতারিত শিক্ষকদের মধ্যে তিন জন শিক্ষক ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন।
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গঙ্গাধর দাসের অভিযোগ, “তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না। অথচ ব্যাঙ্কের পাঠানো তালিকায় তাঁর নামে ২০০৬ সালের ২২ অগস্ট দু’লক্ষ টাকা ও পরে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর আরও আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” একইভাবে, স্কুলের করণিক সৌমিত্র করণ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সুংধাশু সাহু সকলেই জানিয়েছেন, তারা কখনই স্কুলের কর্মচারী সমিতির কাছে ঋণ নেননি। এমনকী তাঁরা ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন গঙ্গোপাধায় বলেন, “স্কুলের কর্মচারী সমিতির হয়ে যে দশজনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে তাঁদের প্রত্যকের নামে ব্যাঙ্কের পাশবই রয়েছে। এবং তাঁদের প্রত্যেকের সই দেখে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সমিতির সম্পাদক হিসেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিনবাবু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের সাক্ষর-সহ যে নামের তালিকা দিয়েছেন তাঁরাই ঋণ পেয়েছেন।”
তিনি জানান, শিক্ষকদের সই জাল করা হলে সেটা সমিতির সম্পাদক ও সমিতির সদস্যদের ব্যাপার। ব্যাঙ্ক সমিতির কাছেই বকেয়া টাকা ফেরত চেয়েছে। বকেয়া টাকা ফেরত না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও প্রধান শিক্ষক পুলিন বিহারী নায়ক এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “সঠিক সময় এলেই যা বলার বলব। এখন কোনও মন্তব্য করব না।” |
|
|
|
|
|