আমদাবাদ থেকে মুম্বই ১৯০০ টাকা!
কমতে কমতে বিমানভাড়া নেমে এল দু’হাজারেরও নীচে! বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান টিকিট এত সস্তা গত ক’বছরে হয়নি। কলকাতা থেকে হায়দরাবাদ বা চেন্নাইয়ের টিকিট মিলছে মাত্র তিন হাজারে! হরেক বিমানসংস্থার মধ্যে যাত্রী টানার প্রতিযোগিতার জেরেই ভাড়া এ ভাবে হুড়মুড়িয়ে পড়ছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহল সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট কিছু উড়ানের নির্দিষ্ট কিছু আসনেই শুধু ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর বিপণনের কারসাজিতে সেই ঘাটতি পুষিয়েও নেওয়া হচ্ছে বিলক্ষণ। বরং অল্প সময়ে যতটা সম্ভব নগদ অর্থ উপার্জন করে ঋণের বোঝা হাল্কা করাই ‘ছাড়-যুদ্ধের’ মূল লক্ষ্য বলে মনে করছে এই মহল।
ভাড়া কমানোর টক্করটা শুরু করেছিল স্পাইসজেট, সোমবার সকালে। পাল্লা দিতে সোমবার রাতে ইন্ডিগো-ও দাম কমায়। মঙ্গলবার জেট এয়ারওয়েজ প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে। ট্র্যাভেল এজেন্টদের আশা, এয়ার ইন্ডিয়া-ও অবিলম্বে ভাড়া-যুদ্ধে নেমে পড়বে। এ দিকে গত ক’বছর ধরে বিমান-জ্বালানির দর ঊর্ধ্বমুখী। বিভিন্ন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং ফি, পার্কিং ফি বেড়েছে। বেড়েছে বিমান চালানোর খরচ। অধিকাংশ বিমানসংস্থাই কম-বেশি লোকসানে চলছে।
এমতাবস্থায় এত সস্তায় তারা টিকিট বেচছে কী ভাবে, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ভারতের আকাশে এখন সবচেয়ে বেশি ওড়ে যে যাত্রী-বিমান, সেই এয়ারবাস-৩২০’র কথাই ধরা যাক। সস্তার এয়ারলাইন্সের ওই বিমানে ১৮০টি আসন থাকে। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, এর ঘণ্টাপিছু উড়ান-ব্যয় প্রায় চার লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, কলকাতা থেকে চেন্নাই দু’ঘণ্টার উড়ানে খরচ আট লাখ, যার তিন লাখ পোড়ে শুধু জ্বালানির পিছনে। হিসেব বলছে, ১৮০টি টিকিটই সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করলে শুধু খরচ তোলা যাবে। লাভ হবে না।
তা হলে কী ভাবে কলকাতা-চেন্নাই রুটের টিকিট তিন হাজারে বিকোচ্ছে?
জবাবে বিপণন-কৌশলের কথাই বলছেন ভ্রমণ-ব্যবসায়ীদের একাংশ। যেমন কলকাতার এক ট্র্যাভেল এজেন্সির এক কর্তার দাবি, “অফার শুনলে মনে হবে, প্রতিটা ফ্লাইটের প্রতিটা টিকিটই সস্তা হয়েছে! বাস্তবে কিন্তু হয়নি।”
তিনি বলেন, “ধরুন মে মাসের এক দিনে কলকাতা থেকে দিল্লি যাবেন। অনলাইনে সাইটে ঢুকে সস্তার টিকিট না-ও পেতে পারেন। বাছা বাছা কিছু উড়ানে ১৫-২০টি টিকিট শুধু কম দামে ছাড়া হয়। তার একটা কপালে জুটলে আপনি ভাগ্যবান।” বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, কুড়িটা টিকিট সস্তায় বিক্রি করলেও লোকসানের প্রশ্ন নেই। কারণ সে ক্ষেত্রে বাকি ১৬০টির ভাড়া এমন ভাবে তৈরি হয়, যাতে বিমান চালানোর খরচটা ওঠে। বাড়তি হিসেবে থাকে এক লপ্তে অনেক টিকিট বিক্রির সম্ভাবনা, যা কি না সংস্থার ভাঁড়ারে নগদের জোগান বাড়ায়। “মূলত এই তাগিদেই দাম কমানোর লড়াই।” মন্তব্য এক ব্যবসায়ীর। সেটা কী রকম?
একটি বিমানসংস্থার এক কর্তার কথায়, “সস্তার টিকিট অফার করলেই যাত্রীরা টোপে পড়ে সাইটে ঢুকে পড়ছেন। সুবিধামতো দিনে সবচেয়ে সস্তার টিকিট না-পেলেও অনেকে পরের ধাপের টিকিট কাটছেন। দিনক্ষণ বা প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না। এতে এক ধাক্কায় বিমানসংস্থার প্রচুর টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ক্যাশ ফ্লো বাড়ছে।” সস্তার টোপে অন্য কাজও হাসিল হচ্ছে। ভ্রমণ-কারবারি মহলের খবর, আগে যত বার সস্তার বিমানযাত্রার অফার ঘোষণা হয়েছে, বহু লোক টিকিট কেটেছেন, আগাম কোনও পরিকল্পনা ছাড়া। দেখা গিয়েছে, অনেকে নিজেদের অসুবিধার কারণেই হয় টিকিট বাতিল করেছেন, কিংবা যাত্রার দিন পাল্টেছেন। “দু’টোতেই এয়ারলাইন্সের লাভ। ক্যানসেল করলে টাকা কাটা হবে। দিন পাল্টালে বাড়তি চার্জ জুড়বে।” বলেন ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া-র কর্তা অনিল পাঞ্জাবি।
বস্তুত যাত্রীদের সাধারণ প্রবণতা যাচাই করেই দাম কমিয়ে প্রলোভিত করার এ হেন বিপণন-কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে বিমানসংস্থা-সূত্রের ইঙ্গিত। ফলও মিলছে। ক’মাস আগে এ ভাবে সস্তার অফার দিয়ে মাত্র দু’দিনে বাজার থেকে একশো কোটি টাকা তুলে নেয় এক বিমানসংস্থা। এমন চটজলদি প্রাপ্তি ভীষণ মূল্যবান। দেনার ভার লাঘব করতে তা কাজে আসে।
আকাশপথে ভাড়া-যুদ্ধ চলছে চুটিয়ে। চলতি বছর এ নিয়ে তৃতীয় বার। সস্তার টিকিট কিনতে যথারীতি হুড়োহুড়ি। আজ, বুধবারই যে শেষ দিন! |