উদ্বৃত্ত জমি নিলাম করে সংস্থার আর্থিক হাল ফেরাতে এক পা এগোল ৫২ বছরের পুরনো সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। পরামর্শদাতা সংস্থার দেওয়া রোডম্যাপ অনুমোদন করেছে আর্থিক অনটনে জর্জরিত ডিপিএল-এর পরিচালন পর্ষদ।
তবে এক সঙ্গে বড় জমি বিক্রি নয়। প্রায় ১৪০০ একর জমির উপরে তৈরি ডিপিএল চত্বরে আপাতত ছ’টি প্লট নিলামের জন্য চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৭২ একর জমি রয়েছে। দফায় দফায় নিলামের পিছনে রয়েছে দু’টি যুক্তি। একটি মানবিক। সরকারি সূত্রের খবর, যে-জমি ফাঁকা রয়েছে বা যে-জমিতে খুব কম সংখ্যক মানুষ রয়েছেন, সেগুলিই প্রথমে বেছে নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়টি বাণিজ্যিক। বাজারের চাহিদা বুঝতে অল্প জমি দিয়েই শুরু করতে চায় সংস্থা। |
বাড়তি জমি কতটা এবং কী ভাবে তার বাণিজ্যিক ব্যবহার করা যায়, সেই পথ খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-কে। ট্রানজাকশন অ্যাডভাইজর হিসেবে বর্তমান জমির ব্যবহার, একর প্রতি জনসংখ্যার চাপ ও ফ্রি ল্যান্ড বা যে-জমি এখনই বিক্রয়যোগ্য, তা চিহ্নিত করেছে তারা। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, নিলামের ক্ষেত্রে জমির ব্যবহারের উপর কোনও শর্ত বেঁধে দিতে চায় না রাজ্য। অর্থাৎ ওই জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কও করা যাবে। আবার স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, আবাসনও গড়া যাবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া এই সংস্থার আর্থিক অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই বেহাল। লোকসানের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী। পুরনো ও মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়া যন্ত্রপাতির দরুন উৎপাদনশীলতা বজায় রাখাই সমস্যা। গত আর্থিক বছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। ঘাড়ে ঋণের বোঝাও কম নয়। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশনের থেকে ২৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সংস্থা। সেই ঋণের ২০০০ কোটি টাকা এখনও শোধ হয়নি। এরই মধ্যে জানুয়ারি মাসে দু’টি ইউনিট খারাপ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ৩৫০০ কর্মীর এই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে তাদের নিজস্ব সম্পত্তি কাজে লাগানোর দিকেই নজর দিচ্ছে সরকার।
প্রায় ১৪০০ একর জুড়ে রয়েছে সংস্থার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্মী আবাসন, স্কুল, জল-বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো। রেল লাইনের দু’ধারে ছড়িয়ে জমি। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যেতে রেল লাইনের ডান দিকে পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও শ্রমিক আবাসন। ৪০০ একর জমি আছে এখানে। অন্য দিকে, অর্থাৎ রেল লাইনের বাঁয়ে ৯৫০ একর। সেখানে অফিসারদের আবাসন, স্কুল, মুর্গি খামার, শালবন, আমবন, বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানা, জলের পাইপলাইন ও বিদ্যুতের লাইন। প্রথম ধাপে এই ৯৫০ একর জমির মধ্যেই মোট ছ’টি প্লট বাছা হয়েছে।
আর্থিক সঙ্কটে জেরবার রাজ্য সরকার রুগ্ণ সংস্থার নিত্য খরচ জোগাতে নাজেহাল। সমাধানসূত্র হিসেবে তারা পরিবহণ সংস্থার বাড়তি জমি নিলাম করে ইতিমধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখেছে। নিলামে তুলেছে কলকাতায় ছ’টি ট্রাম ডিপোর জমিও। তিনটি ডিপোর জমির সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ দর উঠেছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে বাকি তিনটি জায়গার জন্য তেমন সাড়া মেলেনি। তিনটিরও কম দরপত্র জমা পড়ায় নতুন করে টেন্ডার ডাকতে হবে। সেই কারণেই ডিপিএল বাজার মেপে পা ফেলতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। |