বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের বিরুদ্ধে ফের মেধাসম্পদ আইন ভাঙার জোরদার অভিযোগ আনল মার্কিন শিল্পমহল। এর মধ্যে পড়ছে পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইটের মতো আইন। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের রক্ষণশীল
|
জ্যাসপার ম্যাকস্ল্যারো |
বাণিজ্য আইন এবং এ ক্ষেত্রে সংস্কারের অভাবের দিকেই তারা অভিযোগের আঙুল তুলেছে।
আমেরিকার প্রভাবশালী শিল্পমহলের একাংশ, বিশেষ করে ওষুধ ও উৎপাদন শিল্পের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিদেশি সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ বহাল রাখার কারণ দেখিয়ে তারা ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করতে ওবামা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে। ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশি রাষ্ট্র’ বা ‘প্রায়রিটি ফরেন কান্ট্রি’ শীর্ষক এই তালিকায় সেই সব রাষ্ট্রকেই ফেলা হয়, যারা আমেরিকার মতে মেধাসম্পদ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) আইন ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি। অভিযোগ, ওই সব রাষ্ট্রের খাড়া করা বাণিজ্য বিধিনিষেধের জেরে বিদেশে মার্কিন সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতার পরিবেশে ব্যবসা করতে পারছে না। এ ধরনের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে:
• মার্কিন বৈদেশিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলা
• রফতানিতে আমেরিকাকে পিছিয়ে দেওয়া
• আমেরিকায় উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি কমে যাওয়া
• মার্কিন কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব
• বৈষম্যমূলক মেধাসম্পদ আইন ও শিল্পনীতি
• ভারতীয় সংস্থার জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা
• মেধাসম্পদের উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না-করা।
মার্কিন শিল্পমহলের চাপে ভারত ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলে দু’দেশের মধ্যে কার্যত বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মার্কিন প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে আর্জি জানিয়েছে ৬টিরও বেশি প্রভাবশালী বণিক সংগঠন। তারা মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির নেতৃত্বাধীন সরকারি কমিটির সামনে হাজির হয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। ওই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতরেই আলাদা আলাদা ভাবে দু’টি চিঠি লিখেছে আরও ৬০টি শিল্প সংস্থা এবং উপদেষ্টা সংগঠন। মার্কিন বণিকসভা ইউ এস চেম্বার অব কমার্স-এর মেধাসম্পদ সুরক্ষা কেন্দ্র গ্লোবাল ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সেন্টার-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর জ্যাসপার ম্যাকস্ল্যারো বাণিজ্য প্রতিনিধির নেতৃত্বাধীন ওই কমিটির সামনে বলেছেন, “গত দু’বছরে ভারত সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার প্রভাবে বাণিজ্য পরিবেশের দ্রুত অবনতি হয়েছে। মেধাসম্পদের ক্ষেত্রই বিষয়টি বেশি করে প্রকট হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ভারত ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে।”
প্রসঙ্গত, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর এই সব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছরই প্রকাশ করে স্পেশাল ৩০১ রিপোর্ট। ম্যাকস্ল্যারো বলেন, ভারতে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে ২০১৪-র এই রিপোর্টেই ভারতকে প্রায়রিটি ফরেন কান্ট্রি-র তলিকায় আনার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। আর একটি সংগঠন অ্যালায়েন্স ফর ফেয়ার ট্রেড উইথ ইন্ডিয়া-র পক্ষ থেকে ব্রায়ান পম্পার একই সুরে অভিযোগ এনে বলেছেন, “মেধাসম্পদ নিয়ে গত এক বছরে ভারতের ধ্যান-ধারণা এবং মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই দেশটিকে প্রায়রিটি ফরেন কান্ট্রি-র তালিকায় আনার সময় এসেছে।” ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর হার্ব ওয়্যামস্লে-র অভিযোগ, “নিজেদের সংস্থাকে ভারত যে-রকম সুরক্ষা দেয়, তা থেকে বঞ্চিত মার্কিন সংস্থাগুলি। মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষ ভাবে সত্যি।”
মার্কিন বণিকমহল ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নীতি আঁকড়ে থাকলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত বিদেশি লগ্নি এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে ভারত। পাশাপাশি, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আমেরিকার শিল্প সংস্থাগুলি। |