বাসে অত্যধিক যাত্রী ছিল। যার ফলে বাঁক ঘোরার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি একটি নয়নাজুলিতে উল্টে যায়। এখনও পর্যন্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হলেও শিশু ও মহিলা-সহ কমপক্ষে ৫০ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে পাড়ুই থানার দেবগ্রাম ঢোকার মুখে সুনুটিয়া মোড়ে। পুলিশ জানায়, মৃত জার্মান শেখের (৪৫) বাড়ি পাড়ুই থানার খিরুলি গ্রামে। বাকি আহতরা সাত্তোর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সিউড়ি সদর হাসপাতাল ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
বোলপুরের এই বাস উল্টে জখম হয়েছেন ৫০ জন যাত্রী। |
বাসে অত্যধিক যাত্রী নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বোলপুর মহকুমা বাস ও মিনি বাস মালিক সংঘটনের সাধারণ সম্পাদক সুজিত মণ্ডলের দাবি, “পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কয়েকবার বোলপুর ও জেলা সদর সিউড়িতে বৈঠক হয়েছে। আমরা তো অতিরিক্ত যাত্রী নিতে বলি না। কিন্তু যাত্রীরা ছাদে ওঠার জন্য জোর করে। ছাদে লোক নেওয়ার জন্য বহুবার বেশ কিছু রুটের বাসকে আটকে দেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে আরও একটু উদ্যোগী হতে হবে।” বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
আহতদের আনা হচ্ছে সিউড়ি সদর হাসপাতালে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরগামী এই বাসটি যখন শঙ্খবাড়ি স্টপেজ ছাড়ে, তখন ওই বাসের ভিতরে ও ছাদ মিলিয়ে প্রায় ৮০ জন যাত্রী ছিলেন। যাত্রী শান্তনু কর্মকার, সন্তু মণ্ডল, সাকিরা বিবিরা বলেন, “বাসটি খুব জোরে চলছিল তা নয়। কিন্তু দেবগ্রাম ঢোকার আগে আচমকা একটি বাঁকের কাছে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। রাস্তার ধারে ডান দিকে থাকা প্রায় ১২ ফুট নীচের নয়ানজুলিতে উল্টে যায় বাসটি।” যাত্রীদের চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ ডোম, রূপা সিংহ, গোপীচরণ চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “যাত্রীদের চিৎকার শুনে আমরা যে যার কাজ ফেলে ছুটে আসি। আহতদের উদ্ধার করার পাশাপাশি যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় পাড়ুই থানায়।” খবর পেয়ে এলাকায় আসেন বোলপুরের বিডিও শমিক পানিগ্রাহী, মহকুমাশাসক মলয় হালদার, এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব। মহকুমাশাসক মলয়বাবু বলেন, “সুচিকিৎসার জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সব দিকে নজর আছে।”
বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “এক জন শিশু, ১১ জন মহিলা-সহ ২৮ জন এখানে ভর্তি হয়েছেন। ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায়, বর্ধমানে স্থানান্তর করা হয়েছে।” দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বিশ্বভারতীর কর্মী, গবেষক-সহ বেশ কয়েকজন বিশ্বভারতীর ছাত্র। ছাত্র পরিচালক তথা অধ্যাপক শমিত রায় বলেন, “বেশ কয়েকজন ছাত্র, গবেষক, কর্মীরা বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাঁদের বিশ্বভারতীর পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।” |
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
|