আবাসন প্রকল্প এলাকায় পাঁচিলের ভিতরের জমিতে যন্ত্র দিয়ে মাটি-পাথর কেটে ফেলা হচ্ছিল বাইরে। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হল পাঁচিলের পাশে থাকা এক কিশোরের।
মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনার পরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে আসানসোলে ও কে রোড এলাকা। মাটি কাটার যন্ত্রটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গেলে ইট-পাটকেল ছুড়ে সেটিকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় জনতা। ক্ষতিপূরণের দাবিতে মৃতদেহ রেখে প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। শেষে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে মধ্যস্থতা করার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার চাডিভে বলেন, “মাটি কাটার যন্ত্রের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানা এলাকার ওই আবাসন প্রকল্পের পাঁচিলের পাশে প্রাতঃকৃত্য সারছিল মহম্মদ আসিফ (১২) নামে ওই কিশোর। তখন পাঁচিলের ভিতরে মাটি ও পাথর কেটে বাইরে ফেলার কাজ করছিলো একটি যন্ত্র। যন্ত্রটির চালক ওই কিশোরকে দেখতে পাননি। |
তিনি মাটি-পাথর বাইরে ফেলতেই চাপা পড়ে আসিফ। তা দেখে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে যান। মাটি ও পাথর সরিয়ে আসিফকে উদ্ধার করেন তাঁরা। কিন্তু তত ক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই জড়ো হয়ে যান হাজার খানেক বাসিন্দা। শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রথমে ওই মাটি কাটার যন্ত্রটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। তার পরে একটি ট্রাক্টর, দু’টি ঢালাই সামগ্রী মিশ্রনের যন্ত্র-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্রে আগুন লাগানো হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ পরে কমিশনারেটের দুই এডিসিপি সুরেশকুমার চাডিভে ও সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহকুমার বিভিন্ন থানা থেকে বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নেভাতে দমকলের একটি ইঞ্জিনও পৌঁছয়। কিন্তু ক্ষিপ্ত জনতা দমকলকে কাজ করতে দেয়নি। বাধার মুখে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয় ইঞ্জিনটি। সেই সময়ে পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি পুলিশও। |
কিশোরের দেহ ঘটনাস্থলে ফেলে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছেলের দেহ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আসিফের বাবা, পেশায় রাজমিস্ত্রি মহম্মদ মেহেবুব। এলাকার বাসিন্দা ও মৃতের পরিজনেরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তা না পেলে বিক্ষোভ তোলা হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি দিনই পাঁচিলের ও পার থেকে মাটি-পাথর বাইরে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইসলামের কথায়, “আমরা অনেক বার এ ভাবে মাটি-পাথর ফেলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু সে কথা শোনা হয়নি। তাই আজ এই কাণ্ড ঘটে গেল।”
ওই আবাসন প্রকল্পের নির্মাণ সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার বিষ্ণু হরলালকা অবশ্য দাবি করেন, যেখানে মাটি কাটার কাজ চলছিল, সেই জায়গাটি তাঁরা এক ব্যক্তিকে বিক্রি করেছেন। সেই ব্যক্তিই এ দিন সেখানে মাটি কাটার কাজ করাচ্ছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। জায়গাটি তাঁদের সীমানা পাঁচিলের মধ্যে পড়ায় ভুল করে তাঁদের সংস্থার নাম জড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিকেল ৪টে নাগাদ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে পুলিশ মধ্যস্থতায় বসে। তার পরেই বিক্ষোভ থামে। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিভে বলেন, “বাসিন্দারা বেশ কিছু সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় সমস্যা মিটেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করব।” |