পুরস্কার পাওয়া গান পাতে দেওয়ার মতো নয়

মনোময় বলতেই কেন শুধু রোম্যান্টিক ‘মনের মানুষ’-এর কথা মনে হয়? ইন্ডাস্ট্রির গ্ল্যামারাস গায়ক হয়ে উঠতে পারলেন না কেন মনোময়?

আমি খুব নরম মনের, অভিমানী, লাজুক মানুষ। পার্টিতে যাই না। আমার পি আর-ও খুব খারাপ। এখনকার সঙ্গীত পরিচালকদেরও ফোন করে বলতে পারি না আমাকে একটা সুযোগ দিন। এখন ইন্ডাস্ট্রি লবিতে চলে। আমার কোনও লবি নেই। তাই সেই অর্থে গ্ল্যামারাস গায়ক আমি হতে পারিনি।

লবি না থাকার জন্যেই কি ‘জাতিস্মর’-এর গান রেকর্ড করার পরেও আপনার কণ্ঠে সেই গান শোনা গেল না?
কবীর সুমন অ্যান্টনির গানের রেকর্ডিংয়ের সময় অসম্ভব খুশি ছিলেন আমার গলা নিয়ে। কিন্তু তার পর গানগুলো কেন থাকল না? সেটা কবীর সুমন আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলতে পারবেন। এটা আমার জানার কথা নয়।

কিন্তু অ্যান্টনির কণ্ঠে আপনার গানগুলো যে ছবিতে রাখা হবে না, সেটা আপনাকে জানানো হয়েছিল?
অবশ্যই। সৃজিত মুখোপাধ্যায় আমায় ফোন করে জানান।

আপনি কারণ জানতে চাননি?
এটা ছবির পরিচালক আর সঙ্গীত পরিচালকের বিষয়। আমি কী জিজ্ঞাসা করব? হ্যাঁ, খারাপ তো লেগে ছিলই। ‘জাতিস্মর’-এর জন্যে প্রচুর শো ক্যান্সেল করেছিলাম। তার ফল তো এখন পাচ্ছি! কিন্তু সে ভাবে কোনও প্রশ্ন করিনি।

কিন্তু ছবিতে হরু ঠাকুরের গানটা তো আপনার গাওয়া?
হ্যা।ঁ
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
‘জাতিস্মর’-র ছাড়াও ঋতুপর্ণ ঘোষ-এর ‘শুভ মহরৎ’,‘সত্যান্বেষী’, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ছবিতে আপনি তো গান গেয়েছেন, কিন্তু নিউ এজ বাংলা ছবির গায়ক হিসেবেও তো সে ভাবে আপনার জায়গা তৈরি হয়নি...
দেখুন বাংলা ছবির গানের ক্ষেত্রে আমি জানি আমি আছি, আবার নেই-ও। ঋতুপর্ণ ঘোষ যেদিন চলে গেলেন, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ গান বাজানো হচ্ছে। গানটা ‘শুভ মহরৎ’-এ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়-এর লিপে আমি গেয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই জানে ওটা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া! তাই ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পর্কে যখন মিডিয়া বাইট নিয়েছে, তখন আমায় কেউ কিছুই জিজ্ঞেসই করেনি, এটাই আমার ভাগ্য!

ঋতুপর্ণ ঘোষ তো আপনাকে বিশেষ পছন্দ করতেন?
হ্যাঁ, ঋতুপর্ণ ঘোষ বলেছিলেন আমাকে অভিনয়ে আসতে। সেটা ২০০৪। অথচ যখন ঋতুপর্ণ ঘোষ-এর রেট্রস্পেক্টিভ হল, আমায় গান গাওয়ার জন্যে কেউ ডাকল না। এমনটাই হয়ে আসছে। এক এক সময় তো মনে হয় গানবাজনা থেকে অনেক দূরে চলে যাই।

তা হলে ঋতুপর্ণ ঘোষ-এর অভিনয়ের প্রস্তাবটা গ্রহণ করলেই তো পারতেন?
না, কখনওই না। আমি যদু ভট্টের বংশধর। আমার গানের জন্যে আমার বাবা তাঁর পেশাগত জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আর আমিও গান নিয়েই চলতে চাই। কিন্তু তার সঙ্গেও এটাও ঠিক এই ইন্ডাস্ট্রি আমায় ব্যবহার করতে পারেনি।

কেন পারেনি?
এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে ছবির গানের ধারার বদল হয়েছে। আগেকার গানে ক্লাসিকাল আর আধুনিক মিশিয়ে একটা ধাঁচ ছিল। এখন তা নেই। হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাই, গান তুলি। এখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে একজন সঙ্গীত পরিচালকও পাই না, যিনি আমায় হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান তুলে দিতে পারবেন।

তা হলে এখন গান কেমন করে তোলা হয়?
এখন গান তোলা মানে গিটারের কর্ড বাজানো। হারমোনিয়ামে গান না তুললে, স্বরগুলোকে জানা হয় না। সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে বসে গান তৈরির মজাই তো আলাদা! এখন তো মেল-এ গান চলে আসে। তার পরে সোজা ফ্লোরে গিয়ে গাইতে হয়। এই পদ্ধতিটার সঙ্গে আমি নিজেকে মেলাতে পারি না।

আপনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো? এখন ছয়-আটের বিটের গানের যুগ। আপনি তো এই ধরনের গান করেন না...
আমার গলা যত দিন থাকবে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ আমায় সরাতে পারবে না। আমাকে মিডিয়া কোনও দিন হাইপ দিয়ে তোলেনি কিন্তু।

তা হলে কেমন করে জনপ্রিয়তা পেলেন?
আমি এফ.এম-এর প্রোডাক্ট। ‘মনের মানুষ’ গানটা এফ.এম থেকেই মানুষের মনে গেঁথে আছে।

স্টেজে অনুরোধ এলে কি ‘পরান যায় জ্বলিয়া’ গাইবেন?
ঠিক ওই গানটা হয়ত গাইব না। তবে ‘পরান যায় জ্বলিয়া’-র সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তো সম্প্রতি ‘রংবাজ’-এর মতো মেনস্ট্রিমের ছবিতে অন্য প্যাটার্নে আমায় দিয়ে ‘দিশাহীন’ গানটি গাওয়ালেন। বলে রাখি, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিন্তু আমায় পি.আর করতে হয়নি। উনি বরং নিজে থেকেই বললেন ‘দিশাহীন’ গানটি উনি আমার কথা ভেবেই তৈরি করেছেন। আর ইউ.টিউব-এর অগুন্তি লাইক অন্তত বলছে গানটা হিট।

নিজের লাইক দেখতে যেমন পছন্দ করেন তেমনই কি নিজের সমালোচনাও হজম করতে পারেন?
অবশ্যই। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার একটা জায়গা আছে। সেই কারণে লোকে স্তাবকতা করে বলে, ‘মনোময়! কী গাইলে...’ আমার এই পিঠ চাপড়ানি কিন্তু ভাল লাগে না। আমি বরং চাই লোকে আমার সমালোচনা করুক। তবেই তো আমি এগোতে পারব।

এই এগোনোর ক্ষেত্রে সঙ্গীত পুরস্কার কতটা জরুরি?
হয়তো এটা শুনলে অনেকেই রেগে যাবেন। কিন্তু আজকাল যে সমস্ত গান পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়, সেগুলো একটাও পাতে দেওয়ার নয়। ভাল গান পুরস্কার পায় না।

তা হলে আপনি কি দর্শকদের দুষছেন?
নাহ্। কখনওই না। বলা হয় ঠিকই যে দর্শকদের বিচারে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু আদৌ কি এসএমএসগুলো যায়? ঠিক বিচার হয়? এটা ঠিকই যে এখনকার জেন ওয়াই তালের গান পছন্দ করে। কিন্তু সেটা সাময়িক। আসলে যে দিন থেকে গানের ক্ষেত্রে ‘জমিয়ে দিতে হবে’ এই কথাটা এসেছে, সে দিন থেকে গান-বাজনা শেষ।

সে কী! এখন তো লোকে জমিয়ে দিতে পারে এমন গানই চায়?
একটা ভাল গান শুনে লোকে স্তব্ধ হতে পারে, জমে যেতে পারে না। জমানো মানেই এখন বারো খানা ‘সিক্স-এইট’ গান। এখন ‘বাজে গো বীণা’ কেন তৈরি হয় না? ক’জন এখন ‘ক ফোঁটা চোখের জল’ গাইতে পারবে?

আপনি তো রবীন্দ্রনাথের গানও করেন। সেখানেও কি আপনি পরীক্ষানিরীক্ষা চান না?
আমার ‘অন্য মনোময়’ অ্যালবামে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে এই সময়ের অ্যারেঞ্জমেন্টকে প্রাধান্য দিয়েছি। কথা ও সুর স্বরলিপি অনুযায়ী গেয়ে।

এই সময়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট বলতে?
‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়’ আমি শুধু গিটারে গেয়েছি। ‘বঁধু মিছে রাগ কোরো না’ গানটি কোরাসে হারমোনি করেছি। ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ’ ফিউশনে গেয়েছি। আমার করা রবীন্দ্রনাথের এই অ্যালবামটা সব চেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে। এখন ‘আউ আউ’ করে ম্যানারিজমের রবীন্দ্রসঙ্গীত কেউ চায় না। কথা বলার মতো করে গান গাইতে হবে। টনি বোসের সঙ্গেও নজরুলগীতির ‘ফিরে দেখা নজরুল’ লোকে খুব নিয়েছে।

এখন কোন সঙ্গীত পরিচালকের কাজ ভাল লাগছে?
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত খুব গুণী সঙ্গীত পরিচালক। ‘মনের মানুষ’-তো ওঁর হাতেই তৈরি।

কিন্তু তার পরে ওঁর সঙ্গে তো কাজ করেননি?
জানি না কেন ও ডাকে না আমায়। জয় সরকার, দেবজ্যোতি মিশ্রর কাজও খুব ভাল লাগে। উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাল কাজ করছেন।

গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে কাদের গান পছন্দ করেন?
মুম্বইয়ের সোনু নিগমের গানে আমি পাগল। এখন যদিও শিক্ষিত, ভদ্র গায়কদের ইন্ডাস্ট্রি নয়, আমার পছন্দগুলোই আলাদা। শম্পা কুণ্ডুর গান আমি খুব পছন্দ করি। ওর গান একঘেয়ে নয়। লোপামুদ্রা মিত্রর গান, বিশেষ করে ওর অভিব্যক্তি বা ভঙ্গি খুব ভাল লাগে।

এত যে রোম্যান্টিক গান করেন, জীবনের রোম্যান্সটা কেমন?
প্রেমে তো সব সময় কেউ না কেউ পড়ছেই!

সামলান কী করে মহিলা ফ্যান ফলোয়ারদের?
তাদের প্রথমেই বলে দিই আমি বিবাহিত, আমার ছেলে আছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয় না। তখন ব্যস্ততা দেখিয়ে পালাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.