মালদহের শ্রীপুরে ট্রেনের তলায় দুই শিশু-সহ এক মহিলার ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ঘটনার পর রাতে মৃতার পরিবারের তরফে পুলিশে বধূ নির্য়াতনের মামলা করা হলেও স্বামী সহ বাকি অভিযুক্তরা অধরা বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের খোঁজে গ্রামে পুলিশ গেলেও, ওই বধূর শ্বশুরবাড়িতে পুলিশ যায়নি।
শনিবার শ্রীপুর এলাকায় ৫ বছর এবং আড়াই মাসের দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দেন অপর্ণা মণ্ডল (২৭)। রাতেই বধূর পরিবারের তরফে রতুয়া থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ জানানো হয়। স্বামী অরবিন্দ মণ্ডল-সহ তার দুই দাদা এবং এক বোনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানান মৃতার দাদা শক্তিপদ মণ্ডল। বধূ নির্য়াতনের মামলা রুজু করা হলেও রতুয়া থানা থেকে তা রেল পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, রেল পুলিশের তরফেও ৩০২ ধারায় খুনের পৃথক একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ওটা রেলের ঘটনা। যা করার রেলকেই করতে হবে।” মৃতার দাদার দায়ের করা অভিযোগ, রতুয়া থানা থেকে রেল পুলিশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রেল পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বধূ নির্য়াতনের মামলা দায়ের হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রতুয়া থানাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মালদহ টাউন স্টেশনের রেল পুলিশের ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেল পুলিশের তরফে পৃথক মামলা হয়েছে। তবে নির্যাতনে অভিযুক্তদের ধরতে রতুয়া থানাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।” এই টানাপোড়েনে স্বামী সহ বাকি অভিযুক্তরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃতার দাদা শক্তিপদ বলেন, “রাতে রতুয়া থানায় অভিযোগ জানানোর পর আমাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ রওনা দেয়। মাঝপথে তাঁরা জানায়, বিষয়টি রেল পুলিশের। তাঁরা ফিরে আসে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই দুই মেয়ে নিয়ে বোন আত্মহত্যা করল। জানি না অভিযুক্তদের কে ধরবে।”
মৃতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, রতুয়ার ঝগড়াপাথার গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি অরবিন্দ মণ্ডলের সঙ্গে ৮ বছর আগে বিয়ে হয় ইটাহার ঠিলবিলের অপর্ণার। ৫ বছর আগে প্রথম কন্যা সন্তান ও আড়াই মাস আগে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান হয় ওই দম্পতির। বছর দুই আগে থেকে অপর্ণাদেবীর উপর নির্য়াতন শুরু হয় বলে অভিযোগ। নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে মৃতার স্বামী বলেন, “অর্পণা কেন এ কাজ করল তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। শনিবার সকালে আমাকে খেতে দেয়। তার পর কাজে বেরিয়ে ঘটনার কথা শুনতে পাই। গ্রামের লোকেরা বারণ করায় শেষ দেখা দেখতে যেতে পারিনি।” |