বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে শিলিগুড়ি শহরের বাঘাযতীন পার্কের সংস্কারের কাজ পুরোদমে শুরু করে দিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। রবিবার দুপুরে কাজের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এ দিন অনুষ্ঠানের পর বাসিন্দাদের কয়েক জন বাঘাযতীন পার্ককে একটি আধুনিক মাঠ হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি মাঠে মাইকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, দিনভর মানুষের অবাধ ঘোরা বন্ধ করার আবেদন করেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। যদিও মাঠ সংস্কারের কাজ দিন সাতেক আগে শুরু হয়ে গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এ দিন বলেন, “বাঘাযতীন পার্ক একটি প্রাচীন মাঠ। একে ঘিরে আগেই নানা পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল, বামেরা তো বটেই বর্তমান পুরবোর্ডও উদ্যোগ নেয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এ বার নতুন করে কাজ করার পর সমস্ত বিষয়গুলি দেখা হবে।” অনুষ্ঠানে কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পাশাপাশি বামেদেরও কড়া সমালোচনা করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমরা ভোটের রাজনীতি করি না। আগামী কিছুদিনের মধ্যে লোকসভা এবং পুরসভা নির্বাচন হবে ঠিকই। তবে সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা একের পর এক কাজ করে চলেছি।” |
মন্ত্রী বলেন, “পুরসভাকে ভবন নির্মাণের জন্য দুই কোটি দেওয়া হয়। এক বছরেও সে কাজ হয়নি। আসলে পুরসভা এখন কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই উন্নয়নের কাজ কিছু হচ্ছে না। রাস্তা, মাঠ সংস্কার, সেতু-সহ একাধিক কাজ তাই আমাদেরই করতে হচ্ছে।” তিনি জানান, এর আগে বামেরা শহরে অপরিকল্পিত ভাবে উড়ালপুলসহ নানা কাজ করেছে। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রকৃত ব্যবহার হচ্ছে না। এর জন্য আমাদের কাউন্সিলরেরা পুরসভার সরব হচ্ছেন। কাজের কাজ হচ্ছে না।
এ দিনের অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। বাঘাযতীন পার্কটি পুরসভার অধীনে। নতুন কাজের জন্য ‘এনওসি’ পুরসভার থেকে নেওয়া হলেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরসভার কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেছেন, “পুরোটাই সৌজন্যবোধের অভাব। আসলে মন্ত্রী এখন লোকসভা, পুরসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। সরকারি মঞ্চ থেকে তাই রাজনীতি করা হচ্ছে। পুরসভা সীমিত ক্ষমতা থেকে যা করার করে যাচ্ছে।”
একই ভাবে মন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হয়েছে বামেরাও। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “এতটা অপরিকল্পিত শহরকে কী ভাবে সাজানো যায়, সেই কাজই আমরা করেছি। ২৫ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা, জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা আমাদের সময়েই হয়েছে। আসলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সস্তার রাজনীতি করেছেন। কেবলমাত্র নিজেদের নামের ফলক আর বোর্ড লাগিয়ে আমাদের সময় রেখে যাওয়া নানা খাতের টাকার অপব্যহার করছেন তিনি।”
অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বক্তব্য, “পুরসভার কমিশনার অনুষ্ঠানে ছিলেন। কাজেই পুরসভাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক হয়। আসলে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে রাজ্যের মানুষ ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তাই ওদের কথার উত্তর দেব না।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকায় বাঘাযতীন পার্কের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে গোটা মাঠটিকে প্রায় ৯ ফুট গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া ছাড়া বাইরে জর্গাস ট্র্যাক, গ্রিন টয়লেট করা হবে। পরের পর্যায়ে মাঠে নতুন ঘাস, সুদৃশ্য আলো, রবীন্দ্র মঞ্চের সংস্কার করার মতো কাজ হবে। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরলেও কোনও বড় সভা বা অনুষ্ঠানে জন্য ৫টি গেটও থাকবে। সকাল এবং সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা করে মাঠটি খোলা থাকবে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাঠে নেশার আসর বসে, নানা আপত্তিকর কাজকর্ম হয়। মাঠের যে কোনও এলাকাকে শৌচালয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। |