উচ্চফলনশীল সব্জি উৎপাদনে সাফল্য মিলেছে উত্তরবঙ্গে। লঙ্কা, উচ্ছে, আলু, টম্যাটো, লাউ, কুমড়ো, ক্যাপসিকামের মতো সবজি ভিন্ রাজ্যে সরবারহের কথা অজানা নয়। এ বার উন্নত মানের শস্য বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি দফতর। ধান, ভুট্টা, সরষে, পাট বীজ উৎপাদনে সফলতা মিলেছে বলে দফতরের দাবি। উত্তরবঙ্গের চাহিদা মিটিয়ে ভিন রাজ্যে বীজ সরবরাহের জন্য গ্রামের কৃষকদের সমিতি তৈরি করে সেখানে ‘সিড ভিলেজ’ বা বীজ গ্রাম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
কৃষি দফতরের উত্তরবঙ্গের সহ অধিকর্তা অমিয় দেবনাথ বলেন, “ভিন্ রাজ্যের বীজের উপরে উত্তরবঙ্গের চাষিদের নির্ভর করতে হয়। ওই ছবি বদলে দিতে বীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়ে ওঠার কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য কৃষি দফতর থেকে চাষিদের গুণগত মান বজায় রাখার এবং প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যে ভিন্ রাজ্যে বীজ পাঠাতে পারব।” দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন শুধুমাত্র সরকারি কৃষি খামারগুলিকে বীজ উৎপাদনের জন্য বেছে নেওয়া হত। গত দু’বছর থেকে চাষিদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করছে। ফসল উৎপাদনের মতো বীজ উৎপাদনও যে লাভজনক সেই কথা বোঝানো হচ্ছে কৃষকদের। ধারাবাহিক কর্মশালার ফলে চাষিদের মনোভাব পাল্টাতে শুরু করেছে বলে কৃষি কর্তাদের দাবি। জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার প্রায় সাতশো বিঘা জমি শস্য বীজ উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মূলত অনুর্বর জমিকে ওই কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও জঙ্গল লাগোয়া সেই সব জমি বেছে নেওয়া হয়, যেখানে হাতির তাণ্ডবের জন্য চাষি ফসল ঘরে তুলতে পারে না। সেখানে অনায়াসে বীজের চাষ হতে পারে বলে দফতরের ধারণা।
কৃষি দফতরের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক দফতর সূত্রে জানা যায়, কোচবিহারের শীতলখুচির সোনারচালন গ্রাম তৈল বীজ উৎপাদনে সফল। কুমারগ্রামের বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল সংলগ্ন উত্তর নারারথলি ও চ্যাংমারি গ্রামে ১৫টি জনজাতি পরিবার প্রায় চার হেক্টর জমিতে শস্য বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি এলাকায় ভুট্টা বীজ উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তুফানগঞ্জের একটি সংস্থার মাধ্যমে এ বার প্রথম পরীক্ষামূলক পাট বীজের উৎপাদনে সফলতা মিলেছে। সাফল্য পেয়ে পাট বীজ উৎপাদনের এলাকা বাড়িয়ে দুশো বিঘা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সহ কৃষি অধিকর্তা বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা হয়েছে। পরে উত্তরবঙ্গ থেকে বাইরের রাজ্যে পাট বীজ সরবরাহ করা হবে। ওই কারণে বীজ গ্রাম গড়ে তোলার কাজ শুরু করা হয়েছে।” ময়নাগুড়ির পদমতি গ্রামের কৃষকদের সমিতিকে সিড প্রসেসিং মেশিন এবং আর্দ্রতা পরিমাপকর যন্ত্র দেয় কৃষি দফতর। |